ওয়াংখেড়ের বিখ্যাত মস্তিষ্ক কাজ করল না ইডেনে
ই তো, ওই তো টিমের দুই সতীর্থর কাঁধে আবার উঠে পড়েছেন তিনি। শিশুর উচ্ছ্বাসে দুলিয়ে চলেছেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের সমুদ্রনীল ফ্ল্যাগ। এক বার নামলেন এবং নেমেই পড়ে গেলেন ‘ভাংনাম’ নৃত্যরত হরভজন সিংহ-র সামনে। ব্যস, আর রক্ষে আছে? এক মুহূর্তও দেরি নেই, এক হাতের এক ঝটকায় একেবারে সর্দারের কোলে!
দু’বছর আগেও আরব সাগরের পারে এই একই ফ্রেম ছিল না? ওয়াংখেড়ের মায়াবী রাতেও সেই তাঁকে কাঁধে নিয়ে ভিকট্রি ল্যাপ দিয়েছিলেন না বিরাট কোহলি?
রাত্তির বারোটাতেও ঠিক বোঝা যাচ্ছিল না, ম্যাচটা আদতে হচ্ছে কোথায়? ওয়াংখেড়ে না ইডেনে? না, মাঠে তো তিনি রবিবারও নামেননি। তাঁর ব্যাটিংকে ঘিরে সৃষ্টি হয়নি কোনও নতুন সম্মোহন। তবে যে ওই ক্লাবহাউস, গ্যালারি থেকে ‘সচিন..সচিন..’ জান্তব গর্জন উঠছে, তিনি ভিকট্রি ল্যাপ দেওয়ার সময় আতসবাজির রোশনাইয়ে নিত্যনতুন রং বদলাচ্ছে মিনিটে-মিনিটে? ওগুলো তা হলে কীসের সম্মোহনে?
আসলে ২ এপ্রিল, ২০১১ এবং ২৬ এপ্রিল, ২০১৩, দু’বছরের ফারাকে, দুই ভিন্ন প্রেক্ষাপটে সচিন রমেশ তেন্ডুলকর দুই ভিন্ন আবেগের তৈলচিত্র এঁকে দিয়ে গেলেন।

পাংশু মুখে ট্রফি তুলে দিচ্ছেন বোর্ড প্রেসিডেন্ট।
সে দিন ওয়াংখেড়েতে বিশ্বকাপ জিতেছিলেন ক্রিকেট-ঈশ্বর। অধরা স্বপ্ন ছুঁয়ে ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে যোগ করেছিলেন এক নতুন অধ্যায়। নেপথ্যে ছিল, এই এমএস ধোনিরই দুর্ধর্ষ ইনিংস।
আজ ইডেনে জীবনে প্রথম ও শেষ বারের জন্য আইপিএল ট্রফি জিতে ফেললেন সচিন রমেশ তেন্ডুলকর। আশ্চর্যজনক ভাবে, সেই এমএস ধোনিকেই নেপথ্যে রেখে। এবং তেইশ বছরের ক্রিকেট-জীবনের সর্বশেষ অধরা স্বপ্ন ছুঁয়ে জানিয়ে দিলেন, এই শেষ। আর আইপিএল খেলছেন না!
সচিন রমেশ তেন্ডুলকর তাই মাঠে থাকুন চাই না থাকুন, ব্যাট হাতে নামুন চাই না নামুন, ছেষট্টি হাজারের ইডেনের তাই কিছু এসে যায়নি। যারা বিকেল থেকে দু’টো টিমের উদাত্ত সমর্থনে নিজেদের ভেঙে নিয়েছে, মাঠে শাপমোচনের প্রতিজ্ঞা দেখিয়ে যারা ক্রিকেটকে জিতিয়ে দিয়েছে, এবং একই সঙ্গে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ধিক্কারে ডুবিয়ে দিয়েছে এন শ্রীনিবাসনকে।
বোর্ড প্রেসিডেন্টের মুখটা দেখতে কেমন লাগছিল, সে আলোচনা থাক। নিজের অন্যায় দম্ভের যথাযথ উত্তর তাঁকে দিয়ে দিয়েছে ছেষট্টি হাজারের ইডেন। দিয়ে দিয়েছে, আইপিএল ফাইনালের মতো মহামঞ্চে। শ্রীনিবাসনের কোনও উত্তর ছিল না রাতে। কিন্তু মহেন্দ্র সিংহ ধোনি? তাঁরও কি থাকবে?

স্মিথ আউট।
বরং রবিবারের পর ধোনির স্ট্র্যাটেজি জাতীয় তর্কের বিষয়বস্তু হয়ে উঠবে। কোন যুক্তিতে সাত নম্বরে নিজেকে নামিয়ে দেন তিনি? পঞ্চাশের মধ্যে অর্ধেক টিম ডাগআউটে বসে পড়েছে দেখেও? নামলেন যখন সামনে একটা প্রায় অসম্ভব লক্ষ্য। কখনও ৩৮ বলে ৭৭, কখনও ১৮ বলে ৫৩। একের পর এক উইকেট পড়েছে, আস্কিং রেট ছুঁয়েছে কুড়িতে, অসহায় ভাবে দেখতে হয়েছে তাঁকে। নিজেরই দোষে, ঐতিহাসিক ভুলে। দু’বছর আগে দেশকে বিশ্বকাপ ফাইনাল জিতিছিলেন ধোনি প্রায় একই অবস্থা থেকে। সে দিন পরপর সচিন-সহবাগ চলে গিয়েছিলেন। ভারত অধিনায়ক ব্যাটিং অর্ডারে উঠিয়ে এনেছিলেন চারে। আজ তাঁর বিখ্যাত মস্তিষ্ক কেন চালে এমন ঐতিহাসিক ভুল করল জানা নেই। ইডেনের উইকেট আজ গতি-বিমুখ ছিল না, গতিশীল ছিল। বল ভাল আসছিল ব্যাটে। ধোনি আগে নামলে ম্যাচের কাহিনি অন্য রকম যে হত নাজঙ্গি মুম্বই সমর্থকও কী গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারবে?
এবং সব শেষে কী পেলেন ভারত অধিনায়ক? না, চরম তাচ্ছিল্য। যা ধোনির দিকে ছুড়ে দিলেন ভারতীয় টিমে তাঁরই প্রিয়পাত্র রোহিত শর্মা। মুম্বইয়ের ১৪৮ তাড়া করতে নেমে চেন্নাইয়ের শেষ বলে যখন দরকার ছিল ২৯, ব্যাট হাতে যখন ক্রিজে নিস্ফল আক্রোশ দেখাচ্ছেন সিএসকে ক্যাপ্টেন, অত্যাশ্চর্য ফিল্ড প্লেসমেন্ট করে ফেললেন রোহিত শর্মা। সাত জন ফিল্ডার সার্কেলে, একটা স্লিপ, একটা ডিপ স্কোয়্যার লেগ, শর্ট মিড উইকেট কী নেই! যেন ভারত অধিনায়ককে বুঝিয়ে দেওয়া, ক্রিকেটবিশ্বের সেরা ফিনিশার তুমি, নাও এ বার ম্যাচটা বের করো!

দু’বলে দু’উইকেট। ইডেনে বিধ্বংসী মালিঙ্গা।
চেন্নাই অবশ্য ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল অনেক আগে, মাঠে নামারও আগে। টিমের উপর কলঙ্কের অসহ্য চাপ কী ভাবে যে একটা চ্যাম্পিয়ন টিমকেও ঝাঁঝরা করে দিতে পারে, আদর্শ উদাহরণ হিসেবে থেকে গেল আইপিএল ফাইনালের চেন্নাই। বোলিংয়ের সময় তবু স্ফুলিঙ্গের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে, কিন্তু ব্যাটিংয়ে? হাসি আর বিজয় যেন ক্রিজে নেমেই আইসিইউতে ঢুকে পড়লেন! ৩ রানে উড়ে গেল ৩ উইকেট! বাকি হাড়গোড় ভাঙা ছিল সময়ের অপেক্ষা। খুব সহজে, চেন্নাই আজ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যোগ্যই ছিল না।
মহাদশমীর ইডেনে রাতের সাড়ে পাঁচ ফুটের মহানায়ককে ঘিরে উৎসব দেখলে আবার মনে হবে, এক দিক থেকে ঠিকই হল। বোর্ড প্রেসিডেন্ট সদম্ভ তর্জনগর্জনে মসনদ বাঁচালেও দেশবাসীর কাছে ন্যায়যুদ্ধে হেরেছেন। চেন্নাইয়ের হারও তাই ঠিকই আছে। যে টিমের ‘মালিক’-এর বিরুদ্ধে স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগ ওঠে, সেই টিম আইপিএল জিতলে ক্রিকেট ন্যায় পেত কি? বরং এই ভাল। যাঁর হাতে ট্রফি উঠল, তিনি আর কিছু না করুন, অন্তত ট্রফির শুদ্ধিকরণটা তো করে দিয়ে গেলেন। আড়াই দশক পরেও তিনি আজও আসমুদ্রহিমাচলের কাছে ভরসার খড়কুটো। আজও বিশ্বাসের শালগ্রামশিলা ওই পাঁচ অক্ষরের নাম।
তেন্ডুলকর!
ইডেনে দর্শক অঞ্জলি।


ছবি: শঙ্কর নাগ দাস, পিটিআই, উৎপল সরকার




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.