ভারত তথা বিশ্ব অর্থনীতি এখনও আমেরিকার উপর কতটা নির্ভরশীল তার প্রমাণ আবারও মিলল। মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভের কর্ণধারের ছোট্ট একটি আশঙ্কাজনক কথায় বিশ্বের তাবড় তাবড় বাজার পড়ল হুড়মুড়িয়ে।
বুল্রা যখন সবে বাজারে ফিরে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে, ঠিক তখনই ঘটল এই ঘটনা। মার্কিন মুলুকের ‘সুব্বারাও’ বেন বারনানকে বুধবার ইঙ্গিত দেন, মার্কিন অর্থনীতিতে উন্নতি হতে থাকলে সেপ্টেম্বর নাগাদ ফেডারেল রিজার্ভ বাজার থেকে বন্ড পুনঃক্রয় কমিয়ে আনতে পারে।
এই একটি কথাতেই যত বিপত্তি। সরকার বন্ড কেনা কমালে বাজারে টাকার জোগান কমবে এই আশঙ্কায় বৃহস্পতিবার ধস নামে বিশ্বের সব নামী বাজারে। জাপানের সূচক নিক্কেই-এর পতন হয় ৭.৩%। ভারতে সেনসেক্স নামে ৩৯০ অঙ্ক। একদিনে লগ্নিকারীদের খোয়াতে হয় ১.৩ লক্ষ কোটি টাকা। লগ্নিকারীদের আশঙ্কা মার্কিন বাজারে টাকার জোগান কমলে ভারতে কমে যেতে পারে বিদেশি লগ্নি। এই দুশ্চিন্তায় বেড়ে যায় ডলারের দামও। বৃহস্পতিবারের ঝটকায় সেনসেক্স আবার চলে আসে ১৯ হাজারের ঘরে। সূচক ২০ হাজার ছাড়ানোয় যাঁরা শেয়ার ও মিউচুয়াল ইউনিট বিক্রি করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন ফের হতাশ হলেন তাঁরা। শুক্রবার অস্থির সেনসেক্স বন্ধ হয় ৩০ পয়েন্ট উপরে।
বারনানকে একা নন, সেনসেক্সের পতনের অপর কারণ কয়েকটি নামী কোম্পানির খারাপ ফল। ২০১২-’১৩ অর্থবর্ষের শেষ তিন মাসে টাটা স্টিলের লোকসান ৬৫২৯ কোটি টাকা। আগের বছর লাভ ছিল ৪৩৩ কোটি টাকা। শেষ তিন মাসে ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্কের লাভ কমেছে ১৮.৫%। অনুৎপাদক সম্পদই লাভ কমার অন্যতম কারণ। তবে দেশের বৃহত্তম এই ব্যাঙ্ক ১০ টাকার শেয়ার পিছু ৪১.৫০ টাকা ডিভিডেন্ড সুপারিশ করেছে। লাভ কমেছে লার্সেন অ্যন্ড টুব্রো এবং জেট এয়ারওয়েজ-সহ বেশ কয়েকটি সংস্থার। এল অ্যান্ড টি বোর্ড অবশ্য প্রতি ২টি শেয়ারে একটি করে বোনাস শেয়ার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে।
এ সপ্তাহে প্রকাশিত হয়ে যাবে বাকি সব ফলাফল। এর প্রভাব থাকবে বাজারে।
সূচকের পতন রুখতে আশার কথা শোনাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। তাঁর বক্তব্য, বাজার ভুল বুঝেছে বারনানকের উক্তিকে। অন্য দিকে, তিনি বলছেন, চলতি আর্থিক বছরে দেশের আর্থিক বৃদ্ধি দাঁড়াবে আগের বছরের তুলনায় ১% বেশি। চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত হবে ২০১২-’১৩ সালের জিডিপি বৃদ্ধির হার। অনুমান, তা থাকবে ৫-৫.৫%-এ। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পূর্বাভাস, চলতি বছরে বৃদ্ধি দাঁড়াবে ৫.৭%। অর্থাৎ কিছুটা উন্নতি হবে, ধরে নেওয়া যেতে পারে। বিদেশি লগ্নিকারীদের তা কতটা আকর্ষণ করবে, বাজারের কাছে সেটাই বড় প্রশ্ন।
কৃষ্ণা গোদাবরী অববাহিকায় বিরাট প্রাকৃতিক গ্যাস ভাণ্ডার আবিষ্কারের খবর প্রকাশ করেছে রিল্যায়ান্স ইন্ডাস্ট্রিজ। কোম্পানির শেয়ারের উপর এর কী প্রভাব পড়ে তাই এখন দেখার।
ভারতীয় টাকার তুলনায় মার্কিন ডলারের দাম আবার চড়া হয়ে উঠেছে। ডলার পিছু দাম পৌঁছেছে ৫৫.৬৪ টাকায়। এতে রফতানিকারীদের সুবিধা হলেও সমস্যায় পড়বে আমদানি নির্ভর শিল্প। বেশি টাকা গুনতে হবে বিদেশ ভ্রমণ এবং বিদেশে পড়াশোনা বাবদ। গত সপ্তাহে অল্প হলেও উঠেছে সোনার দর। ডলারের দাম বাড়লে তার প্রভাব থাকবে সোনার দামে। লগ্নিকারীরা লক্ষ রাখুন সোনার আন্তর্জাতিক দামের উপরেও।
|