মেধা-তালিকায় নেই শহর,
চিন্তা শিক্ষা মহলে

মাধ্যমিক পরীক্ষার মেধা-তালিকায় ঠাঁই হল না শহরের একটি স্কুলেরও। তা হলে কি শহরের স্কুলে পঠনপাঠনের মান পড়ে যাচ্ছে? নাকি দিল্লি বোর্ডের রমরমায় মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা? সোমবার মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে উঠে গেল এই প্রশ্ন।
পর্ষদ এ দিন প্রথম থেকে অষ্টম স্থান পর্যন্ত পরীক্ষার্থীদের মেধা-তালিকা প্রকাশ করেছে। গত বছরের মতো এ বারও জেলার জয়জয়কার। জেলার শহরগুলির তুলনায় সুযোগ-সুবিধা, পরিষেবার দিক থেকে অনেক এগিয়ে থাকলেও মহানগরের একটিও নাম তালিকায় না থাকায় শিক্ষাজগতের অনেকেই বিস্মিত।
বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে জানান পর্ষদের প্রশাসক কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “কলকাতার ছেলেমেয়েদের হয়তো আর একটু মনোযোগী হতে হবে। তবে এ বার মেধা-তালিকায় স্থান হয়নি বলে কখনওই হবে না, তা তো নয়। সামগ্রিক ভাবে পঠনপাঠনের মান বাড়াতে হবে। এ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে কথা বলা হবে।”
কলকাতা থেকে প্রথম হয়েছেন নব নালন্দা স্কুলের ঐন্দ্রিলা ভট্টাচার্য। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৬৭১। ওই স্কুল থেকে এ বছর মাধ্যমিক দিয়েছেন ৩৭৪ জন। প্রধান শিক্ষক অরিজিৎ মিত্রের কথায়, “পর্ষদের তরফে আমাদের জানানো হয়েছে, প্রথম আটে না থাকলেও ঐন্দ্রিলা দশম স্থান অধিকার করেছে। দু-এক নম্বরের জন্য কে এগিয়ে গেল বা পিছিয়ে পড়ল, তা দিয়ে পঠনপাঠনের মান বিচার করা যায় না।” নব নালন্দা তবুও মানরক্ষা করেছে। কিন্তু মেধা-তালিকায় অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে সাউথ পয়েন্ট, পাঠভবনের মতো স্কুলও। সাউথ পয়েন্ট থেকে এ বার ৮২১ জন মাধ্যমিক দিয়েছে, সর্বোচ্চ নম্বর ৬৬২। পাঠভবনে ১৭৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর ৬৫২।
কলকাতার সরকারি স্কুলগুলির ফলও তথৈবচ। হিন্দু স্কুলের দীপ্র দত্তশর্মা ৬৬৭ পেয়ে কলকাতায় সরকারি স্কুলের পড়ুয়াদের মধ্যে প্রথম। কিন্তু শীর্ষতালিকায় স্থান হয়নি তার। একই ভাবে হেয়ার, বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাইস্কুল, বেথুন ইত্যাদি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও এই দৌড়ে বেশ খানিকটা পিছিয়ে।
অভিজ্ঞরা বলছেন
নব নালন্দার প্রধান শিক্ষকের মতোই বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রূপক হোমরায় দু-এক নম্বরের ফারাককে বড় করে দেখতে নারাজ। এর মাধ্যমে কোনও বিভাজন করারও পক্ষপাতী নন তিনি। রূপকবাবুর কথায়, “মেধা-তালিকায় কলকাতার বাসিন্দাদেরই থাকতে হবে, তার কী মানে? আর মাথায় রাখতে হবে, যে ৯০ পাচ্ছে এবং যে ৯৫ পাচ্ছে, তাদের মধ্যে কোনও মেধাগত পার্থক্য নেই।”
কিন্তু অভিজ্ঞ শিক্ষকদের অনেকেই মেধাতালিকা থেকে কলকাতার ছিটকে পড়ার জন্য বেশ কয়েকটি কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। যাদবপুর বিদ্যাপীঠের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাজেন্দ্রনাথ মণ্ডল কলকাতার নোট-কেন্দ্রিক পড়াশোনাকে এ জন্য দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, “শহরের অধিকাংশ পড়ুয়া মুখের সামনে গুছিয়ে দিলে তবেই পড়ে। আর গ্রামের ভাল ছাত্রছাত্রীরা খুঁটিয়ে বই পড়ে, নিজে থেকে ভাবার চেষ্টা করে। কলকাতার ফলে তারই প্রভাব পড়েছে বলে মনে হয়।”
হিন্দু স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক শ্যামনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় আবার মনে করেন, জেলার তুলনায় কলকাতায় বিনোদনের জায়গা অনেক বেশি। ছেলেমেয়েরা সেই দিকেই বেশি আকৃষ্ট হয়ে অনেক ক্ষেত্রে পঠনপাঠনে অমনোযোগী হয়ে পড়ছে। তাঁর কথায়, “বিনোদন যত বাড়ে, মনের অলসতাও তত বাড়বে। লক্ষ্যের চেয়ে উপলক্ষ বাড়ে। অনেক ক্ষেত্রে কলকাতার অভিভাবকদেরও বিনোদনে অতিরিক্ত আগ্রহের প্রভাব পড়ুয়ার উপরে পড়ে।”
পাঠভবনের প্রধান শিক্ষিকা দীপা সেনও এ ব্যাপারে শ্যামনারায়ণবাবুর সঙ্গে অনেকটা একমত। সেই সঙ্গে তিনি অন্য বোর্ডের স্কুলের প্রতি ছাত্রছাত্রী অভিভাবকদের আগ্রহকেও দায়ী করেছেন। দীপাদেবীর কথায়, “কলকাতার ভাল ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই আজকাল মধ্যশিক্ষা পর্ষদের স্কুলে ভর্তি না হয়ে সিবিএসই, আইসিএসই স্কুলে পড়াশোনা করে। এর প্রভাবও পড়ে থাকতে পারে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.