গার্ডের পাত্তা নেই, আধ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে যাত্রীবোঝাই ট্রেন
যেন কলম আছে, কালি নেই!
শনিবার রাত ১১টা ১০-এর নৈহাটি লোকাল। তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে ট্রেন তৈরি। ভিড় হয়েছে ভালই। ভেন্ডার কামরাও ভর্তি। ট্রেনের চালক এসে গিয়েছেন। কিন্তু গার্ডের দেখা নেই। তাই ছাড়া যাচ্ছে না ট্রেন।
সাধারণত শিয়ালদহের বেশি রাতের লোকাল ট্রেনের যাত্রীদের চরিত্র অন্য সময়ের থেকে একটু অন্য রকম থাকে। শনিবারের রাত হলে তো আর কথাই নেই। কর্মসূত্রে দূরে থাকা কেউ সপ্তাহান্তে ফিরছেন বাড়িতে। সারা দিনের খাটনির পরে কেউ বা সিটে বসে ঝিমোচ্ছেন। কেউ ফিরছেন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আত্মীয়ের বাড়ি থেকে খাওয়াদাওয়া সেরে। কেউ আড্ডা মেরে, কেউ কিঞ্চিৎ গলা ভিজিয়ে, রঙিন হয়ে। সব মিলিয়ে এই ট্রেনের ‘মুড’-টাই অন্য রকম!
গার্ড না আসায় ধীরে ধীরে ‘মুড’টাই পাল্টাতে থাকে। গরমে অনেকেই ঘামছেন কুল কুল করে। বাড়ছে ভিড়। প্ল্যাটফর্মে নামারও উপায় নেই। বাচ্চা-কাচ্চারা কাঁদতে শুরু করেছে। কে কার পায়ের উপর দাঁড়িয়ে পড়েছে তাই নিয়ে বেধেছে তুমুল ঝগড়া। ঝিমুনি কেটে গিয়ে থমথমে মুখ পানশালা ফেরত বাবুটিরও। গার্ডের কামরার সামনে রেগেমেগে পায়চারি শুরু করেছেন অনেকে।
অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য
এর মধ্যে গার্ডের পোশাক পরা এক ব্যক্তি ব্যাগ ঝুলিয়ে আসছিলেন ট্রেনের দিকে। তাঁকে দেখেই ঝাঁঝিয়ে উঠলেন যাত্রীদের একাংশ। এক জন রেগেমেগে বললেন, “ঘুমোচ্ছিলেন নাকি?” তিনিও ততোধিক রেগে জবাব দিলেন, “তাতে আপনার কী?” যাত্রীরা আরও উত্তেজিত, “ঘড়িতে ক’টা বাজে দেখেছেন!” গার্ড সাহেব এ বার ভুল বুঝতে পারলেন। “আরে আমি এই ট্রেনের গার্ড নই। আমি বাড়ি ফিরব বলে এসেছি। এই ট্রেনের গার্ড আসেননি।” জোরে পা চালিয়ে অফিসঘরের দিকে চলে গেলেন তিনি।
আবার অপেক্ষা। এর মধ্যে সাড়ে ১১টা বেজে গিয়েছে। গার্ডের কামরার সামনে দাঁড়িয়ে রেল কর্তৃপক্ষের বাপ-বাপান্ত করতে শুরু করেছেন অনেকেই। কেউ গাল পাড়ছেন বর্তমান মন্ত্রীকে। কেউ বা বলছেন, যা সর্বনাশ তা তো করে গিয়েছেন আগের মন্ত্রীরাই! রেলের এই হালের জন্য কে দায়ী, তা নিয়েও দুই মাতালের প্রবল রাজনৈতিক তর্ক যখন হাতাহাতিতে গড়াতে চলেছে, তখন ভিড় ঠেলে এগিয়ে এলেন রেলেরই এক কর্মী। বললেন, “চিৎকার করে লাভ নেই। আমি টানা দু’দিন ডিউটি করে এখন বাড়ি ফিরছি। স্টেশনে কোনও গার্ড নেই। তাই ট্রেন ছাড়ছে না।”
তা হলে উপায়? বাড়ি ফিরবেন কী করে ট্রেনের যাত্রীরা?
আশ্বস্ত করলেন ওই রেলকর্মীই। “আপ দত্তপুকুর লোকালে যে গার্ড আসছেন তিনিই এই ট্রেন নিয়ে নৈহাটি যাবেন। দত্তপুকুর এখনও শিয়ালদহে ঢোকেনি। ঢুকলে উনি ওই ট্রেন থেকে নেমে এই ট্রেন ছাড়বেন। চিন্তা করবেন না। ট্রেন কিছু ক্ষণের মধ্যেই ঢুকছে।”
সত্যিই তাই! কয়েক মিনিটের মধ্যে ঢুকল আপ দত্তপুকুর লোকাল। সেখান থেকে নেমে গার্ড উঠলেন নৈহাটি লোকালে। ট্রেন ছাড়ল প্রায় শেষ ট্রেনের ছাড়ার সময়ে।
কিন্তু কেন এমন হয়?
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, লোকাল ট্রেন যাঁরা চালান সেই চালক ও গার্ডদের নিয়ে একটি লিঙ্ক তৈরি হয়। মানে, যিনি দূরের স্টেশনে ট্রেন নিয়ে যাবেন, তাঁকে আগে একটি কম দূরত্বের ট্রেন দেওয়া হবে। এখন রাতের নৈহাটি লোকালের যিনি চালক ও গার্ড হবেন তাঁর লিঙ্ক দত্তপুকুর লোকালের সঙ্গে। ওই ট্রেন দেরি করলে এই ট্রেনটিও দেরি করবে। শনিবার এটাই হয়েছে। এই লিঙ্ক নিয়ে গোলমালে রোজ দেরি হচ্ছিল ৯টা বেজে ২০ মিনিটের নৈহাটি লোকালের। ওই ট্রেনের যাত্রীরা হইচই করায় ওই লিঙ্কটি পাল্টে এখন ১১টা ১০-এর নৈহাটি লোকালে করে দেওয়া হয়েছে। এই ব্যাপারে রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী বলেন, “যাত্রীদের এই ভাবে সময় নষ্ট করা যাবে না। লিঙ্ক ঠিক করে তৈরি করার জন্য আজই নির্দেশ দিচ্ছি।”
ট্রেন ছাড়তেই রঙিন দাদা নাকে নস্যি ঠুসে বললেন, “রেলের তো বড্ড টানাটানির সংসার দেখছি! আমি তো ভাবতাম, আমিই শুধু ইধার কা মাল উধার করে সংসার চালাই।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.