|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ২... |
|
গুরু-শিষ্য পরম্পরার কাহিনি |
সালটা ১৯৫০। অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো-র আমন্ত্রণে দিল্লি চলেছেন হাফিজ আলি খান। সঙ্গে কনিষ্ঠ পুত্র আমজাদ। দু’দিন ধরে রেডিয়ো-তে সম্প্রচারিত হবে খানসাহেবের সরোদবাদন। গোয়ালিয়র থেকে পঞ্জাব মেলে চেপেছেন। ফার্স্ট ক্লাস কামরা, সঙ্গে লাগোয়া টয়লেট। ছোটবেলার স্মৃতি থেকে সেই রেলভ্রমণের গল্প বলেছেন আমজাদ আলি খান। মাই ফাদার, আওয়ার ফ্রেটারনিটি-র (রোলি বুকস, ৫৯৫.০০) পাতায় পাতায় ‘আব্বা’কে নিয়ে তাঁর উপুড়-করা গল্পের ঝুলি। বইটির দ্বিতীয় শিরোনামই: দ্য স্টোরি অব হাফিজ আলি খান অ্যান্ড মাই ওয়ার্ল্ড। খানসাহেব যেতে যেতে আমজাদকে সেই সুখযাত্রায় নিজের ঝোড়ো দিনগুলোর কথা শোনাচ্ছিলেন, কী কঠোর পরিশ্রমে তাঁর দিন কাটত, সঙ্গীত সাধনা থেকে একচুলও নড়েননি, অর্থাভাবে ট্রেনের থার্ডক্লাসে যাতায়াত করতে হত। ‘আব্বার সঙ্গে এ ধরনের বেড়ানোর মজাটাই আলাদা, এত রকমের গল্প বলতেন নিজের ফেলে-আসা জীবন নিয়ে। আবার শেখাতে-শেখাতেও যেতেন।’ লিখছেন আমজাদ, ওই জার্নি যেন গুরু-শিষ্য পরম্পরারই কাহিনি। |
|
দু’দিন সরোদবাদনের জন্যে সে বার খানসাহেবকে চারদিন থাকতে হয়েছিল দিল্লিতে। জুম্মা মসজিদের উল্টোদিকে হাজি হোটেলে থাকতেন, মসজিদে গিয়ে নিয়ম করে নমাজ পড়তেন, সাবেকি খাবার খেতেন করিম আর জহর হোটেল থেকে কবেই উঠে গিয়েছে সে সব। ‘আব্বা’র এমন সব গল্পের সঙ্গে আমজাদ স্কুলজীবনের কথাও শুনিয়েছেন। প্রথম দিন স্কুলে নিয়ে গিয়েছিলেন খানসাহেবই। প্রিন্সিপাল থেকে শুরু করে শিক্ষকেরা সকলেই জানতেন, সিলেবাসের পড়া পড়তে আসেননি আমজাদ, অঙ্কে এত কাঁচা ছিলেন যে খানসাহেবকে একদিন বললেনও প্রিন্সিপাল: ‘অঙ্কে আমজাদের পাশ করা মুশকিল, কিন্তু তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না, আমরা পাশ করিয়ে দেব। কারণ, আপনার ছেলে এসেইছে সারা দুনিয়ায় সরোদ বাজিয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে।’ তবু কোনওদিন পুত্রকে স্কুলে যেতে নিরুৎসাহ করেননি খানসাহেব। যদিও গোপনে মনে করতেন যে, যতক্ষণ স্কুলে সময় দিচ্ছেন আমজাদ, সে সময়টা সঙ্গীতের তালিম নিলে কাজে লাগত। সিলেবাসের পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন খানসাহেব।
চমৎকার ছাপা, পাতায় পাতায় দুর্লভ দুষ্প্রাপ্য সব ছবি। ‘আব্বা’ হাফিজ আলি খান কী ভাবে ‘গুরু’ হয়ে উঠলেন, তাঁকে ঘিরে গোয়ালিয়রে কী ভাবে মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে রাস্তা হয়েছে, তাঁদের বংশলতিকা ও বংশের প্রতিভাবানদের বিবরণ, পরিবারের নানা স্মৃতি... এমন কত কী অনায়াস কথালাপে বলে গিয়েছেন আমজাদ। আবার এ যেন হাফিজ আলি খান নামক বৃক্ষের ছায়ায় তাঁর শিল্পী হয়ে ওঠারও কাহিনি।
সঙ্গে বাড়তি পাওনা একটি সিডি-তে খানসাহেবের সরোদবাদনে ‘মিঞা কি মল্লার’ ও ‘ভৈরবী’, আর আমজাদের সরোদে ‘দেশ’ ‘হংসধ্বনি’ ও ‘দরবারি কানাড়া’। |
|
|
|
|
|