৭১৫টি আসনের জন্য ৩৮০০ জন আবেদনকারী!
আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের ৫৭টি আসনে তৃণমূলের প্রার্থী হতে চেয়ে ৮০০ জন আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন দলের জেলা নেতৃত্বের কাছে। পঞ্চায়েত সমিতির ৬৫০টি আসনের জন্য আবেদন করেছেন ৩০০০ জন। এই বিপুল সংখ্যক আবেদনকারীর মধ্যে থেকে প্রার্থী বাছতে এ বার নাজেহাল হয়েছেন দলের জেলা নেতারা। তাঁদের মতে, এমন পরিস্থিতি ‘নজিরবিহীন’। কেউ কেউ অবশ্য মনে করছেন, দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যে জায়গায় পৌঁছেছে, সেখানে দলের অনেকেই কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে রাজি নন।
জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব প্রাথমিক ভাবে প্রার্থী বাছাই করে সেই তালিকা তুলে দিয়েছেন দলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে। রাজ্য নেতৃত্বই চড়ান্ত প্রার্থী তালিকা তৈরি করেছে। আজ, সোমবার জেলা পরিষদ আসনে, কাল, মঙ্গলবার পঞ্চায়েত সমিতি আসন এবং বুধবার গ্রাম পঞ্চায়েত আসনগুলিতে প্রার্থী-তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
জেলা তৃণমূল সভাপতি নির্মল ঘোষ বলেন, “প্রার্থী হতে চেয়ে যে কেউ আবেদন তো করতেই পারেন। তবে দলের প্রতি তাঁর আনুগত্য এবং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শ তিনি মেনে চলেন কি না, তা-ই দেখা হয়েছে। তা ছাড়াও, যদি তাঁর ভাবমূর্তি স্বচ্ছ হয় এবং তাঁর ব্যাপারে যদি এলাকার দলীয় সাংসদ, বিধায়ক এবং ব্লক সভাপতির সম্মতি থাকে, তা হলে আমাদের পাঠানো প্রার্থী-তালিকায় তাঁকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।”
২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদের ৫১টি আসনে প্রার্থী হওয়ার জন্য তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে ১৪৬ জনের আবেদনপত্র জমা পড়েছিল। এ বার আসনসংখ্যা বেড়েছে ছ’টি। আবেদনকারীর সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে পাঁচ গুণেরও বেশি। কেন এ বার জেলা পরিষদের তৃণমূল প্রার্থী হওয়ার জন্য এমন আগ্রহ?
জেলা তৃণমূলের নেতৃত্বের একটি বড় অংশ মনে করছেন, দল যে হেতু এ বার রাজ্যের ক্ষমতায় রয়েছে, সে হেতু জেলা পরিষদেও ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা প্রবল। ফলে, প্রার্থী হিসেবে দলের টিকিট মিললে জয় এক রকম নিশ্চিত। সেই কারণে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ এ বার অনেক বেশি।
যে সব তৃণমূল নেতা-কর্মী এ বার প্রার্থী হতে চেয়ে আবেদন করেছেন, তাঁদের অনেকেই অবশ্য প্রকাশ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা স্বীকার করেননি। যেমন, জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি রতন ঘোষ প্রার্থী হতে চেয়ে আবেদন করেছেন। তাঁর কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে উন্নয়নে জোর দিয়েছেন, তাতে সামিল হতে চাই। তাই প্রার্থী হতে চেয়ে আবেদন করেছি।” বনগাঁর ট্যাংরা পঞ্চায়েতের সদস্য সুজিত সমাজপতি বলেন, “মানুষকে সুস্থ পরিষেবা দিতে চাই। সেই সঙ্গে চাই সামাজিক স্বীকৃতিও। সেই কারণেই প্রার্থী হতে চাই।” বর্তমান জেলা পরিষদ সদস্য শ্যামল রায় ফের প্রার্থী হতে চান। তাঁর কথায়, “দলকে ভালবাসি। এলাকার উন্নয়ন করতে চাই। তাই প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছি।”
পঞ্চায়েত ভোটের মুখে প্রার্থী বাছাই করাকে কেন্দ্র করে নানা এলাকায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যে প্রবল আকার নিয়েছে, তা তৃণমূলের জেলা স্তরের নানা বৈঠকে ইতিমধ্যেই উঠছে। সম্প্রতি মধ্যমগ্রামে জেলা তৃণমূল কার্যালয়ে বসিরহাটের দলীয় সাংসদ নুরুল ইসলাম তাঁর এলাকায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তৃণমূলকে জেলা পরিষদ দখল করতে হলে বসিরহাট মহকুমায় ভাল ফল করতেই হবে। কেননা, মোট ৫৭টি আসনের মধ্যে শুধু ওই মহকুমাতেই রয়েছে ২৫টি আসন। এ জন্য তৃণমূলের পক্ষ থেকে বসিরহাটকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তৃণমূলের অন্দরের খবর, বনগাঁ মহকুমার বাগদা ব্লকেও দলীয় কোন্দল ভয়াবহ আকার নিয়েছে। স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ মন্ত্রী উপেন বিশ্বাসের পছন্দের প্রার্থীকে দলের একাংশ মেনে নিতে পারছেন না। তাঁরা অন্য প্রার্থী চাইছেন। এমন উদাহরণ রয়েছে অন্য মহকুমাতেও। একই রকম জটিলতা দেখা গিয়েছে পঞ্চায়েত সমিতির আসনগুলির জন্য আবেদন নিয়েও। |