বায়ার্ন: ২ (মান্ডজুকিচ, রবেন)
বরুসিয়া: ১ (গুন্দোগান-পেনাল্টি) |
কোনও খেলাকে জনপ্রিয় করে তোলে তার রাজকীয়তা। ঐতিহাসিক ফুটবল গ্রাউন্ড ওয়েম্বলিতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের আগে আলেকজান্দ্রীয় পোশাক পরিয়ে মাঠের ভেতর দু’দল মানুষকে দিয়ে যে চমৎকার অনুষ্ঠানটা করল উয়েফা, তার কী রাজকীয়তা! কী রং! এক দলের গায়ে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের ফ্লুরোসেন্ট হলুদ-কালো জামা। অন্য দলটার গায়ে বায়ার্ন মিউনিখের জমকালো লাল জার্সি। কিন্তু ম্যাচে দু’টো জার্মান টিমের জার্সিতেই সেই রাজকীয়তা যেন দেখা গেল না। সত্যি বলতে কী, রাত জেগে খেলা দেখতে দেখতে আক্ষেপ হচ্ছিল এত বড় মঞ্চে একটা মেসি বা একটা রোনাল্ডো নেই!
ম্যাচ শেষ হওয়ার এক মিনিট আগে রবেনের গোলে বায়ার্ন পঞ্চম বার ইউরোপ সেরা হওয়ায় সবার আগে বরিস বেকারের কথা মনে পড়ছিল। টেনিস কিংবদন্তির চোখে বায়ার্নের এই ডাচ উইঙ্গার হল পরশ পাথর। যা ছোঁয় তা-ই সোনা হয়ে যায়! এ দিন ৮৯ মিনিটে রবেনের গোলটা তো বায়ার্নের কাছে ঠিক সেটাই! যে ‘সোনা’র গোল এক যুগ পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি এনে দিল বায়ার্নকে। |
ফাইনাল শুরুর আগে ওয়েবসাইট ঘাঁটার পাশাপাশি টিভিতে শুনছিলাম বালাক, জিদানের মতো প্রাক্তন সুপারস্টার ফুটবলারদের সঙ্গে আমাদের ভাইচুংয়ের দেওয়া ম্যাচের সম্ভাব্য স্কোরলাইন। তিন জনই বায়ার্ন জিতবে বলল। বালাক: ৩-০। জিদান: ১-০। ভাইচুং ২-০/৩-১। সঙ্গে জিদানের একটা কথা খুব তাৎপর্যের বরুসিয়া এই পর্যায়ের যুদ্ধে প্রায় নতুন শক্তি। তবে নতুন বলে সেই শক্তিতে কামড় নেই সেটা নয়। এবং প্রথম কুড়ি মিনিটে ক্লিয়ার সুযোগ বলতে কিন্তু তিনটেই বরুসিয়ার। লেওয়ানডস্কির একটা দুর্দান্ত দূরপাল্লার শট আর একটা বক্সের মধ্যে থেকে নেওয়া ফ্লিক চমৎকার বাঁচাল ন্যয়ার। আর রয়েস তো ওর ডাকনাম ‘রোলস রয়েস’-এর মতোই মসৃণ গতিতে বায়ার্ন ডিফেন্স চিরে বেরিয়ে গোলকিপারকে একা পেয়েও বাইরে মেরে বসল।
বায়ার্নের আক্রমণের প্রথম আঁচ টের পেতে পেতে পঁচিশ মিনিট কাবার হয়ে যায়। অথচ ওদেরই মাঠে বেশি তেতে থাকতে দেখার আশায় ছিলাম। ম্যাচের আগে ওয়ার্ম আপেই মান্ডজুকিচের যে রকম কড়া ট্যাকলে সোয়াইনস্টাইগারকে রিজার্ভ বেঞ্চে গিয়ে শুশ্রূষা করতে হয়েছিল! যে কারণে সোশ্যাল নেটওয়ার্কগুলোতে ফাইনালের আগে বায়ার্ন সমর্থকদের আতঙ্কিত সব পোস্ট ‘মান্ডজুকিচের ট্যাকল না বার্য়ান মিউনিখের কাছে ভয়ঙ্কর ধাক্কা হয়!’
তবে সেই মান্ডজুকিচের চকিত হেডটাই বায়ার্নের পক্ষে প্রথম ক্লিয়ার সুযোগ। এর পর রবেন তিন-তিন বার একা গোলকিপারকে পেয়েও তাকে টপকাতে পারল না। প্রতিবারই বরুসিয়া কিপার ওয়াইডেনফিলার জয়ী। যাঁকে কিনা অনেক ফুটবল-পণ্ডিত বরুসিয়ার দুর্বলতা বলে ভাবছিল। যেমন বায়ার্নের ‘হোল’ ভাবা হচ্ছিল আহত বাডস্টুবারের বদলে সেন্টার ব্যাক খেলা বোয়াতেং-কে। আবার কাউন্টার অ্যাটাকে লেওয়ানডস্কি আর ব্লাকিজাউস্কির থেকে দারুণ সেভ করল ন্যয়ার। সোজা কথায়, আক্রমণাত্মক প্রথমার্ধে দু’দলের দুই গোলকিপারই নায়ক। নয়্যারের একটা বিরাট থ্রো তো বায়ার্নের একটা মুভ-ই তৈরি করল! |
আসলে জার্মান ফুটবল বরাবরই তীব্র গতি, প্রচণ্ড ফিটনেস, শারীরিক সক্ষমতা নির্ভর। মেসি-রোনাল্ডোর মতো ব্যক্তিগত নৈপুণ্য আশা করাটা বায়ার্ন বা বরুসিয়ার টিমগেমের কাছে ভুল। তবে সর্বোচ্চ মানের টিমগেমের মধ্যেও যে সৌন্দর্য, পরিচ্ছন্নতা থাকে, সেটা পেলাম না ইউরোপিয়ান লিগ ফাইনালের মতো বড় ইভেন্টেও।
বায়ার্নের গোলটায় যত না সেটার কারিগর রবেন বা স্কোরার মান্ডজুকিচের কৃতিত্ব, তার চেয়ে বেশি দায়ী বরুসিয়া ডিফেন্সের অনভিজ্ঞতা। আবার রয়েসকে বক্সের ভেতর পরিষ্কার পা চালিয়ে দাতে বরুসিয়াকে যে পেনাল্টিটা উপহার দিল সেটাও যেন খানিকটা অনভিজ্ঞতার ফসল। গ্যালারিতে বরুসিয়ার আহত গোটজে তখন আনন্দে নাচছে! যাঁর সঙ্গে কিনা বায়ার্নের চুক্তি হয়ে বসে আছে বুন্দেশলিগায় এ বার লেওয়ানডস্কির পেনাল্টি ন্যয়ার বাঁচানোয় এ দিন পেনাল্টি কিক নিল গুন্দোগান। কিন্তু ১-১ করেও শেষমেশ ম্যাচ বার করা হল না বরুসিয়ার। বায়ার্নের ‘পরশ পাথরে’র জন্য! |