বাল্যবিবাহ রুখতে আরও প্রতিবাদ চায় অনীশা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • সিউড়ি |
একবারের জন্যও স্কুলের পরীক্ষাগুলিতে দ্বিতীয় হয়নি সে। তাই মেধা তালিকায় জায়গা হবে এমন প্রত্যাশা ছিলই। কিন্ত পর্ষদ ঘোষিত মেধা তালিকায় সে রাজ্যে মেয়েদের মধ্যে সেরা হবে এমনটা আশা করেনি সিউড়ি কালীগতি স্মৃতি নারী শিক্ষা নিকেতনের ছাত্রী অনীশা মণ্ডল। এ বারের মাধ্যমিকে অনীশা পেয়েছে ৬৮১ নম্বর (বাংলা ৯৪, ইংরেজি ৯৭, অঙ্ক ৯৯, পদার্থ বিজ্ঞানে ১০০, জীবনবিজ্ঞান ৯৮, ইতিহাস ৯৬ এবং ভূগোল ৯৭)। মেধা তালিকায় রাজ্যে সম্ভাব্য দ্বিতীয় স্থানে সে। এতো ভাল ফল করে স্বভাবতই খুব খুশি অনীশা। গর্বিত স্কুলের শিক্ষিকারাও। |
ইচ্ছা চিকিৎসক হওয়ার।—নিজস্ব চিত্র। |
সকালে খবরটা ছড়িয়ে পড়তেই অনীশার সিউড়ির সমন্বয়পল্লির বাড়িতে ভিড় জমাতে শুরু করেন সকলেই। সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। সিউড়ির অন্য একটি স্কুলের গ্রন্থাগারিক অনীশার বাবা অপূর্বকুমার মণ্ডল ও মা লীলাদেবীদের তখন ব্যস্ততার শেষ নেই। এক দিকে মোবাইলে মেয়ের ভাল ফলের খবর দিচ্ছেন, উত্তর দিচ্ছেন সংবাদমাধ্যমকেও। পরক্ষণেই বাড়িতে যাঁরা অভিনন্দন জানাতে এসেছেন তাঁদের সঙ্গে কথা বলছেন।
কী যে খুশি হয়েছি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। এই দিনটির অপেক্ষায়-ই তো ছিলাম এতোগুলো বছর। এক মাত্র মেয়ের ফল প্রকাশের পরে এমন প্রতিক্রিয়া অপূর্ববাবু ও নীলাদেবীর। তাঁদের কথায়, “মেয়ে পড়াশুনো ছাড়া আর যে কিছুই বুঝতো না। ভাল ফল করবে একপ্রকার নিশ্চিত ছিলাম। আশাবাদী ছিল মেয়ে নিজেও। কিন্তু রাজ্যে মেয়েদের সেরা হবে ভাবিনি।” এই ভাল ফলের জন্য বাবা-মা, ব্যক্তিগত শিক্ষক ও স্কুলের শিক্ষিকাদের অবদানের কথা বলতে ভোলেনি লাজুক মেয়েটি। কিন্তু কিছুক্ষণ কথা বললে লাজুক মেয়েটির মধ্যে কোথাও প্রত্যয় ফুটে ওঠে। সে বলে, “দেশের রাষ্ট্রপতি, লোকসভার স্পিকার থেকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সব ক্ষেত্রেই মেয়েরা যদি নিজের দায়িত্ব পালন করতে পারে, তা হলে আমি মেয়ে হয়ে ভাল ফল করতে পারব না কেন।” শুধু এ কথাই বলা নয়, বাল্য বিবাহের মতো সামাজিক ব্যাধি নিয়েও ভাবে সে। তার কথায়, “এই সমস্যায় ভুগতে হয় শুধুমাত্র মেয়েদের। এটা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।” যখন এই সব কথা হচ্ছে তখনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে ফোন করে শুভেচ্ছা জানান অনীশাকে।
অনীশার ইচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ে ভবিষ্যতে চিকিৎসক হওয়া। তবে শুধু পড়াশোনা নয়। অবসরে ছবি আঁকা, রহস্যগল্প, উপন্যাস পড়া, টিভি দেখতে সে খুব ভালবাসে। |