এ পথে চলতে হয় ভয়ে ভয়ে। কারণ, যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে পাশের পার্বতীচরণ অবৈতনিক চিকিৎসাকেন্দ্র। এই ভবনটি পানিহাটি পুরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত। পুরসভা সূত্রের খবর, বাড়িটি ভেঙে পড়লে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। পুরসভা নোটিস দিয়েছে। রাজ্য সরকারি দফতরকে জানানোও হয়েছে। কিন্তু বাড়ি ভাঙার অনুমতি মেলেনি বলে অভিযোগ পুরসভার।
চার নম্বর ওয়ার্ডের কাঁসারিপাড়া পার্বতীচরণ অবৈতনিক চিকিৎসাকেন্দ্রটি প্রায় শতাব্দী-প্রাচীন। দোতলা এই বাড়িতে এক সময়ে বিনামূল্যে চিকিৎসা হত। পার্বতীচরণ চ্যারিটেবল ট্রাস্ট এই বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ এবং চিকিৎসার দায়িত্ব সামলাত। পুরসভা সূত্রের খবর, ট্রাস্টের সব সদস্যের মৃত্যুর পরে ভবনটি রাজ্যের বিচার দফতরের অধীন অফিসিয়াল ট্রাস্টের (ন্যাসপাল) অধীনে রয়েছে।
|
বাড়িটির দোতলায় অসংখ্য আগাছা গজিয়েছে। দেওয়াল জুড়ে শিকড় নেমেছে। নানা জায়গায় চাঙড় খসে পড়ছে। দোতলার দরজা-জানলার বেহাল অবস্থা। বাড়িটির পাশেই রায় বাহাদুর গোপাল মুখার্জি রোড। এই রাস্তা দিয়ে দৈনিক কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াত করেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ঝড় উঠলে দোতলার গাছগুলি বিপজ্জনক ভাবে দুলতে থাকে। বাড়িটির নীচে লাইটপোস্ট থাকায় বড়সড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। বাসিন্দারা এ বিষয়ে পুরসভাকে জানিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই বাড়ির এক তলার বারান্দায় পুরসভার একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র চলে। মাঝে মাঝে চিকিৎসক বসেন। বাসিন্দাদের থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরে ২০১০-এর ১৭ জুলাই পুরসভা বাড়ির দরজায় বিপজ্জনক নোটিস ঝুলিয়ে দেয়। রাজ্যের ন্যাসপালের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিনা অনুমতিতে বাড়িতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়।
বাসিন্দা বাচ্চু রায় বলেন, “বাড়িটি যে কোনও সময়ে ভেঙে পড়ে পারে। আমরা অফিসিয়াল ট্রাস্টির কাছে একাধিক বার জানিয়েছি।
দোতলাটি ভেঙে ফেলার অনুমতিও পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু কিছুই হয়নি। ” স্থানীয় কাউন্সিলর কংগ্রেসের শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়: “সামনে বর্ষা। যে কোনও সময়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছি।”
পানিহাটির পুরপ্রধান সিপিএমের চারণ চক্রবর্তী বলেন, “বাড়িটি খুবই বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। এক তলাটি ভাল অবস্থায় থাকায় এখানে আমাদের স্বাস্থ্যকেন্দ্র চলে। দোতলাটি ভেঙে ফেলার জন্য এক সময় রাজ্যের অফিসিয়াল ট্রাস্টির পক্ষ থেকে অনুমতিও পাওয়া গিয়েছিল। আমরা দরপত্রও ডেকেছিলাম। কিন্তু কাজ শুরু হওয়ার আগেই অফিসিয়াল ট্রাস্টির পদে অন্য আধিকারিক দায়িত্ব নেন। তিনি আপত্তি তোলায় কাজ হয়নি। মহকুমাশাসকের অনুমতি নিয়ে দোতলাটি ভাঙা যায় কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
প্রশ্ন উঠেছে, বিপজ্জনক বাড়িতে পুরসভা কী ভাবে স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালাচ্ছে?
চারণবাবু বলেন, “ওখানে দীর্ঘ দিন স্বাস্থ্যকেন্দ্র চলছে। ওই অংশটি ভাল। ভেঙে পড়ার আশঙ্কা নেই।”
রাজ্যের মহাপরিপালক ও ন্যাসপাল (অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জেনারেল অ্যান্ড অফিসিয়াল ট্রাস্টি) আশিস মৈত্রের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর কথায়: “এটি প্রাইভেট ট্রাস্ট প্রপার্টি। এ ব্যাপারে কিছু জানানো সম্ভব নয়।” |