পশ্চিমপল্লিতে এখন সাজ সাজ রব। পাড়ার মেয়ে শোভনা বাগুলি ৬৭৩ নম্বর পেয়ে অষ্টম হয়েছে মাধ্যমিকে। অন্ডাল গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী সে। তাকে সংবর্ধনা দেওয়ার তোড়জোড় করা হচ্ছে বলে জানালেন রামপ্রসাদপুর পঞ্চায়েতের প্রধান চন্দ্রভানু দত্ত। ছাত্রীর সাফল্যে অভিভূত বিদ্যালয়ের শিক্ষিকারা। আনন্দিত পরিবারও।
অঙ্কে একশোয় একশো। বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগোলেও প্রায় ৯৫ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছে শোভনা।
ছোট থেকেই শ্রেণিতে প্রথম হয়ে আসছে শোভনা। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময়ে এক বার মাত্র দ্বিতীয় হয়েছিল। চতুর্থ শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষায় একাদশ স্থান পেয়েছিল সে। সোমবার শোভনা বলে, “তখন থেকেই জানতাম, মাধ্যমিকে প্রথম কুড়ি জনের মধ্যে থাকব আমি। দিনে ছ’ঘণ্টা মতো পড়তাম আমি। বড় হয়ে চিকিৎসক হতে চাই।” |
শোভনা বাগুলি। —নিজস্ব চিত্র। |
আত্মবিশ্বাসী শোনায় তার গলা। এত ভাল ফলে অভিভূত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা তপতী ভট্টাচার্য বলেন, “এত দিনের পরিশ্রমের দাম দিল শোভনা।” শোভনার বাবা রেলকর্মী উৎপলবাবু ও মা রাধারানিদেবী বলেন, “শুধু মাধ্যমিকে নয়, উচ্চ শিক্ষাতেও যাতে ও এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারে, সেটাই চাই আমরা।”
পড়াশোনার পাশাপাশি নাচ, গান, আবৃত্তিও পছন্দের শোভনার। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত নাচ শিখত সে। কিন্তু কবিতা লেখা আর আবৃত্তি করাই সব চেয়ে বেশি প্রিয় তার। প্রিয় কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। আর প্রিয় লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। শোভনা বলে, “নাচতে ভালই লাগত। কিন্তু অনেক সময়ের ব্যাপার। পড়াশোনায় ক্ষতি হতে পারে ভেবে গানের দিকেই ঝুঁকেছিলাম। কিন্তু আমার লক্ষ্য ভাল আবৃত্তিকার হওয়া।” স্থানীয় বাসিন্দা তথা শিল্পাঞ্চলের কবি দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, “ও তো ভাল কবিতাও লেখে। ও নিশ্চয়ই বড় হয়ে ভাল কবি ও চিকিৎসক হয়ে উঠবে।”
শোভনার সাফল্যে খুশি গোটা এলাকা। অদূরেই গ্রামপ্রধান চন্দ্রভানুবাবুর বাড়ি। সকালে খবর পেয়েই তিনি সটান পৌঁছে গিয়েছেন শোভনাদের বাড়ি। বলেন, “ওর এই সাফল্যে যাতে এলাকার পড়ুয়ারা উদ্বুদ্ধ হয়, তার জন্য আমরা ওকে সংবর্ধনা জানাব।” এ দিকে, শোভনা ধন্যবাদ জানাচ্ছে তার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। ছোট বোনের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত দিদি নন্দিতাও। স্নাতক স্তরের ইংরেজি সাহিত্যের সেই ছাত্রী এখন বলছেন, “ও ভাল ফল করবে, জানতাম। কিন্তু এত ভাল হবে, ভাবতে পারিনি।” |