স্পট-ফিক্সিং কাণ্ডকে ঘিরে দেশজোড়া অশান্তির ঢেউ এ বার আছড়ে পড়ল সিএবি-তেও।
বহু দিন পর ইডেনে কোনও টুর্নামেন্টের প্লে অফ (যা কার্যত সেমিফাইনাল) এবং ফাইনাল হচ্ছে। বোর্ড প্রেসিডেন্ট এন শ্রীনিবাসন থেকে শুরু করে বোর্ডের উচ্চপদস্থ কর্তাদের আসার কথা ছিল। এবং শনিবার তাঁদের সম্মানে রাতে ডিনার-পার্টির ব্যবস্থাও সেরে ফেলেছিলেন সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া। কিন্তু গুরুনাথ মায়াপ্পন এবং তাঁকে ঘিরে দিনভর নাটক যে ‘ফাইনাল আওয়ারে’ যাবতীয় আয়োজনের পাশে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন বসিয়ে দেবে, কে জানত!
ঘটনাটা কী?
বোর্ডের পক্ষ থেকে সরকারি ভাবে ফাইনালে অতিথিদের যে তালিকা সিএবি-কে পাঠানো হয়েছিল সেখানে ভারতীয় বোর্ডের প্রতিনিধি হিসেবে থাকার কথা ছিল শুধু ভাইস প্রেসিডেন্ট অরুণ জেটলির। কিন্তু পরে বেসরকারি ভাবে পরে সিএবিকে জানানো হয়, বোর্ড প্রেসিডেন্ট এন শ্রীনিবাসন থেকে শুরু করে সচিব সঞ্জয় জাগদালে আইপিএল ফাইনালের আগের দিনই সবাই মোটামুটি চলে আসছেন। সিএবি তখন ঠিক করে, বহু দিন যেহেতু শহরে সদলবলে বোর্ড কর্তাদের দেখা যায় না, বহু দিন কোনও টুর্নামেন্টের ফাইনালও হয়নি, তাই বোর্ডের সম্মানে এক নৈশপার্টির আয়োজন করা হবে। অভিজাত হোটেলে বুকিং করা হয়ে যায়। সিএবি-র সদস্যদের মধ্যে নিমন্ত্রণের কার্ডবিলিও শেষ হয়ে যায়। |
কিন্তু শুক্রবার দুপুর থেকে ছবিটা পুরো পাল্টে যেতে শুরু করে। গুরুনাথকে ঘিরে পুলিশি ঝঞ্ঝাট শুরু হওয়ার পরপরই অনুষ্ঠান ঘিরে একটা সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল। যেহেতু তিনি এন শ্রীনিবাসনের জামাই। এবং বোর্ড প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাঁরও কলকাতায় আসার কথা ছিল। শ্রীনিবাসন শহরে এলে আবার দক্ষিণেশ্বর এবং কালীঘাট মন্দিরে যাওয়া বাঁধা ব্যাপার। সিএবি সে সব ব্যবস্থাও করে ফেলেছিল। কিন্তু এ দিন দুপুরের দিকে বোর্ডের উচ্চপদস্থ এক কর্তাকে ফোন করে জানা যায়, শ্রীনিবাসন তো বটেই, অন্যান্য কর্তাদেরও আসার সম্ভাবনা যথেষ্ট কম। এর মধ্যেই সিএবি কর্তাদের সঙ্গে বোর্ডের দুর্নীতিদমন শাখার প্রধান রবি সাওয়ানির একদফা মিটিংও হয়ে যায়।
সিএবি কর্তাদের কাউকে কাউকে নাকি বলা হয়, পরিস্থিতি বেশ সঙ্গীন। তাই এই অবস্থায় আগেভাগে কলকাতা যাওয়ার সম্ভাবনা কম। রাতের নৈশভোজ দূরের ব্যাপার। অর্থাৎ, পুরো ব্যাপারটাই প্রবল অনিশ্চিত।
রাতের দিকে সিএবি-র যুগ্ম সচিব সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বলছিলেন, “আমরা এখনও আশা রাখছি, যেহেতু ওঁরা আমাদের কথা দিয়েছেন।” কিন্তু ঘটনা হল, সিএবি কর্তারা মোটামুটি হাল ছেড়ে দিয়েছেন। ধরেই নিয়েছেন, বোর্ড কর্তারা শনিবার কেউই হয়তো আসবেন না। ফাইনালের দিন এলেও আসবেন বিকেল নাগাদ, চার্টার্ড ফ্লাইটে। ম্যাচ শেষ হলে ফিরে যাবেন।
সিএবি-র কাছে ধাক্কাটা যে বেশ জোরালো, সন্দেহ নেই। কিন্তু ইডেনের হাজার তিরিশেক দর্শক? স্পট ফিক্সিংয়ের জেরে তাঁদের ধাক্কাটাও কি খুব কম হল? ক্লাব হাউসে প্রতি চার দর্শক পিছু একজন আইবি অফিসার সাদা পোশাকে থাকলেন। অ্যান্টি করাপশন অফিসাররা সারা দিনের সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে বৈঠকে বসলেন দফায় দফায়। কিন্তু অকল্পনীয় ব্যাপারটা ঘটল ক্লাবহাউসে। প্রত্যেক দর্শকের কাছে গিয়ে নাম-ধাম, ঠিকানা কাগজে লিখে নিল পুলিশ!
ইডেনে ম্যাচ দেখতে গিয়ে নিজেদের ঠিকুজি-কোষ্ঠী দর্শককে জমা দিতে হচ্ছে, এ জিনিস আজ পর্যন্ত কেউ দেখেছে? না শুনেছে? সিএবি কর্তারা আবার শুনিয়ে রাখলেন ফাইনালে ভোগান্তি আরও বাড়বে বই কমবে না! |