ভল্টটা ছিল সারদা গোষ্ঠীর বারুইপুর ফুলতলার অফিসে। প্রথম দফার তল্লাশিতেই সেটির হদিস মেলে। কিন্তু চাবি না-থাকায় কোনও ভাবেই সেটি খোলা যাচ্ছিল না। রবিবার সেই ভল্ট ভেঙে প্রচুর নগদ টাকা, গয়না ও লগ্নি সার্টিফিকেট পাওয়া গিয়েছে। সারদার বারুইপুর অফিসের ডিভিশনাল ম্যানেজার অরিন্দম দাস ওরফে বুম্বার কাছে ওই ভল্টের চাবি আছে বলে জেরায় জানিয়েছিলেন সংস্থার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন। বুম্বাকে এখনও গ্রেফতার করা যায়নি। উদ্ধার হয়নি চাবিও।
এ দিন বারুইপুর ফুলতলায় সারদার ওই অফিসে ফের তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। তখনই ভাঙা হয় ভল্ট। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, তাতে সোনা ও রুপোর গয়না (আনুমানিক মূল্য ২০ লক্ষ টাকা), ২০ লক্ষ টাকা মেয়াদ-উত্তীর্ণ সার্টিফিকেট এবং নগদ ৫০ হাজার টাকা পাওয়া গিয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার জানান, তাঁরা ওই গয়নার প্রকৃত মূল্য যাচাইয়ের ব্যবস্থা করছেন। বারুইপুর-সহ ওই অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় সংস্থাকে ডোবানোর মূলে বুম্বাই ছিলেন বলে অভিযোগ এনেছেন সুদীপ্ত।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের জেরার মুখে সুদীপ্ত জানান, ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা জমি সংস্থার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এঁটে উঠতে না-পেরেই অর্থ লগ্নি সংস্থার ব্যবসা শুরু করেছিলেন তিনি। সারদা-প্রধানের স্বীকারোক্তি, বাজার থেকে টাকা তুলে শুধু জমি ব্যবসার কথা ভাবলেও পরে তিনি বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। এবং বেশির ভাগ ব্যবসায় এক শ্রেণির কর্মীর কারসাজিতেই ভরাডুবি হয়েছে।
পুলিশি সূত্রের দাবি, তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার পরামর্শেই তিনি সংবাদমাধ্যম এবং অন্যান্য ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছিলেন বলে জেরার জানিয়েছেন সুদীপ্ত। তাঁর বক্তব্য, সংবাদমাধ্যমের ব্যবসা না-বোঝার ফলেই আর্থিক দিক দিয়ে ডুবে যান তিনি। তার উপরে অর্থ লগ্নি সংস্থার কর্মীদের একাংশের ষড়যন্ত্রে সারদার পুরো ব্যবসাই বন্ধ হয়ে যায়। জেরার জবাবে দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রাক্তন বিধায়ক আনন্দ বিশ্বাস, বিষ্ণুপুরের জোনাল কমিটির সম্পাদক অলোক সর্দার-সহ তিন সিপিএম নেতার সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ এনেছেন সুদীপ্ত। পুলিশ ওই নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদও করেছে। আনন্দবাবুর দাবি, তিনি বিধায়ক হিসেবে আমন্ত্রণ পেয়েই সারদার অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁর অন্য কোনও সম্পর্ক ছিল না বলে ওই প্রাক্তন বিধায়কের দাবি। আর অলোকবাবু বলেন, “সুদীপ্ত বহু লোকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে জমি দেয়নি। আমরা সুদীপ্তের উপরে চাপ সৃষ্টি করে কিছু লোকের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলাম।”
সারদার আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্তে গড়া শ্যামল সেন কমিশনে জমা দেওয়া বেশ কিছু আমানতকারীর অভিযোগপত্রের প্রতিলিপি বর্ধমানের কালনায় রেললাইনের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। মিলেছে কয়েকটি ভোটার কার্ডও। শনিবার রাতে এলাকার কয়েক জন রেললাইন পেরোনোর সময় লাল কাপড়ে মোড়া অভিযোগপত্রগুলি দেখতে পান। রেল পুলিশের অনুমান, অভিযোগ জমা দিয়ে প্রতিলিপি নিয়ে ফেরার পথে অসাবধানে সেগুলি পড়ে গিয়েছে। যে-সব আমানতকারীর অভিযোগপত্র পাওয়া গিয়েছে, তাঁদের অধিকাংশই ঝাড়খণ্ডের পাকুড়ের বাসিন্দা বলে রেল পুলিশ জানায়।
|