অন্যান্য বোর্ডের সঙ্গে টক্করের প্রশ্ন ওঠে না। তবে নিজের ৩৬ বছরের লড়াইয়ে একটা রেকর্ড গড়ে ফেলেছে এ বারের মাধ্যমিক। রেকর্ডটা পাশের হারে। ১৯৭৮ থেকে এ-পর্যন্ত যত মাধ্যমিক পরীক্ষা হয়েছে, তার তথ্য বলছে, এ বারেই পাশের হার সর্বোচ্চ ৮১.৮১% শতাংশ। গত বছরের থেকে ০.৭৫ শতাংশ বেশি। সোমবার এই পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে।
ফল প্রকাশ করে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রশাসক কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “মাধ্যমিকের পরম্পরায় এ বারের পাশের হার অনেকটাই বেশি।” যদিও দিল্লি বোর্ডের পরীক্ষাগুলিতে পাশের হার এর থেকে আরও অনেক বেশি হয়। এ বছরই আইসিএসই-তে পাশ করেছে ৯৮.২০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী। কিন্তু অন্যান্য বোর্ডের পরীক্ষার সঙ্গে মাধ্যমিকের সাফল্যের তুলনা করতে রাজি নন প্রশাসক। তাঁর কথায়, “অন্যান্য বোর্ডের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তো মাধ্যমিকের ফল নির্ধারিত হবে না। পরীক্ষার্থীরা যেমন পরীক্ষা দিয়েছে, তেমন নম্বরই পেয়েছে।” শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও ফলাফলে সন্তুষ্ট। তাঁর কথায়, “ফল যথেষ্ট সন্তোষজনক ও আশাব্যঞ্জক।” সব সফল পরীক্ষার্থীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে বলেছেন, “যারা এ বার কৃতকার্য হতে পারেনি, আগামী বারের জন্য তাদেরও আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে রাখছি।” এ বছর মাধ্যমিকে বসেছিল ১০ লক্ষ ২৭ হাজার ৯৩৮ জন ছাত্রছাত্রী। তাদের মধ্যে ছাত্রীই বেশি, পাঁচ লক্ষ ৩৯ হাজার ২৯০। যদিও পাশের হারে আগের বছরগুলির মতোই ছাত্রীদের পিছনে ফেলে দিয়েছে ছাত্রেরা। এ বছরের পরীক্ষায় ৮৬.৩৩ শতাংশ ছাত্র এবং ৭৭.৫৬ শতাংশ ছাত্রী পাশ করেছে। কল্যাণময়বাবু অবশ্য মনে করেন, ছাত্রীদের ফলও যথেষ্ট ভাল হয়েছে। তাঁর কথায়, “ছাত্রীদের পাশের হার গত বারের থেকে প্রায় এক শতাংশ বেড়েছে। সেটা কম নয়। মনে হয়, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ফলের নিরিখে ছাত্রদের পিছনে ফেলে এগিয়ে যাবে ছাত্রীরা।”
পাশের হারে কিছুটা পিছিয়ে পড়লেও মেধা-তালিকায় ভালই জায়গা করে নিয়েছে ছাত্রীরা। গত বছর থেকে মেধা-তালিকা ফিরে এসেছে মাধ্যমিকে। এ বার প্রকাশিত হয়েছে প্রথম আটে থাকা ২৪ জন পরীক্ষার্থীর নাম। সেই তালিকা অনুযায়ী এ বার মাধ্যমিকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে এক ছাত্রী। ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম স্থানে রয়েছে আরও কয়েক জন ছাত্রীর নাম। তবে মেধা-তালিকায় ঠাঁই হয়নি কলকাতার। প্রশাসক জানিয়েছেন, এই বিষয়ে তো বটেই, সামগ্রিক ভাবে পঠনপাঠনের মানের উন্নয়ন নিয়ে বিভিন্ন স্কুলের প্রধানদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন তিনি।
মেধা-তালিকায় ঠাঁই না-হলেও পাশের হারে অন্যান্য জেলার থেকে অনেকটাই এগিয়ে কলকাতা। মহানগরীতে এ বার ৮৬.৮৪ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাশ করেছে। তবে পাশের হারে একেবারে উপরে পূর্ব মেদিনীপুর (৯২.৯০%), তার পরে দক্ষিণ ২৪ পরগনা (৮৬.৯৩%)। কলকাতা আছে তৃতীয় স্থানে। তার পরে রয়েছে হাওড়া (৮৫.৬০%), উত্তর ২৪ পরগনা (৮৫.৪৩%), হুগলি (৮৪.৪৯%), পশ্চিম মেদিনীপুর (৮৩.৩৪%), নদিয়া (৮০.৮১%) ইত্যাদি। জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ-সহ উত্তরবঙ্গের অনেক জেলায় পাশের হার বেড়েছে। আবার দার্জিলিং, উত্তর দিনাজপুর, বীরভূম ইত্যাদি জেলায় তা কমেছে। পর্ষদ অবশ্য পাশের হার কমার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। প্রশাসকের কথায়, “পাশের হার বেশির ভাগ জেলাতেই বেড়েছে। কোথাও সামান্য কমে থাকতে পারে। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে পাশের হার যা বেড়েছে, সেটা কম কিছু নয়।”
এ বছর শারীরিক প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের ৯০.০৩ শতাংশ এবং সংশোধনাগার থেকে পরীক্ষায় বসা ৯৮.০৯ শতাংশ পরীক্ষার্থী মাধ্যমিক পাশ করেছেন। সফল সব পরীক্ষার্থীর মার্কশিট ও শংসাপত্র এ দিনই বিতরণ করা হয়েছে বলে পর্ষদের দাবি। |