|
|
|
|
সুকমার হামলা নিয়ে অস্ত্র শানাচ্ছে কংগ্রেস |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
শোকের আবহ রয়েছে বলে এখনও সুর চড়াচ্ছেন না কেউই। কিন্তু, ছত্তীসগঢ়ে কংগ্রেস নেতাদের উপরে হামলার ঘটনা নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য তথা কংগ্রেস বা বিজেপির সংঘাতের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়ে গেল। অস্ত্রে শান দিতে শুরু করেছে দু’পক্ষই।
সুকমায় হামলার পরেই পরিবর্তন যাত্রায় ঢিলেঢালা নিরাপত্তা নিয়ে সরব হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্তরের কংগ্রেস নেতারা। কাল রায়পুরে এক বৈঠকে রাজ্যপাল শেখর দত্ত ও মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহের সামনেই ক্ষোভ উগরে দেন সনিয়া ও রাহুল। রাহুল সুর চড়িয়ে জানতে চান, কেন পরিবর্তন যাত্রায় উপযুক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়নি। সনিয়া তাঁর সঙ্গে যোগ দেন। প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও। রমনের দাবি, কংগ্রেসের যাত্রায় উপযুক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থাই করা হয়েছিল। সেই বক্তব্য উড়িয়ে দিয়ে সনিয়া বলেন, “কংগ্রেসের রাজ্য নেতারা আমার কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন, পরিবর্তন যাত্রার জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেনি রাজ্য সরকার ।”
কেন্দ্রীয় সরকারের এক শীর্ষ কর্তার দাবি, ঘটনার ১৫ দিন আগেই রাজ্য সরকারকে সতর্ক করা হয়েছিল, মাওবাদীরা এই ধরনের হামলা চালাতে পারে। রমন সরকার ব্যবস্থা নেয়নি। অথচ ১৮ মে যখন নরেন্দ্র মোদী ছত্তীসগঢ়ে সভা করেন, তখন নিরাপত্তার আয়োজনে কোনও খামতি রাখেনি রাজ্য। রমনের বিকাশ যাত্রা-তেও ছিল আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা। |
|
ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদী হামলার প্রতিবাদ। সোমবার রায়পুরে। |
ছত্তীসগঢ়ের বিধানসভা ভোটের আগে যে সুকমার ঘটনা নিয়ে কংগ্রেস সহানুভূতির হাওয়া তোলার চেষ্টা চালাবে, তা স্পষ্ট। আজ সর্বভারতীয় কংগ্রেসের সদর দফতরে শোকসভার আয়োজন করা হয়। গত ১০ বছরে এই প্রথম এখানে এই ধরনের সভা করা হল। হাজির ছিলেন দলের প্রায় সব শীর্ষ নেতাই।
এ দিনই সুকমার ঘটনার তদন্তভার হাতে নিয়েছে জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)। এই প্রথম কোনও মাওবাদী হামলার ঘটনার ভার পেল তারা। এনআইএ-র একটি দল ইতিমধ্যে ছত্তীসগঢ়ে পৌঁছেও গিয়েছে। কংগ্রেসের আশা, এনআইএ তদন্তে নিরাপত্তার ত্রুটির কথা উঠে আসবে। সেটাও হবে তাদের হাতিয়ার।
পুরো বিষয়টিতে বড় ষড়যন্ত্রের গন্ধও পাচ্ছেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। রমন সিংহের সঙ্গে মাওবাদীদের যোগ নিয়ে অনেক দিন ধরেই সরব দিগ্বিজয় সিংহের মতো নেতারা। মাওবাদী হামলায় ছত্তীসগঢ়ে সালওয়া জুড়ুমের প্রতিষ্ঠাতা মহেন্দ্র কর্মা-সহ, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নন্দকুমার পটেল-সহ ২৪ জন কংগ্রেসির মৃত্যু হয়েছে। কর্মা মাওবাদীদের খতম তালিকায় ছিলেন। কিন্তু নন্দকুমার ছিলেন আদিবাসীদের আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিশীল। সম্প্রতি এড়াসমেটায় আধাসেনার হাতে আট জন গ্রামবাসী নিহত হওয়ায় প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি। সেই নন্দকুমার ও তাঁর ছেলে খুন হওয়ায় বিস্মিত কংগ্রেস নেতারা। এই ঘটনার পরে রাজ্যে অজিত জোগী ছাড়া দলে আর কোনও শীর্ষ নেতা থাকলেন না। কৌশলে দলকে রাজ্যে খোঁড়া করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে বলে মনে করছেন অনেক কংগ্রেস নেতা।
রাজ্য উপযুক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিল বলে দাবি করলেও চাপের মুখে ঘটনার সময়ে নিরাপত্তার ত্রুটির কথা আজ মানতে বাধ্য হয়েছেন রমন। দ্রুত মহেন্দ্র ও নন্দকুমারের পরিবারের জন্য কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক ভাবে কংগ্রেসকে জবাব দিতেও উদ্যোগী হয়েছে বিজেপি। দলের এক শীর্ষ নেতা আজ দাবি করেন, রাজ্য সরকারের হাতে থাকা নথি থেকেই প্রমাণ হবে, কংগ্রেস নেতারা কী ভাবে পুলিশের নির্দেশ উপেক্ষা করে মাওবাদী এলাকায় গিয়েছিলেন। |
|
ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদী হামলার প্রতিবাদ। সোমবার মুম্বইয়ে। |
সে দিন কেন কংগ্রেস নেতারা নির্ধারিত পথ ছেড়ে অন্য পথ ধরলেন তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। রমন নিজেও বলেছেন, “কংগ্রেসের নেতারা ওই এলাকা সম্পর্কে অবহিত। যে রাস্তায় তাঁরা গিয়েছিলেন, সেখানে মাওবাদীদের যথেষ্ট গতিবিধি রয়েছে। একসঙ্গে অনেক নেতা একই কনভয়ে থাকায় তাঁরা সহজ নিশানা হয়ে যান।” ঢিলেঢালা নিরাপত্তার অভিযোগ উড়িয়ে রাজ্যপাল শেখর দত্ত ও কেন্দ্রকে চিঠিও দিয়েছেন রমন।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দের অনুপস্থিতিকে নিয়েও আক্রমণ শানাতে চাইছে বিজেপি। এখন আমেরিকায় রয়েছেন শিন্দে। সুকমায় হামলার পরেও দেশে ফেরেননি তিনি। ছুটিতে সিআরপিএফের প্রধানও। খোদ সনিয়ার বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে বিজেপি-র। তাদের বক্তব্য, পি চিদম্বরম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময়ে রমনের সঙ্গে তাঁর ভাল সমন্বয় ছিল। কিন্তু পরে সমাজকর্মীদের কথায় মনমোহন সরকারকে সুর নরম করার নির্দেশ দেন সনিয়াই। এ কথা দিল্লিতে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংক্রান্ত বৈঠকেও বলবেন বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীরা।
মাওবাদীদের কাজে লাগিয়ে কংগ্রেস নেতৃত্বকে খতম করার তত্ত্বেরও জবাব দিতে চায় বিজেপি। তাদের বক্তব্য, সুকমার ঘটনায় বিজেপি-র কোনও রাজনৈতিক লাভ হয়নি। উল্টে দেশ জোড়া ‘জেল ভরো’ কর্মসূচি বন্ধ রাখতে হয়েছে। বরং ঘটনার পিছনে কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখবে রাজ্য। আগামিকাল রাজনাথ সিংহ, অরুণ জেটলি-সহ বিজেপির একাধিক শীর্ষ নেতা ছত্তীসগঢ় যাবেন।
|
ছবি: এএফপি |
|
|
|
|
|