জনবসতি দিনের পর দিন বেড়ে চলেছে। কিন্তু এলাকায় পানীয় জলের জোগান দেওয়ার জন্য কলকাতা পুরসভা সে ভাবে কোনও দিনই মাথা ঘামায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। বেহালার অন্য ওয়ার্ডগুলিতে গার্ডেনরিচের পরিস্রুত পানীয় জলের জন্য দু-দু’টি বুস্টার পাম্পিং স্টেশনের কাজ হলেও, ১২২ নম্বর ওয়ার্ডের জন্য পুরসভা কোনও ব্যবস্থাই করেনি বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। আর তার ফল গরম পড়তেই পানীয় জলের জন্য হাহাকার এলাকা জুড়ে।
সকাল থেকেই পানীয় জলের জন্য লাইন দিয়ে বালতি, জার বা বোতল নিয়ে সকাল থেকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় এই ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের। কিন্তু লাইনে জলের চাপ এতটাই কম যে, যত ক্ষণ কল থেকে জল পড়ে, সেই সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় জল পাওয়াই যায় না। বেহালার এই ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকায় বরাবরই জলের হাহাকার রয়েছে। আর গরম পড়তেই সেই জলের কষ্ট যত দিন যাচ্ছে বাড়ছে বই কমছে না। জলকষ্টের কথা স্বীকার করে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওখানে সমস্যা আছে। তাই আমরা গার্ডেনরিচের ক্ষমতা বাড়াচ্ছি। গার্ডেনরিচে ৫০ মিলিয়ন গ্যালনের রিজার্ভার তৈরি হচ্ছে। তা ছাড়া ওই অঞ্চলে বুস্টার পাম্পিং স্টেশনের সংখ্যাও বাড়ানো হবে।” |
পুরসভার এই ওয়ার্ডের মধ্যে রয়েছে কেওড়াপুকুর বাজারের একাংশ, সোদপুর, সূর্য সেন পল্লি, অরবিন্দ পল্লি, রাজা রামমোহন রায় রোডের পাশে উদয়াচল, তিনের পল্লি, প্রমোদনগর ছাড়াও মহাত্মা গাঁধী রোডের পাশে বিবেকানন্দ স্পোর্টিং ক্লাব, বরোদা সরণি, মসজিদ গলি। বিস্তীর্ণ এই এলাকায় বরাবরই জলের সমস্যা রয়েছে। বিশেষ করে গত দশ বছরে যত দিন যাচ্ছে জনসংখ্যা বাড়ছে, আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জলের কষ্ট।
জনবসতি বাড়লেও পুরসভা কোনও দিনই এই এলাকায় সরাসরি গার্ডেনরিচের পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা করেনি। তবে বেহালার ১১৫, ১১৬, ১১৭, ১২১, ১২৩, ১২৪, ১২৫ এবং ১২৬ ওয়ার্ডে জল পৌঁছনোর জন্য ১১৫ নম্বর ওয়ার্ডে সিরিটি পাম্পিং স্টেশন এবং ১২৪ নম্বর ওয়ার্ডে দাসপাড়া বুস্টার পাম্পিং তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এই দু’টি পাম্পিং স্টেশন তৈরির উদ্দেশ্যই উপরের ওয়ার্ডগুলিতে পুরো মাত্রায় গার্ডেনরিচের পানীয় জল পৌঁছনোর ব্যবস্থা। এতে আশপাশের ওয়ার্ডগুলি জল পেলেও প্রত্যক্ষ ভাবে ১২২ নম্বর ওয়ার্ডের জল পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। তবে পরোক্ষ ভাবে এই জল পাওয়া যাবে বলে ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের বক্তব্য।
এই ওয়ার্ডের বাসিন্দা সূর্য সেন পল্লির মিনতি নস্কর বলেন, “জলের কষ্ট এতটাই বেশি যে সকালে উঠেই চিন্তা হয় যে সারা দিনের জল কী ভাবে ভরে রাখব? সারা দিনই কাজের জন্য বাইরে থাকি। সকালের জলটাই একমাত্র ভরসা। বাকি কাজের জন্য ভরসা টিউবওয়েল আর কুয়োর জল।” |
কিন্তু আর এক বাসিন্দা শঙ্কর সাউয়ের বক্তব্য, “জলের সমস্যা রয়েছে বলেই বাড়ি তৈরির সময় কুয়োটা আগে করে নিয়েছিলাম। কিন্তু এ বারের গরমে সেই কুয়োর জলও অনেক নেমে গিয়েছে। ফলে যত দিন যাচ্ছে জলের সমস্যাও বাড়ছে।”
জলকষ্ট যে রয়েছে তা স্বীকার করে ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের সোমা চক্রবর্তী বলেন, “ওয়ার্ডের কিছু অংশে আমরা বিগ ডায়া টিউবওয়েলের সাহায্যে জল সরবরাহ করছি। বাকি অংশগুলিতে জল যাওয়ার জন্য ওই দু’টি বুস্টার পাম্পিং স্টেশনের উপর নির্ভর করতে হবে। গার্ডেনরিচ থেকে জল এলে পরোক্ষ ভাবে ওই দু’টি স্টেশন থেকে কতটা জল পাওয়া যাচ্ছে দেখে নিজেদের ওয়ার্ডে পাম্পিং স্টেশন করার কথা ভাবব।”
|