চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল শুরুর আগেই ইংল্যান্ডের মাঠে জার্মান বোমাবর্ষণ! শনিবার রাতের আটচল্লিশ ঘণ্টা আগেই চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এ বার ‘জার্মান ডাবল’ হচ্ছেই।
একেই তো উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের ইতিহাসে এই প্রথম বার দু’টো জার্মান ক্লাব মুখোমুখি হচ্ছে। তার ওপর ওয়েম্বলিতে ইতিহাস গড়ার দু’দিন আগেই স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে অলিম্পিক লিয়ঁ-কে ১-০ হারিয়ে মেয়েদের উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেতাব তুলে নিয়েছে ভিএফএল উলফস্বার্গ। যার অর্থ, ছেলে-মেয়ে দু’টো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেতাবই এ বার জার্মানি পাড়ি দিচ্ছে।
মুলারের দল বায়ার্ন আবার নিজেদের তাতাতে অন্য আবেগেরও শরণাপন্ন। বায়ার্নের ফাইনাল লাইন আপে একটা জায়গা নিয়েই চিন্তা। সেন্ট্রাল ব্যাকে ব্রাজিলিয়ান দাতের সঙ্গী কে? বাডস্টুবার ফিট থাকলে সেই ‘কে’ নিয়ে প্রশ্নই থাকত না। কিন্তু জার্মান ডিফেন্ডার আপাতত লন্ডন থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরে কলোরাডোর হাসপাতালে শুয়ে, হাঁটুর অস্ত্রোপচারের পর। শনিবার বরুসিয়ার বিরুদ্ধে ফাইনালে বোয়াতেংকে টপকে হয়তো বেলজিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাক বুয়েতেন প্রথম দলে থাকবেন। কিন্তু লাম-সোয়াইনস্টাইগার-মান্ডজুকিচ-রবেনরা সুদূর আমেরিকায় বাডস্টুবারের কাছে তাঁর নিজের ‘২৮’ নম্বর লেখা জার্সি পাঠিয়ে দিয়েছেন। সঙ্গে আবেদন জখম সতীর্থের সমর্থন কালকের ফাইনালে চাই-ই। |
ফাইনাল খেলতে লন্ডন পৌঁছলেন দুই গোলমেশিন।
ডর্টমুন্ডের লেওয়ানডস্কি, বায়ার্নের মুলার। ছবি: রয়টার্স, এএফপি |
বরুসিয়ার ‘মোটিভেশন’ সেখানে আবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে নিজেদের আর্থিক অবস্থানের পার্থক্য! বরুসিয়া আর বায়ার্নের বিখ্যাত রাইভালরি শুধু দক্ষিণ আর পশ্চিম জার্মানির একটা মধ্যবিত্ত আর বিশাল উচ্চবিত্ত ফুটবল ক্লাবেরই নয়। সংঘাতটা বরাবর আদর্শগতও। মাত্র দশ বছর আগেও আর্থিক অনটনে নিজেদের ফুটবলারদের পেমেন্ট মেটাতে দিশাহারা বরুসিয়া ২০ লক্ষ ডলার বায়ার্ন থেকেই ধার নিতে বাধ্য হলেও চিরকাল মনে করে আসছে, মিউনিখের ক্লাবটির প্লেয়ার কেনার ধরনটা ‘আনস্পোর্টিং’। দুই জার্মান দলের ধুন্ধুমার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের প্রাক্কালেও বরুসিয়া কোচ যুরগেন ক্লপ বায়ার্নকে খোঁচা মেরেছেন, “বায়ার্ন মিউনিখ জেমস বন্ডের সিনেমার খলনায়কের মতো!” কারণ, শনিবারের মহাযুদ্ধে ভয়ঙ্কর লেওয়ানডস্কির পিছনে ‘ফ্রি ম্যান’ হিসাবে যাঁকে খেলিয়ে বরুসিয়া আতঙ্ক তৈরি করতে পারত বায়ার্ন ডিফেন্সে, সেই মারিও গোটজে চোটের জন্য শুধু দলের বাইরেই নন, ইতিমধ্যে এই জার্মান অ্যাটাকিং মিডিওকে পরের মরসুমের জন্য সই করিয়েছে বায়ার্ন।
চরম উত্তেজক আবহে শনিবারের ফাইনালে দু’টো দলের ট্যাকটিক্সে পার্থক্য থাকলেও আদত স্ট্র্যাটেজিটা অনেকটা এক। বায়ার্নকে জুপ হেইনকেস ৪-৪-১-১ খেলালে বরুসিয়াকে ক্লপ খেলান ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে। কিন্তু আদতে বায়ার্নে যেমন ‘ওয়ান স্ট্রাইকার’ মান্ডজুকিচের পিছনে ‘ফ্রি ম্যান’ মুলার থাকবেন। তেমনই বরুসিয়ার ‘ওয়ান স্ট্রাইকার’ লেওয়ানডস্কির কাছাকাছি তিন মিডিও থাকলেও আসল লোক ‘ফ্রি ম্যান’ মার্কো রিয়েস। মুলার-রিয়েস যদি ওয়েম্বলিতে দু’দলের মাঝমাঠে দুই মহাগুরুত্বপূর্ণ অ্যাটাকিং ফোর্স হন, তা হলে দু’দলের দুই হোল্ডিং মিডফিল্ডারের জরুরি কাজের ভার থাকবে জাভি মার্টিনেজ আর শ্বেন বেন্ডেজের উপর।
আবার বায়ার্নের দাতে যেমন বিপক্ষের লেওয়ানডস্কিকে ‘‘বিশ্বের সেরা স্ট্রাইকার” বলেছেন। তেমনই বরুসিয়ার হামেলস স্বীকার করেছেন, “বায়ার্নের কাছে এ বার বার্সেলোনা-জুভেন্তাসের উড়ে যাওয়ার পিছনে রবেন-রিবেরি উইঙ্গার জুটির প্রচণ্ড গতিতে মুহুর্মুহু জায়গা অদলবদল।” ফুটবল মহল যে জন্য মনে করছে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে জার্মান-গৃহযুদ্ধ আক্রমণ-প্রতিআক্রমণে আগাগোড়া জমজমাট হবে। প্রাক্তন কিংবদন্তি বায়ার্ন গোলকিপার অলিভার কান তাঁর পুরনো দলের একটা খারাপ রেকর্ড নিয়েই চিন্তিত। “বায়ার্ন কিন্তু ইদানীং ফাইনালে উঠলেই হারছে। ২০১০ আর ’১২-য়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে হেরেছে। গত মরসুমে জার্মান কাপে ক্লপের বরুসিয়ার কাছেই পাঁচ গোল হজম করেছিল।” যার পালটা আবার বর্তমান বায়ার্ন গোলকিপার ন্যয়ারের গলায়, “বরুসিয়া এ মরসুমে চার বারে এক বারও হারাতে পারেনি আমাদের।”
ন্যয়ারের দল শনিবার ওয়েম্বলি থেকে জিতে বেরনোর ব্যাপারে এতটাই নিশ্চিত যে, পার্টি করার জন্য লন্ডনের টিম হোটেলের বলরুম সে দিন ভোররাত পর্যন্ত আগাম ‘বুক’ করে রেখেছে!
|
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের টুকিটাকি |
• বায়ার্ন-বরুসিয়া মোট ৯৫ সাক্ষাতে বায়ার্নের জয় ৪১, বরুসিয়ার জয় ২৫। ড্র ২৯ বার। এ মরসুমে দু’দলের চার বার সাক্ষাতে বায়ার্ন জয়ী ২ বার। বাকি দু’বার ড্র।
• একই দেশের দুই ক্লাবের মধ্যে ফাইনাল এই নিয়ে চতুর্থ বার। ২০০০-এ রিয়াল-ভ্যালেন্সিয়া (স্পেন)। ’০৩-এ এসি মিলান-জুভেন্তাস (ইতালি)। ’০৮-এ ম্যান ইউ-চেলসি (ইংল্যান্ড)-র পর আবার।
• সবচেয়ে বেশি বার ফাইনাল খেলার ব্যাপারে বায়ার্ন তিন নম্বরে (৯ বার)। শীর্ষে রিয়াল মাদ্রিদ ১২ বার।
• বরুসিয়ার ফাইনালে সাফল্য ১০০ শতাংশ। এক বারই ’৯৭-এ ফাইনালে উঠে চ্যাম্পিয়ন। শতাংশের বিচারে সবচেয়ে সফল টিম হিসাবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নজিরও বরুসিয়ার। ’৯৭-এ তারা ১১ ম্যাচের ৯টা জেতে। সাফল্য ৮১.৮%। |
|
আজ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে
বায়ার্ন মিউনিখ বনাম
বরুসিয়া ডর্টমুন্ড (ভারতীয় সময়, রাত ১২-১৫) |