ছোট থেকেই পড়া বুঝতে, শিখতে অন্যদের থেকে বেশি সময় লাগত তাঁর। স্কুলের পরীক্ষায় কখনওই গোটা প্রশ্নপত্র লিখে শেষ করতে পারতেন না। পরীক্ষা দেওয়ার জন্য তাই বোর্ড তাঁকে প্রত্যেক পত্রে অতিরিক্ত এক ঘণ্টা সময় দেয়। সেই সুযোগটাই যথাসম্ভব কাজে লাগান শ্রেয় কেজরিওয়াল। ভারতীয় বিদ্যাভবনের ছাত্র শ্রেয় এ বছর সিবিএসই দ্বাদশে ১ নম্বরের জন্য ৬০ শতাংশ নম্বর পাননি। পেয়েছেন ৫৯.৮%। কিন্তু তাতেই খুশি শ্রেয়র শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
ডাক্তারি পরিভাষায় শ্রেয় অ্যাসপারগার্স সিনড্রোমে আক্রান্ত। চলতি কথায় ‘স্লো লার্নার’। তাঁর স্কুলের অধ্যক্ষা অনিন্দিতা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ছোট থেকেই এই স্কুলে পড়েছে। পরীক্ষায় ৪০-৫০ নম্বরের বেশি উত্তরই করতে পারত না। ওর জন্য বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বোর্ডও ওকে পরীক্ষায় এক ঘণ্টা অতিরিক্ত সময় দিয়েছিল। মনের জোরে শ্রেয় যে প্রায় ৬০ শতাংশ নম্বর পেয়েছে, এতে আমরা খুশি।” |
|
|
|
|
মেহেক চক্রবর্তী |
ঋষভ বয়েদ |
শ্রেয় কেজরিওয়াল |
শ্রেয়া ভদ্র |
|
সিবিএসই দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে সোমবার। এই পরীক্ষায় দুস্তর বাধা টপকে ভাল ফল করেছেন যাঁরা, শ্রেয় তাঁদেরই একজন। শ্রেয়র মতোই আর এক পরীক্ষার্থী ঋষভ বয়েদ। বিড়লা হাই স্কুল ফর বয়েজ থেকে ৯০.৬ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করেছেন বাণিজ্যের ছাত্র ঋষভ। জানালেন, তাঁর রক্তের শ্বেতকণিকা কাজ করে না। এর জন্য শরীরে প্রতিরোধ শক্তি কম থাকায় যে কোনও অসুখই তাঁকে সহজে আক্রমণ করে। বছরে কয়েক বার শিরায় ওষুধ নিতে হয়। টানা ৪০ দিন চলে সেই চিকিৎসা। ঋষভের কথায়, “আমার চিকিৎসার ধরন অনেকটা কেমোথেরাপির মতো। ওষুধটা নেওয়ার পরে কিছু দিন মাথা ঘোরে, বমি পায়, হ্যালুসিনেশন হয়। পরীক্ষার আগেও ওষুধ নেওয়ার কথা ছিল। এর জন্য আর নিইনি।”
সিবিএসই-র দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার আর এক কৃতী এপিজে স্কুলের শ্রেয়া ভদ্র। ‘গিলবার্ট সিনড্রোম’ নামে দীর্ঘমেয়াদি এক অসুখে ভোগার ফলে শ্রেয়ার শরীরে বিলিরুবিন বেশিই থাকে সব সময়ে। সারা বছরই তিনি দুর্বল থাকেন। ফলে প্রায়ই স্কুলে অনুপস্থিত থাকতেন বাণিজ্য শাখার ওই ছাত্রী। কিন্তু প্রতিবন্ধকতা জয় করে বোর্ডের পরীক্ষায় ৮৬.৮ শতাংশ নম্বর পেলেন তিনি। ইচ্ছে বেঙ্গালুরুতে বিবিএম বা অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করার। সেই ইচ্ছে পূরণের জন্য তাঁকে বাবা-মা’র থেকে দূরে একা থাকতে হবে। অসুস্থতা বাড়লে হতে পারে বিপদও। তবু স্বপ্ন পূরণের জন্য ঝুঁকি নিতে তৈরি তিনি।
সিবিএসই-র দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ১ মার্চ। তার আগের দিন বাবাকে হারিয়েছিলেন এপিজে স্কুলের কলা বিভাগের ছাত্রী মেহেক চক্রবর্তী। কিন্তু সেই শোক দমাতে পারেনি তাঁকে। ৮৯.৩ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন তিনি। সাহিত্য পড়তে ভালবাসেন মেহেক। এ বার তাই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি অনার্স পড়তে চান তিনি। |