বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসের দু’ধার এখন কার্যত ইমারতি ব্যবসায়ীদের দখলে।
এক্সপ্রেসওয়ের দুই ধার দিয়ে যেখানে মানুষজনের হাঁটাচলাই নিষিদ্ধ, সেখানে রীতিমতো ইট-বালি ও অন্যান্য ইমারতি দ্রব্যের ব্যবসা চলছে পুরোদমে। শুধু রাস্তার ধারেই নয়, কোথাও কোথাও বালি বা ইট পড়ে থাকছে রাস্তার মাঝখানেও। বালিতে পিছলে পড়ে অথবা ইটে ঠোক্কর খেয়ে ঘটে যাচ্ছে দুর্ঘটনাও। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে শহরের ভিআইপি রোড বা যশোহর রোডের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় যেখানে সম্প্রসারণের কাজ চলছে জোর কদমে, সেখানে ইট-বালির দৌলতে উল্টে জায়গা কমছে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে।
যশোহর রোডের ফ্লাইওভার ধরে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে উঠলেই রাস্তার দু’দিকে বালি আর ইটের স্তূপ। দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত এই এক্সপ্রেসওয়ের সাড়ে সাত কিলোমিটার অংশে ছবিটা এমনই। অভিযোগ, রাতের অন্ধকারে বালি বা ইটবোঝাই ট্রাক রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ইমারতি সামগ্রী নামায়, যা কেনেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাস্তার পাশে গজিয়ে ওঠা এই দোকানগুলি থেকে ইমারতি সামগ্রী কিনলে তা বাজারচলতি দাম থেকে বেশ কিছুটা কমে মেলে। যেমন, এক স্থানীয় ব্যবসায়ী জানালেন, যেখানে বাজারে ১ হাজার ইটের দাম ৭ হাজার টাকা, এখান থেকে কিনলে তা মেলে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার মধ্যে। বালির দামও এখানে বস্তা-পিছু কম। বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের দু’দিকে তৈরি হচ্ছে একের পর এক বহুতল। এই সব নির্মীয়মাণ বহুতলে ইমারতি দ্রব্য সরবরাহের জন্যই রাস্তার দু’ধারে এ রকম ‘বেআইনি’ ইমারতি দ্রব্যের ব্যবসা গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ। রাজারহাট-নিউ টাউনে নির্মীয়মাণ আবাসনের জন্য ইমারতি দ্রব্য সরবরাহকারী ট্রাকগুলিই এই রাস্তায় খুচরো বিক্রির উদ্দেশ্যে কিছু ইট-বালি ফেলে যায় বলে অভিযোগ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, এই ব্যবসা শুরু হয় ভোর থেকে। বালি বা উত্তরপাড়ার প্রচুর অফিসযাত্রী এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন। নিউ টাউনের তথ্যপ্রযুক্তির অফিসের বহু কর্মী, যাঁদের বাড়ি বালি বা উত্তরপাড়া এলাকায়, তাঁরাও এই রাস্তা ব্যবহার করেন। সেক্টর ফাইভের এক বহুজাতিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী অনিমেষ রায় বলেন, ‘‘গত সপ্তাহে রাতে বাড়ি ফেরার সময়ে অল্পের জন্য দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে গিয়েছি। রাস্তার ধারে বালি পড়ে থাকায় আমার মোটরবাইকটা পিছলে যায়। একেবারে রাস্তার মাঝখানে উল্টে যায় বাইক।” নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, এক্সপ্রেসওয়ে ধরে দ্রুতগতিতে গাড়ি যাওয়ার কথা। রাস্তায় ইমারতি দ্রব্য পড়ে থাকায় খুব সাবধানে গাড়ি চালাতে হয়। তবু দুর্ঘটনা এড়ানো যায় না।
অভিযোগ, রাতের অন্ধকারে পুলিশের একাংশের মদতেই ট্রাক থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে বালি বা ইট ফেলা হয়। যদিও ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এসিপি বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘রাস্তার ধারে ইমারতি দ্রব্য ফেলার অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা বেশ কয়েকটি কেস করেছি। নজরদারি এখন অনেকটাই বাড়ানো হয়েছে।” সেই সঙ্গে পুলিশের দাবি, এই এক্সপ্রেসওয়েতে আগে আলো না থাকায় সমস্যা আরও তীব্র ছিল। এখন রাস্তার দু’দিকে আলো থাকায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। |