লুঠ করতে এসে মহিলার গলায় ভোজালির কোপ দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। এর পর ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোতে দেখে ব্যাগ ফেলে রেখেই চম্পট দিল তাঁরা। বৃহস্পতিবার রাত সওয়া ন’টা নাগাদ বিধাননগর ও শিয়ালদহ স্টেশনের মাঝে ঘটনাটি ঘটেছে। এর পরেই ফের রাতের ট্রেনে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, পুনম মাখানি নামে ওই যাত্রী গুরুতর জখম অবস্থায় বন্দর এলাকার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি রয়েছেন।
ঠিক কী ঘটেছিল বৃহস্পতিবার রাতে? হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই পুনম রবিবার জানিয়েছেন, নিজের দোকান বন্ধ করে তারাতলায় নিজের বাড়ি ফেরার জন্য বিধাননগর থেকে ট্রেনে উঠেছিলেন তিনি। গোটা কামরায় তিনি ছাড়াও ছিলেন আর এক মহিলাও। ট্রেনটি বিধাননগর স্টেশন ছাড়ার পরেই এক যুবক হঠাৎ হাজির হয়ে চড়াও হয় পুনমের উপর। ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন তাঁর ব্যাগ। শুরু হয় দু’পক্ষের ধস্তাধ্বস্তি। ইতিমধ্যেই সেখানে হাজির হয়েছে আরও দুই যুবক। অভিযোগ, ব্যাগ নিতে বাধা দেওয়ায় ওই যুবকেরা পুনমের গলায় ভোজালির কোপ মারে। এর পর ট্রেনটি শিয়ালদহ কারশেডের কাছে গতি কমালে ওই যুবকেরা নেমে যায়। কিন্তু ব্যাগ ফেলে গেল কেন?
পুনমের কথায়, “গলায় ভোজালির কোপ পড়ায় ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছিল। আমি কুর্তা-পাজামা পড়েছিলাম। ওড়না ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে লুঠেরাদের কাছে ব্যাগের মধ্যে থাকা রুমালটি দিতে বলি।” এর পরেই দুষ্কৃতীরা পিছন ফিরে রক্তাক্ত পুনমকে দেখে ঘাবড়ে যায়। “ব্যাগ ফেলে রেখে শিয়ালদহ কারশেডের কাছে চলন্ত ট্রেন থেকে লাফ দিয়ে নেমে যায় লুঠেরারা”, বলছেন পুনম। এর পরেই শিয়ালদহ স্টেশনে ট্রেন পৌঁছলে রক্তাক্ত অবস্থায় জিআরপি-র কাছে যান পুনম। অভিযোগ, জিআরপি-র প্রথমে তাঁর কথা শুনতেই চায়নি। এর পরে শিয়ালদহের স্টেশন মাস্টারের সাহায্যে তিনি এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। রেল পুলিশ সূত্রের খবর, তত ক্ষণে উপরমহলের কর্তারা বিষয়টি জেনে ফেলায় হাসপাতালে গিয়ে পুনমের সঙ্গে কথা বলেন জিআরপি-র অফিসারেরা। কেন রেল পুলিশ আগেই গুরুত্ব দিল না?
শিয়ালদহের রেল পুলিশ সুপার (এসআরপি) উৎপলকুমার নস্কর বলেন, “ওই মহিলার আঘাত খুব গুরুতর। তাই আগে হাসপাতালে ভর্তি করতে বলা হয়েছিল। তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে এখনও এফআইআর দায়ের হয়নি। উনি সুস্থ হলে এফআইআর লেখা হবে।” রেল পুলিশ সূত্রের খবর, তদন্তে নামার পর মহিলার কাছ থেকে লুঠেরাদের বর্ণনা শোনা হয়েছে। সে রকম দেখতে দুষ্কৃতীদের কয়েকটি ছবি ওই মহিলাকে দেখানো হয়েছে। কিছু সূত্র মিলেছে বলেও রেল পুলিশ সূত্রের দাবি।
প্রশ্ন উঠেছে আরও একটি বিষয় নিয়ে। রেল সূত্রের দাবি, রাতের ট্রেনে মহিলা কামরায় সশস্ত্র পুলিশ থাকার কথা। তা ছিল না কেন? এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনও উত্তর রেল পুলিশের কর্তারা দিতে পারেননি। তবে এসআরপি জানান, পুলিশ না থাকার অভিযোগ খতিয়ে দেখবেন তিনি। ঘটনার নিন্দা করে রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী বলেন, “রেল পুলিশের বেতনের অর্ধেক টাকা রেল মন্ত্রক দিলেও তাঁরা রাজ্য সরকারের অধীন। রাজ্যের জিআরপি কেমন পাহারা দিচ্ছে, এই ঘটনা তারই প্রমাণ।” |