ইডেনের ‘এল’ ব্লকে বসে খেলা দেখছিলেন বছর চল্লিশের এক যুবক। সঙ্গে তাঁর স্ত্রী-ও। খেলা দেখার ফাঁকে মাঝেমধ্যে মোবাইলে কথাও বলছিলেন তিনি। চোখেমুখে ফুটে উঠছিল অস্বস্তির ছাপ। যুবকের এই হাবভাব কিন্তু চোখ এড়ায়নি ওই ব্লকে নজরদারির দায়িত্বে থাকা গোয়েন্দাদের। শুক্রবার রাতে দ্রাবিড় বনাম সচিনের দলের রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে ছায়ার মতো ওই যুবককে অনুসরণ করেছেন লালবাজারের অফিসারেরা। যদিও শেষ পর্যন্ত সন্দেহজনক কিছু পাননি তাঁরা।
তবে এই অনুসরণ কেন? লালবাজার সূত্রের খবর, চলতি আইপিএলে বেটিং এবং কলকাতা থেকে অজিত সুরেখার মতো বুকির গ্রেফতারের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছেন লালবাজারের কর্তারা। বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। সূত্রের খবর, রবিবার ইডেনে আইপিএল ফাইনালে নজরদারিতে পুলিশকে সাহায্যের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে নতুন প্রযুক্তির যন্ত্র-ও। যা দিয়ে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় মোবাইল ফোনে নজরদারি চালানো যাবে। ২০০৮ সালে শুরু হওয়ার পর থেকে এই প্রথম ইডেনে আইপিএল ফাইনাল হতে চলেছে। “সেটা যেমন রেকর্ড, তেমনই এ বার পুলিশের নজরদারিও রেকর্ড গড়বে”মন্তব্য এক পুলিশকর্তার। তাঁর কথায়, “ওই নজরদারির মহড়া হয়ে গিয়েছে শুক্রবারই।” ওই কর্তা জানিয়েছেন, শুক্রবার কেবল আইপিএলের সেমিফাইনালই ছিল না, ছিল কলকাতা পুলিশেরও। অতীতে সন্ত্রাসবাদী হানা রুখতে কড়া নিরাপত্তা থাকলেও বেটিংয়ের বিরুদ্ধে এমন নজরদারি দেখেনি কলকাতা।
কী রকম নজরদারির ব্যবস্থা থাকবে? গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ক্লাব হাউস, কর্পোরেট বক্স, প্লেয়ার্স এনক্লোজারে নজরদারি তো থাকবেই, নজরে রাখা হবে ফাইনালে ওঠা দু’টি দলের খেলোয়াড়দের গতিবিধিও। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, খেলোয়াড়দের ড্রেসিংরুমে না ঢুকলেও ড্রেসিংরুমের ঠিক বাইরে ও তার আশপাশে থাকবেন পুলিশ ও বিসিসিআই-এর দুর্নীতি দমন শাখার অফিসারেরাও। লালবাজার সূত্রের খবর, স্টেডিয়ামের ‘এল’, ‘কে’ এবং ‘বি’ ব্লকেও নজরদারি থাকবে। পুলিশকর্তারা বলছেন, বুকিরা সাধারণত দামি আসনেই বসে। ফলে ওই জায়গাগুলিই নজরদারি জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
চলতি আইপিএলে স্পট ফিক্সিং নিয়ে যা চলছে, তাতে কলকাতার গায়ে যাতে কালি না লাগে, সে ব্যাপারে বিশেষ নজর দিচ্ছেন কলকাতা পুলিশের শীর্ষ কর্তারা। সেই কারণে সুরজিৎ করপুরকায়স্থের নির্দেশে গুন্ডাদমন শাখার একটি বিশেষ দল তৈরি করা হয়েছে। তাতে বাছাই করা ৩০ জন অফিসার-কর্মীকে নিয়োগ করেছেন কর্তারা। তাঁরা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে গোটা স্টেডিয়ামে ছড়িয়ে থাকবেন। লালবাজারের এক কর্তা জানিয়েছেন, গুন্ডাদমন শাখার কয়েকটি দল ঘুরে বেড়াবে। বাকি অফিসার-কর্মীরা স্টেডিয়ামে দর্শকদের মধ্যে মিশে থাকবেন। সন্ধ্যা আটটায় খেলা শুরু হলেও ওই পুলিশকর্মীরা বিকেল সাড়ে চারটের মধ্যেই স্টেডিয়ামে পৌঁছে যাবেন।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, স্টেডিয়ামে ঘুরে বেড়ানো দলটির কাছে থাকবে মোবাইল ফোন ট্র্যাকিংয়ের ওই বিশেষ যন্ত্র। স্টেডিয়ামের কোনও জায়গায় গিয়ে সেখান থেকে কে কে ফোন করছে তার উপরে নজরদারি চালানো যাবে। নম্বরের পাশাপাশি কথোপকথনও রেকর্ড করা যাবে বলে গোয়েন্দাদের দাবি। তাঁরা বলছেন, এই যন্ত্র ছাড়াও খেলা দেখতে বসে ঘন ঘন মোবাইলে ফোন বা কোনও রকম ইশারা করা হচ্ছে কি না, তার উপরে নজর থাকবে।
পাশাপাশি, পুরনো বুকিদের মাঠে দেখতে পেলেই সঙ্গে সঙ্গে
গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গোয়েন্দাদের দাবি, কলকাতার বেটিং চক্রের পুরনো পাণ্ডাদের মুখ গুন্ডাদমন শাখার অনেক অফিসারেরাই চেনেন। ফলে তাঁদের গ্রেফতার করতে বিশেষ অসুবিধা হবে না বলেই মনে করছে পুলিশ।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, ইডেন ছাড়াও শহরের বিভিন্ন পানশালা-সহ নানা জায়গায় বেটিং হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারেও নজর রাখবে গুন্ডাদমন শাখা। এ ব্যাপারে মূল ভরসা গোয়েন্দাদের সোর্স নেটওয়ার্কই। |