খারাপ রাস্তায় প্রায়ই বিকল হচ্ছে যন্ত্রাংশ। যাত্রীদের রোষের মুখে পড়তে হচ্ছে বাসকর্মীদের। বারবার যন্ত্রাংশ সারাতে খরচও হচ্ছে প্রচুর। প্রায় আড়াই বছর ধরে এমন পরিস্থিতি চললেও হুঁশ নেই প্রশাসনের। এসটিকেকে রোড নিয়ে এমন ক্ষোভ বারবার জানিয়ে আসছেন বাসমালিকেরা। অভিযোগ, প্রশাসন কর্ণপাত করছে না। তাই আজ, সোমবার থেকে অনির্দিষ্ট কাল তাঁরা বাস না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন মালিকেরা। প্রশাসনের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, কয়েক দিনের মধ্যেই রাস্তা সারানো হবে।
সপ্তগ্রাম-ত্রিবেণী-কালনা-কাটোয়া (এসটিকেকে) রাস্তায় কাটোয়া থেকে ছাতনি পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার অংশ দীর্ঘ দিনই বেহাল পড়ে রয়েছে। নানা এলাকায় বড় বড় গর্ত। অনেক জায়গায় পিচের লেশমাত্র নেই। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাস্তার এমন দশার জন্যই মাঝে-মধ্যে গাড়ি উল্টে যায়। |
ছোটখাট দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে। কাটোয়া বাস মালিক সমিতির নেতা নারায়ণচন্দ্র সেনের দাবি, “প্রশাসনের কাছে আমরা বারবার গিয়েছি। রাস্তা সারানোর দাবিতে গত কয়েক মাসের মধ্যে তিন বার বাস বন্ধও করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এলাকার মানুষের স্বার্থে ফের বাস পথে নামিয়েছি আমরা। তা সত্ত্বেও কারও টনক নড়েনি। সোমবার থেকে আর বাস না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে জানিয়েও কোনও লাভ হয় না বলে এ বার আর এই সিদ্ধান্তের কথা প্রশাসনকে জানাচ্ছি না।”
মাধ্যমিকের ফল বেরোনোর দিনে এমন ধর্মঘটে হয়রানির আশঙ্কা করছেন কাটোয়া-সহ নানা এলাকার বাসিন্দারা। এই রাস্তা দিয়ে কাটোয়া-মালডাঙা, নদিয়া-বীরভূম-বর্ধমানের সেংযাগকারী বাস চলাচল করে। রবিবার থেকেই অনেক বাস রাস্তায় নামেনি বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। ওই রাস্তায় দূরপাল্লা ও লোকাল মিলিয়ে ৭০-৭৫টি বাস যাতায়াত করে। এ ছাড়াও পূর্ত দফতরের হিসেব অনুযায়ী, প্রতি দিন প্রায় চারশো মালবাহী গাড়িও চলে। বীরভূম থেকে পাথর, বালি ইত্যাদিও এখান দিয়ে হুগলি ও কলকাতা সরবরাহ হয়। রাস্তা খারাপ থাকায় তারাও সমস্যায় পড়ে। লরি বা বাস খারাপ হয়ে পড়লে যানজট তৈরি হয়। |
স্কুল শিক্ষিকা মীরা স্বর্ণকার, ব্যবসায়ী অসিত সাহাদের কথায়, “এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে ইষ্টনাম জপ করতে করতে যেতে হয়। কবে থেকে শুনছি, রাস্তা না কি সারানো হবে। কিন্তু কিছুই তো হচ্ছে না।”
রাস্তা সারানোর দাবিতে খাজুরডিহি গ্রামের কাছে মাসখানেক আগে পথ অবরোধ করে কংগ্রেস। বাসমালিকদের দাবি ছিল, রাস্তা ন্যূনতম সংস্কার করে দেওয়া হোক। প্রশাসনকে বারবার জানিয়েও কোনও ফল হয়নি বলে তাঁদের অভিযোগ। আরও অভিযোগ, কাটোয়া মহকুমাশাসকের অফিসে কিছু দিন আগে একটি আলোচনায় ঠিক হয়েছিল, অবৈধ মোটরযান কোনও যাত্রী পরিবহণ করবে না। কারণ, সেগুলির জন্য বাসের ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু কয়েক দিন না কাটতেই ফের নিয়ম ভেঙে যাত্রী পরিবহণ করছে মোটরযানগুলি। এ নিয়ে বারবার অভিযোগ জানালেও প্রশাসনের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ধর্মঘট ডাকার পিছনে সেটিও একটি কারণ বলে বাসমালিকদের দাবি।
প্রশাসন অবশ্য জানিয়েছে, ১৯ কিলোমিটার রাস্তা সারানোর জন্য ত্রিশ কোটি টাকা ইতিমধ্যেই বরাদ্দ হয়েছে। ঠিকাদারও নিয়োগ হয়ে গিয়েছে। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে কাজ শুরু করতে হবে বলে ঠিকাদারদের নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা। |