এক বছর আগেই তিনি চিৎকার করে সারা দুনিয়াকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন, যা হচ্ছিল, তা মোটেই ঠিক নয়। বহু গলদ, বিস্তর অন্যায় ঘিরে রয়েছে আইপিএল-কে। অনেকেরই হয়তো মনে আছে, এর প্রতিবাদে দিল্লি ক্রিকেট সংস্থার সামনে ধর্নায় বসেছিলেন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার কীর্তি আজাদ। এক টিভি চ্যানেলের স্টিং অপারেশনে সারা দুনিয়ার সামনে উঠে আসে এক চাঞ্চল্যকর সত্য, পাঁচ ক্রিকেটার সরাসরি জড়িয়ে স্পট ফিক্সিংয়ের সঙ্গে। তার পরই আর এক কেলেঙ্কারি। রাজধানীতে এক বিদেশি ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে যৌননিগ্রহের অভিযোগ। মুম্বইয়ে রেভ পার্টিতে দুই ক্রিকেটারের ধরা পড়ার ঘটনাও তখনকারই।
বারবার বলা সত্ত্বেও কেউ কোনও কর্ণপাত না করায় ক্ষুব্ধ কীর্তি এখন তাই বলছেন, “সারা দেশ জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে যে ক্রিকেটকে প্রাণ দিয়ে ভালবাসে, সেই ক্রিকেটকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। ভারতীয় ক্রিকেটে এটাই সবচেয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়।” বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ফিক্সিং ও গড়াপেটা কেলেঙ্কারি দৈত্যাকৃতি ধারন করেছে। দেশের ক্রিকেটটাকেই যেন গিলে খেয়ে নিতে চাইছে এই কাণ্ড। কিন্তু এক বছর আগে থেকেই কীর্তি যখন এই নিয়ে সবাইকে সাবধান করতে চেয়েছিলেন, তখন অনেকেই তাঁর সমালোচনা করেছিলেন। “অনেকে তখন আমাকে প্রচারপ্রিয়, কাঁচা খেলোয়াড়, এ সব বলেছিলেন। কিন্তু আমি পিছপা হইনি। বুঝতেই পারছিলাম, এই যে এত কাণ্ড হচ্ছে, তা থেকে একটা ব্যাপার স্পষ্ট, এই দেশে ক্রিকেটারদের মধ্যে শৃঙ্খলা বলে কিছুই নেই।”
বোর্ড সভাপতি এন শ্রীনিবাসনের জামাই গুরুনাথ ময়াপ্পনের গড়াপেটার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে কীর্তির স্পষ্ট বক্তব্য, “নিয়ম অনুযায়ী এখনই চেন্নাই সুপার কিংসকে বাতিল করা উচিত। রবিবারের ফাইনালও হওয়া উচিত নয়। কিন্তু সবাই জানে, তা হওয়ার নয়। কারণ, তা হলে অনেকেরই স্বার্থে ঘা লাগবে যে।” শ্রীনিবাসনকে বোর্ড সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গও উঠেছে। কিন্তু এগুলো বিশ্বাস করতে রাজি নন কীর্তি। বললেন, “দেখুন, বোর্ডের রাজনীতির সঙ্গে সংসদের রাজনীতির তেমন কোনও পার্থক্য নেই। সংসদে এমন কোনও ঘটনা ঘটলে শাসক ও বিরোধী দু’পক্ষই একসঙ্গে ‘ইমপিচমেন্ট’ প্রক্রিয়ার দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু এখানে তো দেখছি এই বিষয়টা নিয়ে বোর্ডের মধ্যে স্পষ্ট বিভাজন রয়েছে। আমার মনে হয় না শেষ পর্যন্ত কিছু হবে।”
তাঁর এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে কীর্তি বলেন, “প্রথমত, যদি শ্রীনিবাসনকে ইমপিচ করা হয়, তা হলে তাঁর বদলে যিনি আসবেন, তিনি যে পুরো জঞ্জাল সরিয়ে ফেলতে পারবেন, এমন সম্ভাবনা কম। তিনি যে স্বচ্ছমনস্ক হবেন ও ক্রিকেটকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করবেন না, তার গ্যারান্টিই বা কে দিতে পারে? দ্বিতীয়ত, শ্রীনিবাসন ডুবলে অনেককে নিয়ে ডুববেন। ২০১০ ও ২০১১-য় ফেমা, ফেরা ও এনফোর্সমেন্ট বিভাগ বিসিসিআই সম্পর্কে যে রিপোর্ট দিয়েছিল, তাতেই স্পষ্ট প্রশ্ন তোলা ছিল, আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর জন্য বিপুল পরিমাণ টাকা কোথা থেকে এসেছে? শুধু যে ললিত মোদীই ভুলভাল কাজ করেছে, তা তো নয়, আরও অনেকেই তার সঙ্গে ছিল। এটা আসলে আলিবাবা ও চল্লিশ চোরের গল্পের মতো। কেউ এখানে পরিষ্কার নয়।” তবে ভারতীয় দলের অধিনায়কের পদ থেকে ধোনির সরে যাওয়ার পক্ষপাতী নন কীর্তি। |