নিরাপত্তায় নোডাল অফিসারের ভাবনা
সন্ত্রাস বাড়বে ভোটের আগে, আশঙ্কা কেন্দ্রের
ত্তীসগঢ়ে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে আজ পশ্চিমবঙ্গ-সহ সমস্ত মাওবাদী অধ্যুষিত রাজ্যে সতর্কবার্তা পাঠাল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। মন্ত্রকের নকশাল দমন বিভাগের যুগ্ম-সচিব এম এ গণপতি রাজ্যগুলির মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি-দের জানিয়েছেন, ছত্তীসগঢ়ের ঘটনাকে মাওবাদী অধ্যুষিত রাজ্যগুলিতে আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষিতে দেখতে হবে। কারণ নির্বাচনের জন্য ওই সব রাজ্যে মূল স্রোতের রাজনৈতিক কার্যকলাপ বাড়বে। এবং সেখানে নেতাদের উপরে হামলার সম্ভাবনাও বাড়বে। এ সব কথা মাথায় রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও বাড়াতে বলেছে কেন্দ্র। এ জন্য প্রয়োজনে রাজ্য পুলিশে একজন ‘নোডাল অফিসার’ রাখার কথাও বলা হয়েছে। এই ‘নোডাল অফিসার’ই রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে তাদের কর্মসূচির বিষয়ে যোগাযোগ রাখবেন।
কেন্দ্রের বক্তব্য, ছত্তীসগঢ়ে অনেক দিন পরে শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের উপরে হামলা চালিয়েছে মাওবাদীরা। এ থেকে স্পষ্ট মাওবাদীরা কৌশল বদলে সরাসরি নেতাদের খুন করতে চাইছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মতে, নিজেদের অস্তিত্ব প্রমাণ করতেই রাজনৈতিক নেতাদের বেছে নিচ্ছে মাওবাদীরা। কারণ নেতা খুন হলেই জাতীয় সংবাদমাধ্যমে বেশি হইচই হয়। সাম্প্রতিক কালে মাওবাদী সংগঠনের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয় নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে মারা গিয়েছেন অথবা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন। অনেক এলাকা মাওবাদীদের হাতছাড়াও হয়েছে। এই অবস্থায় মরিয়া হয়ে নেতা খুনের রাস্তা বেছে নিয়ে ক্যাডারদের মনোবলও বাড়াতে চাইছে তারা। একই সঙ্গে তারা যে সশস্ত্র লড়াইয়ের পথ থেকে সরে আসেনি, সে বার্তাও দিতে চাইছে তারা।
এই পরিস্থিতিতে কোনও রাজ্যেই যাতে স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মসূচি বাধাপ্রাপ্ত না হয়, সে দিকে নজর দিতে বলেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। আগামী নভেম্বরে যে পাঁচটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ছত্তীসগঢ় ও মধ্যপ্রদেশ। ছত্তীসগঢ়ের মতো বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে না হলেও মধ্যপ্রদেশের কিছু অংশে মাওবাদীদের প্রভাব রয়েছে। ঝাড়খণ্ডেও এ বছরই বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। কিন্তু ওই সব রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের ঢের আগে, জুলাই মাসেই পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলমহলে রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের উপরে মাওবাদীরা প্রাণঘাতী হামলা চালানোর ছক কষছে।
গোয়েন্দাদের পাঠানো এই সব তথ্যের উপরে ভিত্তি করে কেন্দ্র চায়, নির্বাচনের আগে সব রাজনৈতিক দল যাতে স্বাভাবিক ভাবে নিজেদের কর্মসূচি চালিয়ে যেতে পারে, সে দিকে নজর দেওয়া হোক। রাজ্যগুলিকে পাঠানো সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, “মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায় যত বেশি সম্ভব রাজনৈতিক কর্মসূচির জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করাটাই আমাদের লক্ষ্য।” এই রাজ্যগুলি ছাড়াও অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা এবং উত্তরপ্রদেশ সরকারকেও সতর্ক করেছে কেন্দ্র। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা জানিয়েছেন, প্রতি বছরই বর্ষার আগে ও শীতে হিংসা বাড়ানোর অভিযান চালায় মাওবাদীরা। এই অভিযান “ট্যাকটিক্যাল কাউন্টার অফেন্সিভ ক্যাম্পেন” (টিসিওসি) বলে পরিচিত।
এ বার বর্ষার আগে টিসিওসি ১৫ এপ্রিল থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত চালানো হবে বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। অর্থাৎ, টিসিওসি এখনও চালু রয়েছে। আজ রাজ্যগুলিকে পাঠানো সতর্কবার্তায় এই বিষয়টির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
ছত্তীসগঢ়ে কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতাদের উপর হামলার ঘটনায় দেখা গিয়েছে, নন্দকুমার পটেল, মহেন্দ্র কর্মা, বিদ্যাচরণ শুক্লদের গতিবিধির বিষয়ে রাজ্য পুলিশের শীর্ষ অফিসারদের কাছে কোনও খবরই ছিল না। তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টি স্থানীয় থানা স্তর থেকে দেখা হত। অন্যান্য রাজ্যে যাতে এই ধরনের গাফিলতি না হয়, সে জন্য কেন্দ্রের পরামর্শ, রাজ্য পুলিশের সদর দফতরে একজন করে ‘নোডাল অফিসার’ নিয়োগ করা হোক। বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত এই অফিসারই রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে তাদের কর্মসূচির বিষয়ে যোগাযোগ রাখবেন। কোথায় সভা করা উচিত, কোন সময়ের মধ্যে সভার কাজ শেষ করা উচিত, কোন রাস্তা দিয়ে কনভয় যাবে, সে বিষয়ে তিনি রাজনৈতিক দলগুলিকে পরামর্শ দেবেন। তিনিই জেলার পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় বজায় রাখবেন। ফলে গোটা বিষয়টির উপর ঠিক ভাবে নজরদারি রাখা যাবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি সূত্রের বক্তব্য, “পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মতো বেশ কয়েক জনের উপরে আক্রমণের সম্ভাবনা বেশি। তাঁদের জন্যও বাড়তি নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করবেন ওই অফিসার।” স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশ, এই ধরনের ব্যক্তিদের জনসভায় জেলার পুলিশ সুপারকে নিরাপত্তার বন্দোবস্ত সংক্রান্ত সমস্ত বিষয়ে লিখিত নির্দেশ জারি করতে হবে। জনসভার আগে নিরাপত্তা ব্যবস্থার খুঁটিনাটি দিকগুলি খতিয়ে দেখতে মহড়া দিতে হবে। যদি একাধিক জেলার উপর দিয়ে প্রচারের মিছিল বা শোভাযাত্রা যায়, তা হলে ডিআইজি বা আইজিদের এই দায়িত্ব নিতে হবে।
কেন্দ্রের নকশাল দমন বিভাগের কর্তাদের বক্তব্য, মাওবাদীরা বরাবরই মূলস্রোতের রাজনৈতিক দলগুলির স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে।
পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলমহল হোক বা ছত্তীসগঢ়ের দন্তেওয়াড়া, সর্বত্রই রাজনৈতিক নেতাদের খুন করে, সব স্তরের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরির চেষ্টা করেছে মাওবাদীরা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.