গত বার আইপিএল ফাইনালের আগে পর্যন্ত চেন্নাই শহরের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক দারুণ কিছু ছিল না। ওখানকার ইডলি, সাদা দোসা কখনওসখনও মিক্স-ভেজ উত্থাপম খেতে দৌড়তাম। কিন্তু আমার ভেতরের ব্যাটসম্যানটা চিপকে মোটেও দৌড়ত না। ওই ঐতিহাসিক ক্রিকেট মাঠে সমস্ত ফর্ম্যাট মিলিয়ে আমার মাত্র একটা হাফসেঞ্চুরি আছে।
গত বার আমাদের কেকেআর চেন্নাইয়ে ফাইনাল খেলতে পৌঁছনোর পর তাজ করমন্ডলে পা দিয়েই আমি সটান ওখানকার বুফে রেস্তোরাঁয় ছুটেছিলাম। কিন্তু আইপিএল ফাইনাল খেলতে এসেছি ভেবে কোনও মশলাদার খাবার না খেয়ে সামান্য ডাল-রুটি, চিকেন টিক্কা আর একটা লেমনেড খেয়ে শেরাটন পার্ক হোটেলে গিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী অধিনায়ক ধোনির সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে বসেছিলাম। আপনাদের বলে বোঝাতে পারব না, ফাইনালের সেই প্রি-ম্যাচ প্রেস কনফারেন্সে যেতে রুপোলি ইনোভা-র মধ্যে আমি কী পরিমাণ গর্বের সঙ্গে সিটে হেলান দিয়ে বসে গিয়েছিলাম!
সাংবাদিক সম্মেলনে ধোনি আর আমি আইপিএল ট্রফিটার দু’দিকে বসেছিলাম। চ্যাম্পিয়নশিপ ট্রফিটা আমি আগে কয়েক বার দেখেছিলাম। কিন্তু সে দিনের মতো অত কাছ থেকে কখনও দেখিনি। সত্যি বলতে কী, ট্রফিটা আমি শুধু দেখছিলাম বললে কিছুই বলা হয় না। অত লোকের সামনেই নির্লজ্জের মতো হাঁ করে গিলছিলাম! সাংবাদিকদের প্রথম দু’টো প্রশ্ন ধোনির জন্য ছিল। ফলে আমি সে দিকে মাথাই না দিয়ে ট্রফির গায়ের লেখাটা এক মনে দেখছিলাম “যত্র প্রতিভা অবসরঃ প্রাপ্নোতি।” কী তার মানে কিছুই বুঝিনি। পরে যখন আমাকে ওটার ইংরেজি তর্জমা করে দেওয়া হল বুঝলাম “প্রতিভা যেখানে বিকশিত হওয়ার সুযোগ পায়।” |
“তো, গৌতম, জাতীয় দলে তোমার অধিনায়ক ধোনির বিরুদ্ধে এখানে বিগ ফাইনাল খেলতে এসে কেমন লাগছে?” খুব নামী এক জন সাংবাদিকের প্রশ্নে ট্রফি নিয়ে আমার দীর্ঘ ভাবনাটা সে দিন ভেঙে ছিল। আমার মনে হয়, আমি উত্তরে বলেছিলাম, এক জন খেলোয়াড় মাঠে নামে জিততে। বন্ধুত্ব করতে নয়।
ম্যাচের দিনের একঘেয়েমিটা কেটেছিল বিকেলের দিকে আমাদের টিম মিটিংয়ে চালানো একটা স্পেশ্যাল ভিডিও-তে। আমরা প্রত্যেকে দেখে অবাক হয়েছিলাম যে, সেই ভিডিওতে আমাদের প্রত্যেক প্লেয়ারের পরিবারের লোকেরা ফাইনালে আমাদের কাছে জয় প্রার্থনা করেছিলেন। সেই ভিডিওতে লক্ষ্মীরতনের বাবার বলা কথাগুলো আমার খুব ভাল লেগেছিল। দুঃখিত, এর চেয়ে বেশি কিছু ফাঁস করতে পারব না। কারণ ওটা টিম মিটিংয়ের একটা বিষয় ছিল। তবে আমি মনে করি ওই ভিডিওটা সত্যিই বিগ গেমের জন্য আমাদের মুডটা তৈরি করে দিয়েছিল।
তার পরে টিম বাসে আসল মঞ্চের দিকে যাওয়া। বড় রান তাড়া করতে নেমে আমি তাড়াতাড়ি আউট হয়ে যাওয়ায় প্রথমে ভীষণ ভেঙে পড়েছিলাম। পরে ভাবলাম, আরে, এটা তো চিপক! এখানে আমি খুব কমই সফল হয়েছি, কিন্তু আমার টিম বেশির ভাগ সময়েই জিতেছে। তার পরে বিসলা আর কালিস কী ভাবে কেকেআরকে জয়ের দিকে নিয়ে গিয়েছিল সেটা তো সবারই জানা। চেন্নাইয়ের সঙ্গে আমার সুসম্পর্কও আবার এক বার ঘটল।
এ বার কাকতালীয়ই যে, আজ কলকাতায় আমাদের কেকেআরের হোম-এ এমএসডি ওর টিমকে নেতৃত্ব দেবে। আমার মতে, ইডেনের সঙ্গে এমএসডি-র সম্পর্ক চিপকের সঙ্গে আমার সম্পর্কের চেয়ে ঢের ভাল। দেখা যাক, সেটা ও আরও গভীর করতে পারে কি না। নাকি এ বছরও আমরা একটা নতুন আইপিএল চ্যাম্পিয়নকে পাব।
ফাইনালের দু’দলের জন্যই আমার শুভেচ্ছা থাকল। |