দালাল-রাজ রুখতে সোমবার সকালে পুরসভার গোটা সাতেক দফতরে চক্কর মারলেন পুর-কমিশনার খলিল আহমেদ। সন্ধ্যায় সিদ্ধান্ত নিলেন এ বার থেকে বার্থ ও ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়ার সময় বদল করা হবে। ওই বিভাগটি তিনতলা
থেকে একতলায় সরানোরও সিদ্ধান্ত নিচ্ছে পুর-প্রশাসন।
পুরসভায় দালাল-চক্রের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে দিন কয়েক আগেই পুর-কমিশনারকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ। পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের পাঠানো ওই নোটে উল্লেখ করা হয়, পুর-ভবনের একাধিক বিভাগ যে ভাবে দালাল চক্রে ছেয়ে গিয়েছে, তা চিন্তার ব্যাপার। ওই চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুর-কমিশনারের হস্তক্ষেপও দাবি করা হয়।
নোটে বলা হয়েছিল, স্বাস্থ্য দফতর ওই দালালদের কয়েক জনকে ধরলেও বাকিরা অন্য দফতরে গিয়ে দিব্যি কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ দিন বেলা ১১টা বাজতেই নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন পুর-কমিশনার খলিল আহমেদ। সঙ্গে ছিলেন দু’জন যুগ্ম কমিশনার, কন্ট্রোলার অফ মিউনিসিপ্যাল ফিন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস (সিএমএফএ), চিফ ম্যানেজার (রেভিনিউ), পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক-সহ ডজন খানেক অফিসার। এ দিকে, পুরসভার পদস্থ অফিসারেরা দফতরে ঘুরছেন খবর পেয়েই পালিয়ে যান দালালেরা। পুরসভার এক নিরাপত্তারক্ষী জানান, পুর-কমিশনার আসছে শুনেই জনাকয়েক লোক ছুটোছুটি শুরু করে দেন। যদিও দালালদের রুখতে লাইসেন্স, কর মূল্যায়ন, বিল্ডিং ও স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীদের সতর্ক করে দেন পুর-কমিশনার। এমনকী, দালাল চক্রের সঙ্গে কেউ যুক্ত থাকলে তাঁকেও যে ছাড়া হবে না, সে কথাও বুঝিয়ে দেন খলিল আহমেদ।
পুরসভায় আসা সাধারণ মানুষ পুর-কমিশনারের কাছে অভিযোগ করেন, বার্থ ও ডেথ সার্টিফিকেটের লাইনে দাঁড়াতে তাঁরা পুরসভায় পৌঁছে যান ভোর পাঁচটা-ছ’টার মধ্যে। এ দিকে দফতর খোলে বেলা ১১টার সময়ে। এতটা সময় লাইনে দাঁড়ানো সম্ভব না হলে অগত্যা দালালদের সাহায্য নিতে হয় অনেককেই। এই সমস্যা মেটাতে পরে পদস্থ অফিসারদের নিয়ে বৈঠক করেন পুর-কমিশনার। সিদ্ধান্ত হয়, এ বার সকাল ৯টা থেকে বিকেল তিনটে পর্যন্ত বার্থ ও ডেথ সার্টিফিকেট পাওয়া যাবে। শনিবার তা মিলবে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত।
এতে এক দিকে যেমন মানুষের সুবিধা হবে, তেমনই ওই সময়টায় ভিড় কম থাকার কারণে দালালদের চিহ্নিত করাও সহজ হবে।
মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ জানান, আগামী জুন মাস থেকে ওই নতুন সময় সারণি অনুযায়ী কাজ শুরু হবে। পুর সূত্রের খবর, এত দিন বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত ওই সার্টিফিকেট দেওয়া হত। অতীনবাবু জানান, সাধারণ মানুষের কথা ভেবেই ওই দফতরটি তিনতলা থেকে একতলায় নামিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
পুরসভার এক পদস্থ অফিসার বলেন, “দালালদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে এ বার থেকে মাঝে মাঝেই দফতরে ঘুরবেন পুর-কমিশনার ও যুগ্ম কমিশনারেরা। কোনও কর্মীর যোগসাজশ আছে কি না, তা-ও নজরে রাখা হবে।” |