এক্সপ্রেস, লোকাল আটকে পড়ায় দুর্ভোগ
ট্রেনে কাটা মহিলা, খণ্ডযুদ্ধে অবরুদ্ধ হাওড়া
রেললাইন পেরোতে গিয়ে টিকিয়াপাড়ায় ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেলেন এক মহিলা। সোমবার সন্ধ্যায় ওই ঘটনার পরে মৃতদেহ ঘিরে প্রথমে বিক্ষোভ দেখান কয়েকশো মানুষ। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই বিক্ষোভ থেকেই বেধে যায় ধুন্ধুমার কাণ্ড। বন্ধ হয়ে যায় হাওড়ায় আসা-যাওয়ার সব ট্রেন। কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে হাওড়া স্টেশন।
পূর্ব রেল সূত্রের খবর, সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ শেওড়াফুলি লোকাল হাওড়ায় আসছিল। হাওড়া স্টেশনে ঢোকার মুখে কাঠপুল সল্টগোলা কেবিনের সামনে সেই ট্রেনে কাটা পড়েন ওই মহিলা। বেশি রাত পর্যন্ত তাঁর পরিচয় জানা যায়নি। দুর্ঘটনার পরেই শুরু হয় বিক্ষোভ। রাতে সেই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে রেললাইনের লাগোয়া রাস্তাতেও। টিকিয়াপাড়ার কাঠপুলের কাছে ইস্ট-ওয়েস্ট বাইপাসে নেমে বাস ও গাড়ি ভাঙচুর শুরু করে উন্মত্ত জনতা। পুলিশ লাঠি চালায়। জনতার সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায় তাদের।
টিকিয়াপাড়ায় বিক্ষোভ। হাওড়া স্টেশনে দুর্ভোগ। —নিজস্ব চিত্র।
হাওড়া স্টেশনের কাছেই বিক্ষোভের জেরে স্টেশনের পুরনো ও নতুন কমপ্লেক্সে হাজার হাজার যাত্রীর ভিড় জমে যায়। ট্রেন চলাচল কখন শুরু হবে, তা জানতে যাত্রীরা ছোটাছুটি করতে থাকেন। হাওড়ায় ঢুকতে না-পেরে বহু ট্রেন বিভিন্ন স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকেন ওই সব ট্রেনের যাত্রীরা। তিন ঘণ্টা বন্ধ থাকার পরে, রাত পৌনে ১০টা নাগাদ হাওড়া স্টেশন থেকে আবার ট্রেন চলাচল শুরু হয়। রেল সূত্রের খবর, ট্রেন চলাচল পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে মাঝরাত পেরিয়ে যায়। বেশ কিছু লোকাল ট্রেন বাতিলও করতে হয়েছে।
গণ্ডগোলে শুধু রেললাইন নয়, সড়কপথও কার্যত অচল হয়ে পড়ে। সন্ধ্যার পর থেকে কখন ট্রেন ছাড়বে, তার নিশ্চয়তা না-থাকায় অনেকেই সড়কপথে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করেন। সালকিয়া, বেলুড়, উত্তরপাড়া পর্যন্ত যানজট ছড়িয়ে পড়ে। রাস্তায় লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে যায় ছোট-বড় গাড়ি। টিকিয়াপাড়ায় জনতার রোষের মুখে পড়ে বাস ও অন্যান্য যানবাহন। কলকাতার দিকে ব্রোবোর্ন রোড, স্ট্র্যান্ড রোড, হাওড়া সেতু অচল হয়ে যায় যানজটে। দূরের ট্রেনের যাত্রীরা আটকে পড়েন স্টেশনের পথে।
ঠিক কী ঘটেছিল? জনতাই বা মারমুখী হয়ে উঠল কেন?
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই মহিলা রেললাইনের উপর দিয়ে হাঁটছিলেন। ছুটে আসা ট্রেন তাঁকে ধাক্কা দেয়। হাওড়ার রেল পুলিশ সুপার মিলনকান্তি দাস বলেন, “রেললাইনের উপর দিয়ে হাঁটা নিষিদ্ধ। তা সত্ত্বেও ওই মহিলা উড়ালপুল ব্যবহার না-করে লাইনের উপর দিয়েই হেঁটে যাচ্ছিলেন। তখনই তিনি ট্রেনে কাটা পড়েন।” তার পরেই জনতা উত্তেজিত হয়ে ওঠে।
পুলিশি সূত্রের খবর, জনতার মারমুখী হয়ে ওঠার কারণ মূলত দু’টি। দুর্ঘটনার পরে হাওড়ামুখী অন্য একটি লোকাল ট্রেন দাঁড় করিয়ে স্থানীয় লোকজন আহত মহিলাকে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে দিতে অনুরোধ করেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, আরপিএফ তাতে বাধা দেয়। ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে জনতা। যে-কাঠপুল দিয়ে রেললাইন পেরোনোর কথা, সেটি সারানোর কাজ চলছে চার মাস ধরে। রেল-কর্তৃপক্ষ নাকি জানিয়েছিলেন, ১৫ দিনের মধ্যে সেই সেতু সারিয়ে ফেলা হবে। সেতু মেরামতিতে দেরিও ইন্ধন জোগায় এ দিনের বিক্ষোভে।
মহিলার মৃত্যুর খবর রটে যেতেই বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে বিক্ষোভে যোগ দেন। অবরোধে বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন চলাচল। লাইন অবরুদ্ধ হয়ে পড়ায় হাওড়ামুখী সব ট্রেন দাঁড়িয়ে যায়। বেশ কয়েকটি ট্রেনে ইটপাথর ছোড়া হয়। ইটের ঘায়ে হাওড়ামুখী যশোবন্তপুর এক্সপ্রেসের চালকের মাথা ফেটে যায়। মুম্বই থেকে আসা দুরন্ত ও দিঘা-হাওড়া এক্সপ্রেসে চালকের কেবিনের কাচও ভেঙে দেওয়া হয়।
সিঙ্গুরগামী একটি ট্রেনে ছিলেন বেসরকারি সংস্থার কর্মী রতন সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, “আমাদের ট্রেন হাওড়া ছেড়ে বেরিয়েই কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে যায়। দীর্ঘ ক্ষণ আটকে থাকার পরে ট্রেন থেকে লাফিয়ে নেমে হাওড়া স্টেশনে ফেরার চেষ্টা করি। ক্ষিপ্ত জনতা আমাদের দিকেও ইট ছুড়তে থাকে।” এক পুলিশকর্তা জানান, বিক্ষোভকারীরা মৃতদেহ তুলতে দিচ্ছিলেন না। বিক্ষোভ তুলতে এলাকার কাউন্সিলরকে ডেকে আনা হয়। ঘণ্টাখানেক পরে মৃতদেহটি তোলা হয় বলে রেলকর্তাদের দাবি। তার পরে ধীরে ধীরে শুরু হয় ট্রেন চলাচল।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.