মাত্র আধ ঘণ্টার সফর। তাতেই সল্টলেকের নলবন মৎস্য-প্রকল্পের খোলনলচে বদলে ফেলার পরিকল্পনা জানিয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার বিকেলে সরেজমিন ওই ভেড়ি এলাকা পরিদর্শন করে মুখ্যমন্ত্রী এমন বার্তাই দিলেন বিভাগীয় মন্ত্রী থেকে আধিকারিকদের। এই এলাকা নিয়ে সার্বিক ভাবে সুসংহত একটি পরিকল্পনা করতে চলেছে রাজ্য সরকার।
এ দিন নলবন মৎস্য-প্রকল্প এলাকার বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী। এটি আগে রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগমের আওতায় ছিল। বর্তমানে এটি মৎস্য দফতরের অধীন। মোট ৪৩৪.২৭ একর নিয়ে এই প্রকল্প এলাকার মধ্যে ২০.৭৫ একর স্থলভূমি ও বাকি ৪১৩.৫২ একর জলভূমি। এ ছাড়াও প্রায় ৬.২৯ একর জমি খালি পড়ে রয়েছে। জলাশয়টি মাছচাষ ও নৌকাবিহারের জন্য ব্যবহার করা হয়।
মহাকরণ সূত্রে খবর, নলবনের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর মতে, এত বড় জায়গা দেশলাই বাক্সের মতো বিভিন্ন ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে ‘অপব্যবহার’ করা হচ্ছে। তা নিয়ে আধিকারিকদের কাছে বিরক্তিও প্রকাশ করেন তিনি। তাঁর ইচ্ছা, সমগ্র এলাকাকে নিয়ে একটি সুসংহত পরিকল্পনা করা হোক।
কেমন সে পরিকল্পনা? সূত্রের খবর, একটি বৃত্তের মধ্যে নিয়ে আসা হবে সমগ্র এলাকা। স্থলভূমিতে পার্কোম্যাট, ফুড পার্ক, অ্যাম্ফিথিয়েটার, পর্যটকদের ‘ওয়াকওয়ে’র পাশাপাশি একটি সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্র, জলাশয় এলাকায় বিভিন্ন ক্রীড়াকেন্দ্রিক ব্যবস্থার পরিকল্পনাও বিবেচনায় রয়েছে। সব মিলিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছা, এমন একটি বিনোদন কেন্দ্র তৈরি হোক এই ৪৩৪ একর এলাকায়, যেখানে সপরিবার মানুষ সময় কাটাতে পারেন। |
তবে স্রেফ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন নয়। ভেড়ি এলাকার পরিবেশকে বজায় রাখতে রীতিমতো কড়া হাতে ব্যবস্থা নিতে চলেছে রাজ্য। সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে খবর পৌঁছেছে যে, স্থানীয় পুর-প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই এই প্রকল্পের একটি অংশ বিয়েবাড়ির জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। যাতে তা না হয়, এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের কাজ হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে এ দিন বিধাননগর পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তীকে নির্দেশ দেন মমতা।
পাশাপাশি, মৎস্য দফতরের একটি প্রেক্ষাগৃহ রবীন্দ্র নিকেতন এলাকায় একটি ঘর ভেঙে দিয়ে ওই অংশটি জলের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার নির্দেশও দেন মুখ্যমন্ত্রী। জলাশয় এলাকা যাতে কোনও ভাবেই না কমে যায়, সে দিকেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার বার্তা দেন আধিকারিকদের।
বিকেল পাঁচটার কিছু পরে মমতা প্রথমে নলবনের পার্কোম্যাটের কাজ দেখতে যান। মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র, মৎস্য দফতরের সচিব সুবেশ দাস-সহ অন্য আধিকারিকদের নিয়ে পুরো এলাকাটি পরিদর্শন করেন তিনি। পার্কোম্যাট নিয়ে সবিস্তার পরিকল্পনা তাঁকে জানানো হয়। মুখ্যমন্ত্রী আধিকারিকদের বেশ কিছু পরামর্শ দেন।
সেখান থেকে বেরিয়ে গাড়িতে না উঠেই রাস্তা ধরে হাঁটতে শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিকে তাঁর আগমনের কথা জানতে পেরে নবদিগন্ত তথ্যপ্রযুক্তি তালুকের কর্মীরা সেখানে ভিড় করেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, বিধাননগর পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী-সহ অন্য আধিকারিকেরাও হাঁটতে শুরু করেন। বিধাননগর কমিশনারেটের আধিকারিক থেকে পুলিশকর্মীরা তখন ভিড় সামলাতে ব্যস্ত। প্রায় ৫০০ মিটার হাঁটার পরে নলবন ফুডপার্কের মধ্যে ঢুকে যান মমতা। চার দিক ঘুরে দেখে ১০ মিনিট পরে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়েন তিনি। গেটের বাইরে আইটি কর্মীরা তাঁকে শুভেচ্ছা জানান।
এর পরে মৎস্য দফতরের রঙিন মাছের প্রদশর্নী ও বিক্রয় কেন্দ্রে এবং মৎস্য দফতরের রবীন্দ্র নিকেতন কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেও বেশ কিছু পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও মৎস্য দফতরের ওই কেন্দ্রে যাওয়ার পথে নলবন ভেড়ির মূল গেটের সামনে তখন সেখানকার ঠিকা শ্রমিকেরা বেতন, প্রভিডেন্ট ফান্ড-সহ বিভিন্ন আর্থিক দাবিদাওয়া প্ল্যাকার্ডে লিখে অবস্থান করছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাঁদের সমস্যা জানানোর ইচ্ছাতেই তাঁরা সেখানে জড়ো হয়েছিলেন বলে ওই শ্রমিকদের দাবি। মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই তাঁদের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছেন বলে সূত্রের খবর। এই প্রকল্প এলাকায় মোট ১৮৪ জন কর্মচারী রয়েছেন। এ ছাড়াও কমিশনের ভিত্তিতে মোট ৬৮ জন মৎস্যজীবী রয়েছেন। তাঁরা যাতে কর্মহীন হয়ে না পড়েন, সেটাও মমতা বিবেচনায় রেখেছেন বলে জানা গিয়েছে। |