গভীর রাতে বৌবাজার থানায় চড়াও হয়ে দুই পুলিশ অফিসারকে নিগ্রহ করেও হাজতে যেতে হয়নি তাঁকে। মধ্য কলকাতার এক পানশালায় ঢুকে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনাতেও পম্পা দত্তের টিঁকি ছুঁতে পারেননি তদন্তকারীরা।
এ বার সেই মহিলাকেই তাঁর প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রিটের বাড়িতে রাতভর পাহারা দিয়ে আটকে রেখে গ্রেফতার করল পুলিশ।
পুলিশ জানায়, পম্পা দত্তের নামে কলকাতার বিভিন্ন থানায় অপহরণ, তোলাবাজি-সহ একাধিক দুষ্কর্মের অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি বড়তলা থানায় এক ব্যক্তি তাঁর নাবালিকা মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন পম্পার বিরুদ্ধে। সেই সূত্রে শনিবার ভোরে বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযোগ, একটি ছেলের সঙ্গে ওই নাবালিকার প্রণয়ের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু মেয়েটি নাবালিকা জেনেও পম্পাদেবী তাকে বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেন। যদিও লালবাজারের একাংশের বক্তব্য, তৃণমূলের এক শীর্ষ স্তরের নেত্রীর নাম করে তোলাবাজি করাটাই কাল হল পম্পার। তিনি নিজেও বৌবাজার এলাকায় শাসক দলের স্থানীয় নেত্রী বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন তিনি। |
অপহরণের ঘটনায় গ্রেফতার করা হলেও বাকি ঘটনাগুলিতে তাঁকে পুলিশি হেফাজতে চাইতে পারেন তদন্তকারীরা। এই গ্রেফতার নিয়ে তৃণমূল নেতাদের একাংশের বক্তব্য, অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় স্তরে এ ধরনের কাজ দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। দলনেত্রী এ সব কোনও মতেই মেনে নিতে নারাজ। তাই আইন তার নিজের পথেই চলবে।
গত সেপ্টেম্বরে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের এক পানশালায় খেয়ে পয়সা না দেওয়া, সেখানকার কর্মীদের মারধর, এক খদ্দেরের পাঁচ হাজার টাকা হাতিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল পম্পার বিরুদ্ধে। ফেব্রুয়ারি মাসে এক গভীর রাতে বৌবাজার থানায় চড়াও হয়ে জনৈক পুলিশ অফিসারের গায়ে চিলি চিকেন ঢেলে দেন তিনি। অভিযোগ, মারধর করেন থানার আর এক অফিসারকেও। কিন্তু এগুলির কোনওটিতেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়নি। পুলিশ সূত্রের খবর, বৌবাজার থানার ঘটনার পরে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন পম্পা। পরে কলকাতা হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নেন।
তদন্তকারীদের দাবি, গত মাস কয়েক ধরে কলকাতার বাইরে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন পম্পা। তারাপীঠ, হাওড়া-সহ নানা জায়গায় ঘন ঘন ডেরা বদল করছিলেন তিনি। শুক্রবার বিকেলে খবর মেলে, বাড়ি ফিরেছেন তিনি। এর পরেই বৌবাজার, মুচিপাড়া, বড়তলা থানা এবং লালবাজারের গুন্ডাদমন শাখার অফিসারদের একটি যৌথ দল সেখানে হানা দেয়। পুলিশ জানিয়েছে, সূর্যাস্তের পর থেকে সূর্যোদয়ের মধ্যে কোনও মহিলাকে গ্রেফতার করার নিয়ম নেই। তাই পম্পার বাড়ি ঘিরে ফেললেও তাঁকে গ্রেফতার করতে ভোর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে।
কিন্ত কলকাতার বিভিন্ন থানায় এত অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও পম্পাকে গ্রেফতার করতে পারছিল না কেন পুলিশ?
তদন্তকারীদের একাংশের বক্তব্য, শাসক দলের একাংশের সঙ্গে পম্পার দীর্ঘ ঘনিষ্ঠতার কারণেই তাঁকে গ্রেফতার করা নিয়ে দ্বিধা ছিল পুলিশকর্তাদের। এই ঘনিষ্ঠতার জন্য অনেক সময় পম্পার তোলাবাজির বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতেও ভয় পেতেন ব্যবসায়ীরা। শেষ পর্যন্ত শাসক দলের শীর্ষ স্তরের এক নেত্রীর নাম করে তোলাবাজি করেই ফেঁসে গেলেন পম্পা। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রোমোটারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা তোলা থেকে মেয়ে পাচারের মতো নানা অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। মাস খানেক আগে সে কথা জানতে পারেন ওই নেত্রী। এর পরেই বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের শীর্ষ স্তরে অভিযোগ জানান তিনি। সেখান থেকে নির্দেশ পেতেই নড়েচড়ে বসে লালবাজার। বিভিন্ন থানায় অভিযোগগুলি একত্র করে অভিযানের পরিকল্পনা হয়। |