|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ৩... |
|
সাম্প্রতিকে টানটান মর্জিমহল |
আশিস পাঠক |
অনেকদিন পরে
বেঁচে উঠল মরা ভূত
চীনে আবার আমরা
পাঠাচ্ছি রাষ্ট্রদূত...’
কবিতা অথবা পদ্য লিখছেন বনফুল। লিখছেন, বা পদ্যে ছুঁচ ফোটাচ্ছেন সমকালীনতায়,
‘বিজ্ঞাপনের নূতন কায়দা
হয়েছে সম্প্রতি
ছবির সঙ্গে বিজ্ঞাপনের
নেইকো সঙ্গতি
মশলার বিজ্ঞাপনে
ছবি দেখছি কুচের
হাতির ছবি দেখাচ্ছে
বিজ্ঞাপন ছুঁচের।’
১৬ এপ্রিল ১৯৭৬-এ লেখা পদ্যটি ক্রমে আরও একান্ত ব্যক্তিগত হয়ে উঠল শেষ চার লাইনে,
‘একটি কিন্তু খুশির ফানুস
চিদাকাশে ভাসছে
গুড্ফ্রাইডের ছুটিতে
অসীমরা সব আসছে।’
পদ্যে লেখা, কিন্তু এ আসলে ডায়েরি, বনফুলের ডায়েরি। তাঁর ছোটগল্পের থেকেও ছোট এ ডায়েরির এক এক দিন, তাঁর উপন্যাসের থেকেও সোজাসুজি, নির্মোহ এ ডায়েরির এক-একটি প্রসঙ্গ। রামায়ণের উৎস বিষয়ে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতকে প্রখর ব্যঙ্গ করছেন কখনও, কখনও চেতনার ‘মারীচ সংবাদ’ নাটক তাঁর ভাল লাগছে না, কখনও বা সতীকান্ত গুহ-র রবীন্দ্র পুরস্কার প্রাপ্তির ঔচিত্য, সুরূপা-মামলা স্পষ্ট উঠে আসছে তাঁর মর্জিমহল-এ। মর্জিমহল-ই নাম বনফুলের এই ডায়েরির, দু’খণ্ডে হুবহু যা প্রকাশিত হয়েছে বাণীশিল্প থেকে। ১৯৭১ থেকে ১৯৭৯-র ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত রোজ দিনলিপি লিখতেন বনফুল, ‘মর্জিমহল’ শিরোনামেই। শুধু ১৯৭১-এর ডায়েরিটি প্রকাশিত হয় চল্লিশ বছর আগে, রামায়ণী প্রকাশ ভবন থেকে। ন’বছরের ডায়েরি এই প্রথম পুরোটা প্রকাশিত হল। এই ডায়েরির অধিকাংশ প্রথম পড়তেন লীলাবতী, লেখকের স্ত্রী। স্ত্রী-র মৃত্যুর পরে ডায়েরির প্রায় প্রত্যেকটি তাঁকেই সম্বোধন করে লেখা, অনেকটা চিঠির ভঙ্গিতে। কিন্তু সে মনোকথন বেশির ভাগই সংবাদ এবং সংবাদপত্র, প্রায়শ আনন্দবাজার পত্রিকাকে ঘিরে। এমনকী কখনও কখনও খবরের গতানুগতিকতায় বিরক্ত এক সাহিত্যিক ফুটে উঠছেন ডায়েরির পাতায়: ‘লীলা, কাগজের খবর সেই উদ্বাস্তু-ইন্দিরা-জনতার খিচুড়ির সঙ্গে ফ্রন্ট সরকারের বেগুনভাজা। তার সঙ্গে মাঝে মাঝে শাহ-কমিশনের চাটনি। আমরা তো বিরক্ত হয়েইছি আকাশ পর্যন্ত চটে গেছে। কাল হঠাৎ শিলাবৃষ্টি।’ (৩১ মার্চ ১৯৭৮) দুঃখ একটাই, সমসময় সম্পর্কে এত টানটান যে মর্জি তার মহলের কোনও প্রসঙ্গেরই টীকা দেওয়া হল না। বীতশোক ভট্টাচার্যের ‘অনুকথন’-এ ডায়েরিটির সাহিত্য-সমালোচনার চেয়ে সেই প্রসঙ্গকথন অনেক বেশি জরুরি ছিল। |
|
|
|
|
|