শহরে আজ বাদে কাল আইপিএলের মতো মেগা টুর্নামেন্টের ফাইনাল, রবিবাসরীয় ইডেন পাঁচ দিন আগে থেকেই হাউসফুল, অথচ শনিবার দুপুর পর্যন্ত কি না প্রতিপক্ষেরই ঠিক নেই!
পাড়ার টুর্নামেন্টেও যা হয় না, আইপিএলে আর একটু হলে সেটাই ঘটছিল। গুরুনাথ ময়াপ্পন কাণ্ডের প্রভাব এ দিন এতই সুদূরপ্রসারী হয়ে পড়ল যে, আইপিএলের চার ফ্র্যাঞ্চাইজি ফাইনালের আগেই চেন্নাই সুপার কিংস নিয়ে চরম সিদ্ধান্ত নেওয়ার অলিখিত আবেদন জানিয়ে দেয় বোর্ড মহলে। এবং শনিবার দুপুর পর্যন্ত ঠিকও ছিল না, ফাইনালে রোহিত শর্মার বিরুদ্ধে কে টস করতে যাচ্ছেন? এমএসডি শেষ পর্যন্ত সত্যিই দলবল নিয়ে ইডেনে নামছেন তো?
নাটকের যা মশলাপাতি, তাতে আস্ত একটা থ্রিলার লিখে ফেলা যায়। সিএবি কর্তাদের কারও কারও প্রথম সন্দেহটা জাগে রাজস্থান রয়্যালসের গতিবিধি দেখে। আইপিএল অভিযান শেষ, স্বাভাবিক নিয়মে শনিবার সকালেই তাদের টিম হোটেল ছেড়ে দেওয়ার কথা। সিএবি কর্তাদের কাছে খবরও ছিল, মুম্বইয়ের যে সব ক্রিকেটার রাজস্থানে খেলেন তাঁরা শনিবার সকালেই রওনা হচ্ছেন। কিন্তু দুপুর পর্যন্ত ক্রিকেটাররা হোটেল ছেড়ে নড়েননি। কারণও ছিল। ততক্ষণে তো আইপিএল চেয়ারম্যান রাজীব শুক্লর উপর চার ফ্র্যাঞ্চাইজির চাপ দেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।
চারটে টিমের মূল দাবি এক, কিন্তু পারিপার্শ্বিক ভিন্ন। কেউ ভেবেছিল হারলেও ফাইনাল খেলা যাবে। কেউ ভেবেছিল ফাইনাল না খেলেই চ্যাম্পিয়ন হলে মন্দ কী? এক ফ্র্যাঞ্চাইজির আবার আশা ছিল এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে যদি প্লে-অফগুলোই নতুন করে খেলা হয়, তা হলে হয়তো তারাও ট্রফি জেতার দৌড়ে ঢুকে পড়বে। এবং লক্ষ্যপূরণের প্রথম এবং শেষ শর্ত একটাই চেন্নাই সুপার কিংসকে হঠাও। ‘মালিক’ যখন জড়িয়ে, চরম সিদ্ধান্ত নিক বোর্ড।
বিপন্ন আইপিএল চেয়ারম্যান তড়িঘড়ি বৈঠকে বসেন সিএবি প্রেসিডেন্ট এবং অতীতের দুঁদে আইসিসি মহাকর্তা জগমোহন ডালমিয়ার সঙ্গে। ডালমিয়াই প্রধানত শুক্লকে বোঝান যে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের চাপে বোর্ডের মাথা নত করা ঠিক হবে না। যারা আইপিএল ফাইনালের চব্বিশ ঘণ্টা আগে এই অদ্ভুত দাবি তুলছে, তাদের লিখিত দিতে বলা হোক। বোর্ড তার পর সিদ্ধান্ত নেবে।
দুপুরের দিকে ইডেনের আইপিএল ফাইনাল নিয়ে বোর্ডের অনড় অবস্থান ওই চার ফ্র্যাঞ্চাইজিকে জানানোর পর পরিস্থিতি আয়ত্তে আসে। বেঁচেও যায় চেন্নাই। ডালমিয়ার সঙ্গে বৈঠক শেষে রাজীব শুক্ল বলে দেন, “ফাইনাল যে রকম হওয়ার কথা, সে রকমই হচ্ছে।”
আজ পর্যন্ত এমন অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে কোনও টুর্নামেন্টের ফাইনাল দেখেনি ইডেন। দেখেনি, ফাইনালের আগের দিন জাতীয় মিডিয়াকে বিস্ময়ে স্তব্ধ করে প্রথাগত সাংবাদিক সম্মেলন থেকে নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছেন দুই অধিনায়ক। বৃষ্টিকে ‘শিখণ্ডি’ করে। সাংবাদিক সম্মলনের শুরুতে একই সঙ্গে ধরানো হল বিবৃতি ও নির্দেশ। সিএসকে কোচ স্টিভন ফ্লেমিং যখন টিমের পক্ষ থেকে বিবৃতি পড়বেন, কোনও প্রশ্ন করা যাবে না। আর ফিক্সিং নিয়ে প্রশ্ন এলে প্রেস কনফারেন্স তখনই শেষ! অন্তহীন নাটকে নতুন সংযোজন, আইপিএলের ওয়েবসাইটে ফেয়ার প্লে ট্রফি-র তালিকা আর কোথাও দেখা যাচ্ছে না।
ক্রিকেট-ঈশ্বরকে দেখা যাবে? সম্ভবত, না। মুম্বই কোচ রাইটের ভাষায়, সচিন তেন্ডুলকরের ফাইনালে আবির্ভাব প্রবল ভাবে ‘আনলাইকলি’।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনির বিখ্যাত ভাগ্য কি আবার কাজ করতে শুরু করল?
|
শনিবারের বারবেলায় |
প্রথম দৃশ্য |
সকালেই ফিরে যাওয়ার কথা থাকলেও রাজস্থান নট নড়ন-চড়ন। প্রশ্ন উঠল, কেন শহর ছাড়ছেন না দ্রাবিড়ররা?
|
দ্বিতীয় দৃশ্য |
বেলা গড়াতেই ফ্র্যাঞ্চাইজিদের চাপ বাড়তে থাকে বোর্ডের উপর: সিএসকে-কে বাতিল করতে হবে।
|
তৃতীয় দৃশ্য |
ডালমিয়ার বাড়িতে রাজীব শুক্ল-সহ কর্তাদের বৈঠকে ঠিক হয়, চাপের সামনে নরম হলে চলবে না।
|
শেষ দৃশ্য |
বোর্ডের সিদ্ধান্ত, ধোনিরাই ফাইনাল খেলবেন। রাজস্থান শহর ছাড়ে।
|
সিএসকে-র পক্ষ থেকে... |
সিএসকে ফ্র্যাঞ্চাইজি, আইপিএল এবং ভারতীয় ক্রিকেটের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ উঠেছে, তাতে টিমের প্লেয়ার ও সাপোর্ট স্টাফ সবাই ভেঙে পড়েছে। আমরা প্রতিটা ম্যাচে সেরাটা দিয়েছি। বেটিং বা স্পট-ফিক্সিংয়ের অভিযোগ নিয়ে টিমের প্লেয়ার বা সাপোর্ট স্টাফ প্রত্যক্ষ ভাবে কিছু জানে না। জানি ব্যাপারটা কঠিন, কিন্তু আমাদের পুরো ফোকাস আইপিএল ফাইনালের প্রস্তুতিতে। |
|