গোলমাল থামাতে গিয়ে ইটের ঘায়ে জখম হলেন কাটোয়ার সার্কেল ইনস্পেক্টর শচীন্দ্রনাথ পড়িয়া-সহ চার পুলিশকর্মী। ভাঙচুর হল পুলিশের গাড়িও। বৃহস্পতিবার রাতে কাটোয়ার কুরচি গ্রামের এই ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কাটোয়া থানার সাব ইনস্পেক্টর আবু ইউসুফ এ ব্যাপারে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগে দেওয়াল লিখনকে কেন্দ্র করে সিপিএম এবং তৃণমূলের মধ্যে মারপিট বাধে। সেই ঘটনায় তৃণমূল কর্মী শ্যামাচরণ সাঁতরা জখম হন। তিনি আপাতত কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি। এই ঘটনায় পুলিশ বিশ্বজিত্ মণ্ডল নামে এক সিপিএম সমর্থককে গ্রেফতার করেছে। এ নিয়ে এলাকায় চাপান-উতোর চলছিলই। বৃহস্পতিবার রাতে ফের গোলমাল শুরু হয়।
অভিযোগ, রাতে সিপিএম সমর্থকেরা দেবাশিস ঘোষ নামে এক কংগ্রেস সমর্থক এবং বিশ্বজিত্ দে ও বিশ্বজিত্ বেজ নামে দুই তৃণমূল সমর্থকের বাড়ি ঘেরাও করেন। বিশ্বজিত্ মণ্ডলকে অভিযোগমুক্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে বলে দাবি করা হয়। ঘেরাও চলাকালীন বাড়ি থেকে ধান লুঠ করা হয় বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় কাটোয়া থানার পুলিশ। |
এসআই আবু ইউসুফ অভিযোগ করেন, ঘটনাস্থলের পথে পুলিশ দেখে, দাঁইহাট-মালডাঙা রাস্তার দু’প্রান্তে প্রচুর লোক জড়ো হয়েছেন। এক দিকে রয়েছেন লোকাল কমিটির সদস্য আশিস হাজরার নেতৃত্বে সিপিএম সমর্থকেরা। অন্য দিকে স্থানীয় তৃণমূল নেতা অরূপ মণ্ডলের নেতৃত্বে তাঁর দলের কর্মীরা। পুলিশের গাড়ি পৌঁছতেই কংগ্রেস ও তৃণমূলের লোকজন বিক্ষোভ শুরু করে। হঠাত্ দু’প্রান্ত থেকেই পুলিশকে লক্ষ করে ইটবৃষ্টি শুরু হয়। গাড়িও ভাঙচুর হয়। কাটোয়া থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) তরুণ হালদার-সহ মহকুমা পুলিশের আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে যান। পুলিশ দেখে বেশ কিছু সিপিএম সমর্থক মহিলা বাঁশ নিয়ে তাড়া করে। পুলিশ পাল্টা তাড়া করলে ফের ইট ছোড়া হয়। তখনই সার্কেল ইনস্পেক্টর এবং পুলিশকর্মী মহম্মদ আলমগির, রাজকুমার সান্যাল ও রাধাবল্লভ মণ্ডল আহত হন। পুলিশের আরও অভিযোগ, তাদের সামনেই বোমাবাজি হয়।
পুলিশের উপরে হামলার অভিযোগে কংগ্রেস সমর্থক দেবাশিস ঘোষ ও সিপিএম সমর্থক প্রহ্লাদ মাঝিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, প্রহ্লাদের কাছ থেকে একটি পিস্তল মিলেছে। ঘটনাস্থল থেকে পাঁচটি রড, লাঠি, বোমা উদ্ধার হয়েছে। সিপিএম নেতা আশিসবাবু, তৃণমূল নেতা অরূপবাবু-সহ প্রায় পঞ্চাশ জনের নামে অভিযোগ করেছেন আবু ইউসুফ। এলাকায় পুলিশ পিকেট রয়েছে।
সিপিএমের কাটোয়া জোনাল সম্পাদক অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “কুরচি আমাদের শক্ত ঘাঁটি। পঞ্চায়েত ভোটের আগে পুলিশ ও তৃণমূল হাত মিলিয়ে সেখানে সন্ত্রাস চালাচ্ছে। পুরো এলাকা পুরুষশূন্য করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা অভিযোগও হচ্ছে।” শুক্রবার ওই গ্রামে যান পূর্বস্থলীর তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। তাঁর পাল্টা দাবি, “পঞ্চায়েত ভোটের আগে পরিকল্পনা করে অশান্তি বাধাতে চাইছে সিপিএম। প্রশাসনের লোকজনও এখন তাদের হাত থেকে বাদ যাচ্ছে না।” কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “আমাদের সমর্থকের বাড়িতে লুঠ হল। অথচ তাঁকেই গ্রেফতার করা হল। কেন এমন ঘটল, বুঝছি না।” |