...তেরো বছর পর আজ সত্যিই মনে হচ্ছে আমার সব চেষ্টা একদম জলে গিয়েছে। সংস্কার ঘটিয়ে সিস্টেমটার উন্নতি করতে চেয়েছিলাম। তাই কে মাধবনকে ম্যাচ গড়াপেটার ব্যাপারে নিজের মতো করে তদন্ত চালানোর স্বাধীনতা দিয়েছিলাম। আসলে আমাদের নিজেদের কোনও কায়েমি স্বার্থ ছিল না। আর ছিল না বলেই সেই সময় আমরা যারা ভারতীয় বোর্ডের মাথা ছিলাম, তারা গড়াপেটার মোকাবিলায় পুরো রাস্তাটা যেতে পেরেছিলাম।
এন শ্রীনিবাসনের কাছে সেই প্রত্যাশা করবেন না। ওর ব্যক্তিগত স্বার্থ এখানে বিশাল। ও আর ওর জামাই যা করেছে, সেটা অবিশ্বাস্য! ওরা সব সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে। ভাবলে মাথা ভোঁ ভোঁ করবে। আরে বাবা যে মামলায় তুমি বিচারক, সেই মামলায় তুমিই কি না অপরাধী! তুমি গঙ্গা পরিষ্কার করার কথা বলছ। প্লেয়ারদের মধ্যে সততা আমদানির কথা বলছ। আমি বলি কী, আগে গঙ্গোত্রীটাকে শুদ্ধ করোতার পর না হয় গঙ্গা সাফাই অভিযান নিয়ে পড়বে। সবার আগে কর্তাদের সৎ করে তোলো।
ভারতীয় বোর্ড আর সিএসকে-তে যা হচ্ছে সেটা সব মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে। আজ শ্রীনি দাবি করছে যে, ও নাকি কিছুই জানত না! এর মানে কী? দলটা তোমার। জামাই তোমার। অথচ তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে বলো যে তুমি কিচ্ছু জানতে না!
শুনছি শ্রীনি নাকি কাল মাঠে আইপিএল চ্যাম্পিয়নদের নিজের হাতে বিজয়ীর ট্রফিটা দিতে চায়। এর থেকে বড় মস্করা আর কিছু আছে বলে মনে করতে পারছি না। শ্রীনিকে ইস্তফা দিতেই হবে। গোটা ঘটনার নৈতিক দায়িত্ব স্বীকার করে নিয়ে নিজের দখলদারি থেকে ভারতীয় ক্রিকেটকে মুক্ত করে দিতে হবে। ভারতীয় বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেটকে ও পঙ্কিল, লজ্জাজনক আর ঘৃণা জাগানো একটা জায়গায় পরিণত করেছে।
এই ন্যক্কারজনক কেলেঙ্কারির সঙ্গে চেন্নাই সুপার কিংস টিমটা জড়িয়ে ভাবলে লজ্জা হচ্ছে। একটু ভুল বলে ফেললাম। তদন্তে এখনও পর্যন্ত যা যা বেরিয়ে এসেছে, তাতে শুধু চেন্নাই সুপার কিংস নয়, আইপিএলের বেশির ভাগ দলই এতে জড়িত বলে মনে হচ্ছে। এই অবস্থায় চেন্নাইকে ফাইনাল খেলতে দেওয়াটা সব থেকে বড় প্রহসন। টিমটাকে এক্ষুনি বাতিল করে দিয়ে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা উচিত।
আমার মনে হয় ধোনিও এই সবে নিজের নৈতিক দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না। ওর যদি এতটুকু আত্মসম্মান থাকে তা হলে অবিলম্বে ইন্ডিয়া সিমেন্টস-এর আরামদায়ক চাকরি থেকে ইস্তফা দিক। আমি তো এটাই ভেবে পাচ্ছি না যে তুমি কী করে ভারত অধিনায়ক আর চেন্নাই সুপার কিংসের অধিনায়ক হওয়ার পাশাপাশি ইন্ডিয়া সিমেন্টসের মার্কেটিং ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে থাকতে পারো! |
গুরুনাথের আইনজীবীর ক্ষেত্রেও একই কথা বলব। ওর হয়ে যে মামলা লড়ছে, সে বোর্ডের আইনজীবী হওয়ার পাশাপাশি চেন্নাই সুপার কিংসেরও আইনজীবী এবং তামিলনাড়ু ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট। এটা একদম ছাপ মারা শ্রীনি স্টাইল। ও যা-ই করে তাতে একটার পর একটা প্যাঁচ জড়ানো থাকে। থাকে পরতে পরতে নোংরামি।
হ্যাঁ, এটা ঠিক যে ভারতীয় বোর্ডের প্রেসিডেন্ট পদে থাকার সময় আমি ভারতীয় ক্রিকেটকে পরিষ্কার করেছিলাম। কিন্তু এক মুহূর্তের জন্যও কল্পনা করতে পারিনি একদিন শ্রীনি এই প্রতিষ্ঠানকে নিজের হাতে এমন বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেবে। একটা ব্যাপারে অবশ্য আমার মনে আর কোনও সংশয় নেই। পরিষ্কার বুঝছি, আইপিএল পরিচালনার কাজটাকে ভারতীয় বোর্ডের এক্তিয়ারের বাইরে নিয়ে যেতে হবে। একটা স্বাধীন সংস্থা আইপিএল পরিচালনার কাজটা করুক।
আর শ্রীনিকে বলব দ্যাখো, ভারতীয় ক্রিকেটের তুমি কী দশা করেছ। আজহার তো শুধু একজন প্লেয়ার ছিল। কিন্তু তোমার জামাই কর্মকর্তা হয়ে যে ভাবে এ সবের মধ্যে জড়িয়েছে, তাতে আজহারকে ওর সামনে ছেলেমানুষ মনে হবে। মনে হবে বাচ্চা। হ্যাঁ, এটাই এই মুহূর্তের সব থেকে বড় সত্য। শ্রীনি, এ বার দয়া করে সরে যাও; দোহাই তোমার... |