পূর্ণিমার ভরা কোটালে জলের চাপে কোথাও নদীবাঁধ ভেঙে, কোথাও বাঁধ উপচে রবিবার প্লাবিত হল উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার কিছু এলাকা।
বসিরহাটের মহকুমাশাসক শ্যামল মণ্ডল বলেন, “নদীর জল বেশি বেড়ে যাওয়ায় এমন ঘটনা ঘটল। তবে বড় ধরনের কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। সেচ দফতরের তরফে ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় নদীবাঁধে মাট ফেলার কাজ শুরু হয়েছে।
মহকুমা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, রবিবার দুপুর নাগাদ বসিরহাটের পুরাতন বাজারের মধ্যে ইছামতী নদীর জল ঢুকে পড়ে। দোকানগুলিতে জল ঢপকে যাওয়ায় বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। অল্প সময়ের মধ্যে জলের উচ্চতা বেশ খানিকটা বেড়ে যায়। ইটিন্ডা রোড এবং শ্মশানঘাট, বালিগাদা মোড়ে কোমরসমান জল জমে যায়। হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি এলাকার বিভিন্ন হাট ও বাজার প্লাবিত হয়েছে। |
জল ঢুকেছে হাসনাবাদের ভবানীপুর, সন্দেশখালির কালিনদর, ও বাউনিয়া এলাকায় গ্রামে। বেতনি নদীর জল ঢুকেছে ন্যাজাট বাসস্ট্যান্ড ও বাজারে। বাজারেই দোকান সুব্রত পালের। তিনি বললেন, “কিছু কিছু জায়গায় বাঁধ ছাপিয়ে জল ঢুকলেও ক্ষতি তেমন হয়নি।” সন্দেশখালি -২ ব্লকের সিতলিয়ায় রায়মঙ্গলের জল এবং আতাপুর বড় কলাগাছি নদীর জল বাঁধ ছাপিয়ে ঢুকে পড়ে।
হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও বিশ্বজিত্ বসু বলেন, “সর্দারপাড়া এবং সাঁতরা গ্রামে রায়মঙ্গলের বাঁধ ধসে জল ঢুকেছে। তবে সর্বত্রই বাঁধে মাটি পেলার কাজ শুরু হয়েছে।”
এ দিন সকালে কাকদ্বীপ মহকুমায় মুড়িগঙ্গার বাঁধ ভেঙে নামখানার নারায়ণগঞ্জ গ্রামে জল ঢুকে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশ কিছু পুকুর ও কৃষিজমি।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আয়লার সময় ওই গ্রামের কাছে নদীবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ এলাকা। |
তারপর কোনভাবে মেরামতি করা হলেও বছরখানেক আগে মাটি ধসে এক মহিলার মৃত্যু হয়। তারপরেও মাঝেমধ্যেই নদীবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাতে জোয়ারের সময় নদীবাঁধে কয়েকটি জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছিল। জল ঢোকার আশঙ্কায় অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। রবিবার সকাল ১১টা নাগাদ ওই নদীবাঁধ ভেঙে জল ঢুকতে শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪০টি পরিবার। নষ্ট হয়ে গিয়েছে প্রায় ২০টি মাছের পুকুর ও শাকসবজিও।
অন্যদিকে, মথুরাপুর-২ ব্লকের নগেন্দ্রপুর পঞ্চায়েতে প্রধানপাড়ার কাছেও মনি নদীর নদীবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বেশ কিছু এলাকা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাঁধ ভাঙলেই মাটি ফেলে দায় সারে সেচ দফতর। অবিলম্বে কংক্রিটের বাঁধ তৈরি না হলে সামনের বর্ষায় ফের ভাসতে হবে তাঁদের।
কাকদ্বীপের মহকুমাশাসক অমিত নাথ বলেন, “জলস্তর বেড়ে যাওয়ার কারণে বাঁধ ভেঙে এই অবস্থা হয়েছে। বিষয়টি সেচ দফতরকে জানানো হয়েছে।”
মৌসুনি ডিভিশনের সেচ দফতরের বাস্তুকার প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “ওই এলাকায় খুব শীঘ্রই বড় মাটির বাঁধ তৈরি করা শুরু হবে।” |