দু’দফায় নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। কিন্তু এ বার তাঁর পদ সংরক্ষণ করা হচ্ছে মহিলাদের জন্য। সে কারণে জেলা পরিষদের সভাধিপতি উদয় সরকারকে এ বার আর প্রার্থীই করা হচ্ছে না, এমনটাই জানিয়েছেন জেলা সিপিএম নেতৃত্ব। শুধু সভাধিপতি নন, জেলা পরিষদের অন্য ন’জন কর্মাধ্যক্ষেরও অনেককে এ বার আসন সংরক্ষণের কারণে প্রার্থীপদ দেওয়া যাবে না বলে জেলা বামফ্রন্ট সূত্রে খবর।
সভাধিপতির পদ মহিলা সংরক্ষিত হলেও উদয়বাবুকে তো অন্য পদে প্রার্থী করা যেতে পারে? সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডলের বক্তব্য, “উনি দু’টি দফায় সভাধিপতির দায়িত্ব সামলেছেন। ওঁকে কী ভাবে সাধারণ সদস্য হিসেবে দাঁড় করানো সম্ভব! তাই উদয়বাবুকে কোনও আসনেই প্রার্থী করা হচ্ছে না। তবে ভোটের প্রচারে তাঁকে যথাসম্ভব কাজে লাগাতে চাইছি আমরা।” উদয়বাবু জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। শুধু উদয়বাবু নন, আসন মহিলা সংরক্ষিত হয়ে পড়ায় প্রার্থী না হতে পারার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে জেলা পরিষদের শিশু ও মহিলা স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ তথা আরএসপি নেতা স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও। আরএসপি-র জেলা সম্পাদক অঞ্জন মুখোপাধ্যায় বলেন, “আসন সংরক্ষণের কারণে স্বপনবাবু এ বার প্রার্থী হচ্ছেন না। আমরা ঠিক করেছি, তাঁকে ভোটের প্রচারে নানা জায়গায় পাঠানো হবে।” |
সিপিএম, মার্কসবাদী ফরওয়ার্ড ব্লক, সিপিআই এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের যে সব কর্মাধ্যক্ষেরা ছিলেন, তাঁরা যে ভোটে দাঁড়াচ্ছেন, এ কথা তাঁদের দলের নেতৃত্ব স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না। বন ও ভূমি স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন সিপিআইয়ের মঞ্জু বসু। জেলা পরিষদ সূত্রে খবর, বিধানসভা ভোটের পর থেকে তিনি দফতরে আসাই প্রায় বন্ধ করে দিয়েছেন। তাঁকে এ বার প্রার্থী করা হবে কি না, সে প্রশ্নে দলের জেলা কমিটির সম্পাদক আর সি সিংহ বলেন, “ওঁর আসনটি তফসিলি জাতির মহিলার জন্য বলে সংরক্ষিত। তাই তাঁকে এ বার আমরা প্রার্থী করতে পারব কি না, বলতে পারছি না।” শরিক দলের নেতারা প্রকাশ্যে এই কর্মাধ্যক্ষদের প্রার্থীপদ দেওয়া হবে কি না, সে নিয়ে এখনই মন্তব্য করতে চাননি। তবে ওই সব দলেরই নানা সূত্রে খবর, জনমানসে ‘ভাবমূর্তি’ ফেরাতে এ বার নতুন প্রার্থীদের দাঁড় করানোর চিন্তাভাবনা রয়েছে।
বাম শরিকেরা জেলা পরিষদের ৭৫টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে ঐক্যমত হয়েছে দাবি করে আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডলের বক্তব্য, “ঠিক হয়েছে, সিপিআই, ফরওয়ার্ড ব্লক এবং আসএসপি তিনটি করে আসনে প্রার্থী দেবে। মার্কসবাদী ফরওয়ার্ড ব্লক দেবে দু’টি আসন। বাকি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সিপিএমের প্রার্থীরা।” কয়েকটি শরিক দলের নেতাদের যদিও দাবি, সামান্য কিছু আসনে সমঝোতা আটকে রয়েছে। আসন সমঝোতা নিয়ে বৈঠকে ফরওয়ার্ড ব্লকের পক্ষে যোগ দিতে চুঁচুড়া থেকে বর্ধমানে আসছেন দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা প্রাক্তন মন্ত্রী নরেন দে। তিনি বলেন, “সামান্য কয়েকটি আসনে আমাদের মধ্যে সমস্যা আছে। তবে তা মিটে যাবে।” একই বক্তব্য আরএসপি-র অঞ্জনবাবু এবং সিপিআইয়ের আর সি সিংহেরও।
প্রতি নির্বাচনের আগে আসন সমঝোতার পরে দলের জেলা কমিটির দফতরে হাতে হাত ধরে দাঁড়িয়ে ঐক্যের বার্তা দেন বাম নেতারা। এ বারও কি সেই ছবি দেখা যাবে? আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডল বলেন, “এর উত্তর ৩১ মে-র পরেই দিতে পারব।” |