বর্ধমানের কাটোয়ায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, বীরভূমের লোবায় খোলামুখ খনির পরে এ বার জমি-জট হাওড়ায় রানিহাটির ফাউন্ড্রি পার্কেও।
রাজ্য সরকার শিল্পসংস্থার জন্য জমি অধিগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় শিল্পায়নের ভবিষ্যৎ নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছে। শিল্পসংস্থা সরাসরি জমি কিনতে গেলে দালালরাজ জাঁকিয়ে বসবে এবং নানা বেনিয়ম হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিরোধী থেকে অর্থনীতিবিদ, অনেকেই। রানিহাটিতেও সেই বেনিয়মেরই অভিযোগ উঠেছে।
রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম এবং কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রকের যৌথ উদ্যোগে হাওড়ার পাঁচলায় এই ফাউন্ড্রি পার্ক তৈরি করতে চাইছে ইন্ডিয়ান ফাউন্ড্রি অ্যাসোসিয়েশন (আইএফএ)। প্রকল্পের খরচ প্রায় ১৪৫ কোটি টাকা। যার ৭৫ ভাগ দেওয়ার কথা শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রকের। বাকি টাকা খরচ করার কথা আইএফএ-র। পরিকাঠামো গড়ে ওঠার পরে তাদের সদস্য শিল্পসংস্থাগুলিও কারখানা গড়বে। আইএফএ-র দাবি, প্রকল্প পুরোপুরি রূপায়িত হলে ৩০ হাজার শ্রমিক সরাসরি কাজ পাবেন। পরোক্ষ কর্মসংস্থান হবে প্রায় এক লক্ষ শ্রমিকের।
রানিহাটির এই ফাউন্ড্রি পার্কের জন্য জমি প্রয়োজন প্রায় ৯২৪ একর। ২০০৬ থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। বাম আমলেই ৭৭ একর জমি সংগ্রহ করে আইএফ-এর হাতে তুলে দেয় শিল্পোন্নয়ন নিগম। বাকি জমি আইএফএ-রই সংগ্রহ করার কথা। এখনও পর্যন্ত তারা জোগাড় করতে পেরেছে মাত্র সাড়ে চারশো একর। সেই জমিতে রাস্তাঘাট, প্রশাসনিক ভবন এবং একটি শিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি হয়েছে। ২০১২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম পর্যায়ে পার্ক-এর উদ্বোধনও করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। |
কিন্তু রাজ্যের ভূমি সংস্কার আইন অনুযায়ী, কোনও শিল্পসংস্থা বা শিল্প সংগঠন ২৪ একর পর্যন্ত জমি নিজেদের নামে সংগ্রহ করতে পারে। তার বেশি জমি কিনতে গেলে ভূমি সংস্কার আইনের ১৪-ওয়াই ধারায় সরকারের কাছ থেকে আগাম ছাড় নিতে হয়। জমি কেনার আগে আইএফএ সেই ছাড় নেয়নি। এই জটিলতা কাটাতে রাজ্যের শিল্প দফতর ঠিক করে, আইএফএ-র কেনা জমির ২৪ একর বাদ দিয়ে পুরোটাই সরকার খাস করে দেবে। তার পরে তা আইএফএ-কে ন্যূনতম মূল্যে লিজ দেওয়া হবে। হাওড়া জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর আইএফএ-কে তাদের কেনা জমির বিবরণও
জানাতে বলে।
গোল বাধে এর পরেই। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের নজরে আসে, আইএফএ-র দখলে থাকা জমির কাগজপত্রে বিস্তর গোলমাল রয়েছে। অনেক জমি মিউটেশনের যোগ্যই নয়। আইএফএ কর্তৃপক্ষও তা স্বীকার করছেন। সংস্থার এক কর্তা জানান, জমি কিনতে গিয়ে তাঁরা স্থানীয় দালালদের খপ্পরে পড়েছিলেন। তাঁরাই রামের জমি শ্যামের নাম করে আইএফএকে বিক্রি করেছে। জোর করে জমি নেওয়ার অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেন আইএফএ-এর তরফে প্রকল্পটির মুখ্য নির্বাহী আধিকারিক তাপস চট্টোপাধ্যায়।
চাষিদের একাংশ কিন্তু অভিযোগ করছেন, তাঁদের জমি জোর করে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য করেছে দালালেরা। এক জনের জমি অন্য জন বিক্রি করে টাকা নিয়েছেন বলেও কিছু চাষির অভিযোগ ছিল। অবস্থা সামাল দিতে দু’টি স্ক্রিনিং কমিটি গড়েছে হাওড়া জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর। অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) অশোককুমার দাস বলেন, “কাগজপত্র পরীক্ষা করে কোন জমিগুলি মিউটেশনের যোগ্য এবং কোনগুলি নয়, তার রিপোর্ট স্ক্রিনিং কমিটিকে দ্রুত জমা দিতে বলা হয়েছে। যে সব জমি মিউটেশনের যোগ্য নয়, সেগুলি আইনসিদ্ধ করার জন্য আইএফএ-কে বলা হবে।”
তাপসবাবু বলেন, “এত বেশি পরিমাণ জমি সরাসরি কিনতে গেলে সমস্যা তো হবেই। কিছু জমির কাগজপত্র ঠিক নেই। সেগুলি আমরা ঠিক করার চেষ্টা করছি। আশা করছি, আগামী বছরের গোড়ার দিকে কারখানার শেড তৈরি করতে পারব।” শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, আইএফএ-র কর্তাদের আলোচনার জন্য ডাকা হয়েছে। জট খোলে কি না, তা সম্ভবত আগামী মাস ছয়েকের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। |