দীর্ঘ লড়াই শেষে দৃষ্টিহীন কোটাতেই পড়াবেন পাপ্পু
ন্ধকার হাতড়ে আলোতে পৌঁছলেন পাপ্পু মণ্ডল। তাঁর অনমনীয় লড়াইয়ের কাছে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি), তথা রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতরকে হার মানতে হল। পাপ্পু প্রমাণ করে দিলেন, তিনি দৃষ্টিহীন কোটাতেই সরকারি স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পাওয়ার যোগ্য।
২০১১ সালে যে এসএসসি কর্তৃপক্ষ শিক্ষক-প্যানেল থেকে তাঁর নাম কেটে দিয়েছিলেন, তাঁরাই আবার হাওড়ার দেউলগ্রাম এইচএমবিকে হাইস্কুলে বাংলার সহকারী শিক্ষকের পদে যোগ দেওয়ার জন্য তাঁর কাছে নিয়োগপত্র পাঠিয়েছেন গত ২৪ মে।
হাওড়ার শ্যামপুরের ঝুমঝুমি গ্রামের বাসিন্দা পাপ্পু মাধ্যমিক পরীক্ষায় দৃষ্টিহীন ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে রাজ্যে প্রথম হয়েছিলেন। ডাক্তারদের বিচারে, প্রায় জন্মান্ধ পাপ্পু ৭০ শতাংশেরও বেশি প্রতিবন্ধী ছিলেন। তাঁর বা চোখে কোনও দৃষ্টি ছিল না। ডান চোখও ছিল কার্যত দৃষ্টিহীন। এই প্রতিবন্ধকতা নিয়েই বরাবরের কৃতী পাপ্পু যখন ২৭ বছর বয়সে স্কুল শিক্ষকের চাকরি জুটিয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন, ঠিক তখনই তাঁর দৃষ্টিহীন পরিচয়কে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেয় স্কুলশিক্ষা দফতর। শিক্ষকের বাছাই তালিকা থেকে তাঁর নামও কেটে দেওয়া হয়!
কেন? সরকারি সূত্রে খবর, ২০১০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন পাপ্পু। দেউলগ্রাম এইচএমবিকে হাইস্কুলে বাংলার সহকারী শিক্ষক পদের জন্য তাঁকে বাছাই করা হয়। রুটিন মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য তাঁকে পাঠানো হয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিক্যাল বোর্ডে। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, অস্ত্রোপচার করে তাঁর ডান চোখের দৃষ্টি ফেরানো সম্ভব। সেই মতো বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পরে ডান চোখে দৃষ্টি ফিরে পান পাপ্পু।
ডান চোখে দৃষ্টি ফিরে পাওয়ার পর পাপ্পু মণ্ডল। ছবি: সুব্রত জানা
কিন্তু জন্মান্ধ যুবকের জীবনে আলোয় ফেরার সেই দিনগুলিতেই নেমে আসে অমাবস্যার অন্ধকার। দৃষ্টি ফেরার খবর জানার পরেই এসএসসি কর্তৃপক্ষ জানান, পাপ্পু এখন আর দৃষ্টিহীন নন। অতএব দৃষ্টিহীন কোটায় শিক্ষকের চাকরি পেতে পারেন না তিনি। পাপ্পুর নাম এসএসসি-র দক্ষিণাঞ্চলের প্যানেল থেকে বাতিলও করে দেওয়া হয়।
খবর পেয়ে প্রথমে বাঁচার ইচ্ছেটাই হারিয়ে ফেলেছিলেন পাপ্পু। পরে বুঝেছিলেন, গুটিয়ে গেলে চলবে না। এ বার শুরু হয় তাঁর জীবন-যুদ্ধের দ্বিতীয় ইনিংস। প্রথম দিকে বার বার স্কুল শিক্ষা দফতর এবং এসএসসি কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েও ফল পাননি। পাপ্পুর হয়ে স্কুল শিক্ষা দফতরের কাছে আবেদন করেন রাজ্যের প্রতিবন্ধী কমিশনার মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতেও সাড়া মেলেনি। বাধ্য হয়ে ২০১২-র ডিসেম্বরে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ওই যুবক। বাড়িতে বসেই তিনি বলে চললেন, “২০০১ সালে সরকারি হাসপাতালই দৃষ্টিহীনতার সার্টিফিকেট দিয়েছিল। তারা এক বারও বলেনি, আমার একটা চোখ অপারেশন করে ঠিক হতে পারে। বললে আমাকে দৃষ্টিহীন হয়ে জীবনের অর্ধেকটা সময় কাটাতে হত না। এখন, এত কষ্ট করে পড়াশোনা করার পর সরকার বলে দিচ্ছে আমি আর দৃষ্টিহীন কোটায় চাকরি পাব না! এটা ন্যায় বিচার কি না, আদালতে সেই প্রশ্নই তুলেছিলাম আমি।”
এই আবেদনের ভিত্তিতে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমিত্র পাল স্কুলশিক্ষা দফতর তথা এসএসসি কর্তৃপক্ষকে বিষয়টিকে মানবিকতা ও সহানুভূতির সঙ্গে দেখার নির্দেশ দেন। তার ভিত্তিতে গত ১১ এপ্রিল নিজেদের দফতরে শুনানির আয়োজন করেন এসএসসি কর্তৃপক্ষ। তাতে জয় হয় পাপ্পুর। ঠিক হয়, দৃষ্টিহীন কোটাতেই শিক্ষকতার চাকরিতে যোগ দেবেন পাপ্পু। বিষয়টি নিয়ে এসএসসি-র চেয়ারম্যান চিত্তরঞ্জন মণ্ডল বলেন, “যা বলার মন্ত্রী বলবেন।” শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর উচ্ছ্বসিত জবাব, “গত সরকারের আমলে পাপ্পুর উপর অবিচার হয়েছিল। আমাদের সময়ে ন্যায় দিতে পারলাম। এসএসসি-র কর্তাদের আমি সাধুবাদ জানাচ্ছি। তাঁরা ব্যবস্থা না নিলে আমি নিজে পাপ্পুর হয়ে সওয়াল করতাম।”
সব শুনে লাজুক হেসে পাপ্পুর প্রতিক্রিয়া, “খবরটা পেয়ে মনে হচ্ছে এই প্রথম পৃথিবীর সব আলো আমার একটা চোখে এসে পড়ল।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.