এমনিতেই ছোট-বড় যানবাহনের চাপে হাঁটা দায়। তার উপরে রাস্তার দু’ধার জুড়ে বসে বাজার-দোকান। দাঁড় করিয়ে রাখা হয় গাড়ি। ডাঁই করে রাখা থাকে নির্মাণসামগ্রী আর ব্যবসার মালপত্র। ফলে বাগুইআটি চালপট্টি থেকে বিনোদিনী খালধার পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তায় হাঁটাচলা করাই পথচারীদের কাছে দুরূহ হয়ে উঠছে।
ভিআইপি রোডের বাগুইআটি চালপট্টি থেকে শুরু হয়ে বাঁ দিকে চলে গিয়েছে শ্যামনগর রোড। রাস্তাটি রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার ২৬ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য দিয়ে বিনোদিনী খালপাড় তথা ক্যান্টনমেন্ট খাল পেরিয়ে দক্ষিণ দমদম পুরসভার ২৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় যশোহর রোডের শ্যামনগরে মিশেছে।
ভিআইপি রোড ও যশোহর রোডের মতো
দু’টি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী
এই শ্যামনগর রোড দিয়ে রিকশা, অটো, মোটরসাইকেল, ট্যাক্সি প্রভৃতি ছোট যানবাহনের পাশাপাশি নির্মাণসামগ্রী বোঝাই বড় লরিও যাতায়াত করে। এ ছাড়াও দুই পুর এলাকার মধ্যে বসবাসকারী বহু মানুষকে নিত্য দিন এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। |
কিন্তু, দীর্ঘ দিন মেরামতি না হওয়ায় রাস্তা জুড়ে অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। একটু বৃষ্টিতেই মূল রাস্তা ও তার ধারগুলি খানাখন্দের আকার নেয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের উদাসীনতায় পূর্ত বিভাগের এই রাস্তায় দিন দিন বাড়ছে স্থায়ী-অস্থায়ী দখলদারি। পাশাপাশি রাস্তার সংস্কার না হওয়ায় বাড়ছে যানজট ও দুর্ঘটনার আশঙ্কাও। অথচ দখলদারি উচ্ছেদ করতে উদ্যোগী হচ্ছে না পুলিশ, পুরসভা বা পূর্ত বিভাগ।
চালপট্টির মোড়ে স্থায়ী দোকানগুলিতে ক্রেতাদের আনাগোনার জন্য প্রায় সারা দিনই ভিড় লেগে থাকে। তার উপরে ভোর ৫টা থেকে দুপুর দেড়টা অবধি রাস্তার দু’ধারে বসে সব্জি, মাছ-মাংসের অস্থায়ী বাজার। সব থেকে বেশি ভিড় শুরু হয় সকাল ৭টা থেকে। এই সময়ে যেখানে খুশি গাড়ি, রিকশা বা সাইকেল ও মোটরবাইক দাঁড় করিয়ে ক্রেতারা কেনাকাটা করতে থাকেন। তখন রাস্তার এক দিক থেকে গাড়ি এসে পড়লে উল্টো দিকের মানুষজন বা গাড়ির পক্ষে এগোনো কার্যত অসম্ভব হয়ে ওঠে। |
চালপট্টির দু’পাশে রয়েছে দু’টি বাজার বাগুইআটি সুপার মার্কেট এবং বাগুইআটি পুরনো বাজার। এই বাজার দু’টিতে কাঁচামাল সরবরাহ করতে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসেন ব্যবসায়ীরা। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, বাজার দু’টিতে বিক্রির পরে বাড়তি সব্জি আর মাছ নিয়ে চালপট্টি পেরিয়ে শ্যামনগরগামী রাস্তার দু’ধারে বসে যান কিছু ব্যবসায়ী। ফলে এই রাস্তার ধারেও অবৈধ ভাবে গড়ে ওঠে একটা বিকল্প বাজার। পথচলতি মানুষজনের কাছে যাতায়াতের পথে প্রয়োজনীয় সব্জি রাস্তার ধার থেকে কিনে নেওয়াটাই সুবিধাজনক হওয়ায় দিন দিন ভিড় বাড়ছে এই অবৈধ বাজারে। ফলে চালপট্টির মোড় থেকে শ্যামনগর রোডে প্রবেশ কার্যত দুরূহ হয়ে উঠেছে। অনেক সময়েই এই রাস্তার ভিড়ের চাপ গিয়ে পড়ে সাতগাছি রোডের উপরে।
বাজার ছাড়াও শ্যামনগর রোডের বিনোদিনী খালধার পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে যত্রতত্র গজিয়ে উঠেছে স্থায়ী-অস্থায়ী নানা দখলদারি। রয়েছে অপরিকল্পিত রিকশাস্ট্যান্ড। বহু জায়গায় রাস্তার ধারে ডাঁই করে রাখা আছে নির্মাণসামগ্রী। ব্যবসায়ীরা দোকানের মালপত্রও রাখেন রাস্তার ধারে। তা হলে এর প্রতিকার কোন পথে? রাজারহাট-গোপালপুরের পুরপ্রধান সিপিএমের তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “রাস্তাটি পূর্ত দফতরের। মেরামতি ও দখলদার উচ্ছেদের দায়িত্বও তাদেরই। পূর্ত দফতর যদি চায় তবে পুরসভা সহযোগিতা করবে।” পূর্ত দফতরের বারাসত হাইওয়ে ডিভিশন-১-এর এক আধিকারিক বলেন, “রাস্তা মেরামতির জন্য টেন্ডার ডাকা হয়েছে। দখলদারির উচ্ছেদের বিষয়টি উপর মহলে জানানো হবে। অনুমতি পেলে অভিযান হবে।”
|