কলকাতা পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের পরে এ বার ভবানী ভবনের সিআইডি-দফতর।
চার দিন আগে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল ব্র্যাঞ্চের কার্যালয়ে আচমকাই পরিদর্শনে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর শুক্রবার সকাল সওয়া ১১টা নাগাদ মহাকরণ যাওয়ার পথে মুখ্যমন্ত্রী আচমকাই ঢুকে পড়েন রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশের দফতরে। তাঁর এই আচমকা সফর ঘিরে প্রশ্ন তুলেছে পুলিশেরই একটি মহল। তাদের দাবি, যে হেতু ভবানী ভবন একটি তদন্ত কেন্দ্র, তাই সেখানে এ ভাবে বিনা নোটিসে মুখ্যমন্ত্রী যেতে পারেন না।
পুলিশ সূত্রের খবর, সিআইডি-র নিচু তলার কর্মীদের দীর্ঘদিন ধরে বদলি না-হওয়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজের ঘনিষ্ঠ মহলে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এ দিন রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এ নিয়ে তিনি আলোচনাও করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, গোয়েন্দা বিভাগে বা রাজ্য পুলিশের অনেক বিভাগে পর্যাপ্ত কর্মী যে নেই, তা তিনি জানেন। কত দ্রুত কর্মী নিয়োগ করা যেতে পারে, তা নিয়ে তিনি পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনাও করেছেন। কিন্তু পর্যাপ্ত কর্মী না থাকার সঙ্গে দীর্ঘদিন পুলিশের কোনও বিভাগে বদলি না হওয়াকে তিনি এক করে দেখতে চান না। মুখ্যমন্ত্রী মনে করছেন, নিচু তলায় নিয়মিত বদলি না হলে পুলিশের একাংশের মধ্যে কায়েমি স্বার্থ জন্মাতে পারে।
এ দিন ভবানী ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন তিনি যে যে বিভাগে গিয়েছেন, সর্বত্রই বলেছেন, ‘‘আপনারা সরকারের লোক। সেটা মাথায় রাখবেন। আপনাদের কোনও আচরণের জন্য যেন সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট না হয়।”
রাজ্য পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন ভবানী ভবনে ঢুকে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা দফতর, রাজ্য ট্রাফিক পুলিশের দফতর এবং রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের দফতর পরিদর্শন করেন। গোয়েন্দা দফতরের বিভিন্ন বিভাগও ঘুরে দেখেন তিনি। পুলিশ কর্মীদের কাছে জানতে চান, কোন বিভাগের কাজ কী। স্পেশাল অপারেশন গ্রুপের (এসওজি) কী কাজ, তা-ও জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। ভবানী ভবনে রাজ্য ট্রাফিক পুলিশের ডিজি গৌতমমোহন চক্রবর্তী এবং রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের ডিজি রঞ্জিতকুমার পচনন্দার কার্যালয়েও যান। পচনন্দার সঙ্গে তাঁর কথাবার্তাও হয় বলে পুলিশ সূত্রের খবর। পুলিশ সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী প্রাক্তন সিপিকে বলেন, ‘দেখবেন, লক্ষ রাখবেন, যাতে কোনও পুলিশ অফিসার ২০-২৫ ঘণ্টা ডিউটি না করেন।’ এর পর পচনন্দাকে সঙ্গে নিয়ে ভবানী ভবনের বিভিন্ন ঘর ঘুরে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী। ভবানী ভবনের হাজতের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গী পুলিশ কর্তাদের কাছে ঘরটির বিষয়ে জানতে চান। ঘরটি হাজত জানার পরে মুখ্যমন্ত্রী রসিকতা করে বলেন, “এটা হাজত! না বাবা যাব না!” তাঁর কথায় উপস্থিত সকলেই হেসে ফেলেন। এর পরে মুখ্যমন্ত্রী সিআইডি-র এডিজি শিবাজী ঘোষের ঘরে যান। তাঁর সঙ্গে আধ ঘণ্টা বৈঠক করেন মমতা। বেলা ১২টা নাগাদ ভবানী ভবন থেকে বেরিয়ে মহাকরণের দিকে রওনা দেন মুখ্যমন্ত্রী।
কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ি ফেরার পথে মুখ্যমন্ত্রী ভবানী ভবনের পাশে কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের ভবানীপুর এবং দক্ষিণ-পশ্চিম গার্ডও পরিদর্শন করেন। ওই দুই ট্রাফিক গার্ডের কর্মীদের থাকার জায়গা, শৌচাগার, ক্যান্টিনও ঘুরে দেখেন তিনি। কর্মীদের কাছে তাঁদের অসুবিধার কথা জানতে চান। কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, ওই দুই গার্ডের সামনের রাস্তা ভাঙাচোরা দেখে মুখ্যমন্ত্রী ওই রাস্তা সারানোর ব্যবস্থা করতে কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। ওই দুই ট্রাফিক গার্ডের নিকাশি ব্যবস্থারও আমূল সংস্কার করতে নির্দেশ দেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীর ভবানী ভবন পরিদর্শন নিয়ে রাজ্য পুলিশ কর্তারা কোনও মন্তব্য করতে না চাইলেও ভবানী ভবনের নিচুতলার পুলিশ কর্মীদের একাংশ এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের প্রশ্ন, রাজ্য পুলিশের কোনও কার্যালয়ে অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ থাকলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সেখানে হাজির থাকতে পারেন। কিন্তু সরকারি কোনও অনুষ্ঠান ছাড়া মুখ্যমন্ত্রী আচমকা পরিদর্শন করছেন, এমনটা সচরাচর দেখা যায় না। পুলিশের কাজকর্ম নিয়ে কোনও প্রশ্ন থাকলে মুখ্যমন্ত্রী সাধারণত তাঁর মহাকরণের ঘরে পুলিশ কর্তাদের ডেকে পাঠান। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা বা বৈঠক করেন। পুলিশ কর্তাদের একাংশের আবার দাবি, মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের পুলিশ মন্ত্রীও বটে। তাই দফতরের মন্ত্রী হিসেবে তিনি আচমকা পরিদর্শন করতেই পারেন। পুলিশ কর্তাদের একটি অংশ অবশ্য দাবি করেছে, পুলিশ রেগুলেশন অ্যাক্ট (বেঙ্গল) অনুযায়ী, মুখ্যমন্ত্রী বা পুলিশমন্ত্রী আইনত বিনা নোটিসে থানা বা কোনও তদন্ত কেন্দ্রে আসতে পারেন না। ভবানী ভবন একটি তদন্ত কেন্দ্র। তাই আইন অনুযায়ী, মুখ্যমন্ত্রী এ ভাবে সেখানে যেতে পারেন না বলেই দাবি ওই পুলিশ কর্তাদের। |