তিন সন্তানের জননীকে ছেলে বিয়ে করায় তাঁকে বউ হিসাবে মেনে নিতে পারেননি শাশুড়ি। তাই পারিবারিক অশান্তির জেরে ছেলে ‘নিখোঁজ’ হওয়ায় বউমার বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ আনলেন তিনি। এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগও দায়ের করেছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ বৃহস্পিতবার বাসন্তী বিশ্বাস-যাদব নামে ওই বধূকে গ্রেফতার করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে বসিরহাটের পিঁফায়।
যদিও ছেলে যাতে তাঁর সঙ্গে ঘর করতে না পারে সে জন্য শাশুড়িই তাঁর স্বামীকে অন্যত্র সরিয়ে দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন বলে দাবি বাসন্তী দেবীর। শুক্রবার বাসম্তীদেবীকে বসিরহাট এসিজেএম আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁকে জামিনে মুক্তি দেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, পিঁফা গ্রামের দাসপাড়ায় বাপের বাড়ি বাসন্তী দেবীর। বছর দশেক আগে উত্তরপ্রদেশের যুবক বিজু যাদবের সঙ্গে বিয়ে হয় বাসন্তীদেবীর। তাঁদের তিনটি সন্তানও রয়েছে। বছর দুয়েক আগে বিজু যাদব মারা যান। তার পরে সন্তানদের মানুষ করতে কলকাতায় পরিচারিকার কাজ নেন বাসন্তীদেবী। মাস ছয়েক পরে এক বিয়েবাড়িতে তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় বিশ্বজিৎ বিশ্বাস নামে ওই যুবকের। বছর কুড়ির বিশ্বজিতের পেশা ছিল চুল কাটা। তাঁর বাড়িও পিঁফা গ্রামেই। দু’জনের মধ্যে ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দু’জনেই ঠিক করেন বিয়ে করবেন। বাসন্তীর পরিবার রাজি হলেও তিনি সন্তানের জননীকে বউ করতে রাজি ছিলেন না বিশ্বজিতের মা কাকলি দেবী। এই অবস্থায় বিয়ের পর বিশ্বজিৎ বউ নিয়ে কলকাতার বাগবাজার এলাকায় থাকতে শুরু করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে কালীপুজো উপলক্ষে স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে আসেন বিশ্বজিৎ। খবর পেয়ে ছেলেকে বাড়ি ফিরিয়ে নিতে আসেন কাকলিদেবী। যদিও বাসন্তী ও তাঁর ছেলেমেয়েদের ঘরে নিতে অস্বীকার করেন। এমনকী বাসন্তীদেবীর চরিত্র সম্পর্কেও কটাক্ষ করেন। এই অবস্থায় বিশ্বজিৎও বাসন্তীদেবীকে স্ত্রী হিসাবে মেনে নিলেও তাঁর সন্তানদের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেন। দুই পরিবারের মধ্যে এ নিয়ে তুমুল অশান্তির মধ্যেই নিখোঁজ হন বিশ্বজিৎ। ছেলে এবং স্বামীর খোঁজ না পেয়ে যথাক্রমে পুলিশের দ্বারস্থ হন কাকলিদেবী ও বাসন্তীদেবী। বাসন্তীদেবীর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে ছেলেকে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন কাকলিদেবী। তাঁর অভিযোগ, বাসন্তীদেবী অসামাজিক কাজে জড়িত। লোকজনদের নিয়ে বাড়িতে চনাও হয়ে তাঁকে হুমকি দিচ্ছে। অন্যদিকে, বাসন্তীদেবীর মায়ের অভিযোগ, “মেয়েকে ওরা ঘরে নিতে চাইলেও ওর সন্তানদের নিতে চায়নি। একূবার মেয়ে শ্বশুরবাড়ি গেলে ওরা মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। ওরা নিজেরাই জামাইকে অন্যত্র সরিয়ে মিথ্যা অপহরণের অভিযোগে মেয়েকে ফাঁসিয়েছে।” আর বাসন্তীদেবীর কথায়, “আমিই যদি স্বামীকে অহরণ করব তা হলে বাড়িতেই কেন থাকব। এখানে আসার পরে একদিন শাশুড়ির কথায় আমাকে মারদর করে বলে সন্তানদের ছাড়তে হবে। আমি রাজি না হওয়ায় ওই রাতেই কোথায় চলে যায়। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন শাশুড়ি।”
পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। |