পূর্ব কলকাতা
হোমিওপ্যাথি হাসপাতাল
পরিকাঠামো বেহাল
মুর্শিদাবাদ থেকে হাঁটুর চিকিৎসা করাতে এসেছেন এক বৃদ্ধা। যেতে হবে চার তলার আউটডোর বিভাগে। অন্য কোনও ব্যবস্থা নেই, হেঁটেই উঠতে হবে। শেষ পর্যন্ত আত্মীয়েরা তাঁকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে গেলেন। অপারেশন থিয়েটার দোতলায়। লিফ্ট থাকলেও সেটি দীর্ঘ দিন খারাপ। অস্ত্রোপচারের পরে তাই হাসপাতাল-কর্মীদের ঘাড়ে চেপেই নামতে হয় রোগীদের।
এমনই নানা সমস্যায় জর্জরিত সল্টলেকের রাষ্ট্রীয় হোমিওপ্যাথি সংস্থা। হাসপাতাল সূত্রের খবর, কলকাতা ছাড়াও মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, দুই ২৪ পরগনা, মালদহ, দুই দিনাজপুর-সহ নানা জেলা থেকে প্রতি দিন গড়ে প্রায় দেড় হাজার রোগী এখানে চিকিৎসার জন্য আসেন। ১০০ শয্যার হাসপাতাল। অপারেশন থিয়েটারও রয়েছে। কিন্তু অভিযোগ, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব রয়েছে। ফলে প্রতি দিন নানা সমস্যায় পড়ছেন রোগী, ছাত্র, কর্মী ও চিকিৎসকেরা। সম্প্রতি এ নিয়ে ছাত্র বিক্ষোভও হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ আসে।
নদিয়ার বাসিন্দা সালেমা বিবি বলেন, ‘‘লিফ্ট খারাপ। উঠতে হবে চার তলায়। কোলে করে রোগীকে নিয়ে যেতে হল।’’ রাজারহাটের তারাপদ মণ্ডল বলেন, ‘‘স্ত্রীকে নিয়ে এসেছিলাম। আলট্রাসোনোগ্রাফির যন্ত্র খারাপ। বলা হল বাইরে থেকে করাতে হবে।’’ রোগীদের আরও অভিযোগ, ওষুধ সরবরাহেও সমস্যা রয়েছে।
পরিকাঠামো সংক্রান্ত সব অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছেন চিকিৎসক ও ছাত্রদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, এত বড় সংস্থা। এত মানুষ চিকিৎসার জন্য আসেন। সেখানে প্যাথলজি বিভাগে দায়িত্বে রয়েছেন মাত্র এক জন। তাও তিনি মাসে ৪০ ঘণ্টার চুক্তিতে কাজ করেন। ফলে অনেক দিন প্যাথলজি বিভাগে কাজ হয় না।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, রক্ষণাবেক্ষণের এই হালের পরেও হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা ২৫০ করার পরিকল্পনা রয়েছে। হাসপাতাল কর্মীদের একাংশের বক্তব্য, এখন যা অবস্থা, তাতে শয্যাসংখ্যা বাড়ালে সমস্যা বাড়বে।
হাসপাতালের হোস্টেলের পরিকাঠামো নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে চিকিৎসক, ছাত্র ও কর্মীরা নানা প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে উদাসীন। সম্প্রতি এ নিয়ে গোলমাল চরমে পৌঁছয়। অবস্থা সামাল দিতে কর্তৃপক্ষ কখনও পুলিশ কখনও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সাহায্য নিচ্ছেন বলে অভিযোগ।
যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁরা জানান, পরিকাঠামো সংক্রান্ত কয়েকটি সমস্যা রয়েছে। সেগুলি গুরুত্ব দিয়েই বিবেচনা করা হচ্ছে। পরিকাঠামো ঠিক না থাকলে দিনে দিনে রোগীর সংখ্যা বাড়ত না। দ্রুত লিফ্ট-সহ বাকি সমস্যার সমাধান করা হবে। হাসপাতালের অধিকর্তা আর কে নন্দা বলেন, ‘‘আমাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক নেতাদের সহায়তা নেওয়ার অভিযোগ সত্য নয়। তবে কিছু সমস্যা রয়েছে। সেগুলির দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

ছবি: শৌভিক দে




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.