মেয়রের পদত্যাগের দাবি
কোটি টাকার জালিয়াতি, চাপানউতোর পুরসভায়
পুরসভার টাকা তছরূপে অভিযুক্ত পরিবেশ আধিকারিক তাপস ঘোষকে দশ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিলেন আসানসোলের এসিজেএম বিচারক। পুলিশের দাবি, শুক্রবার তাপসবাবু জানিয়েছেন, ওই টাকায় তিনি বেশ কিছু সোনার অলঙ্কার ও বিভিন্ন জায়গায় জমি কিনেছেন। পুলিশ জানায়, আসানসোল পুরসভার একটি স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর টাকাও জালিয়াতি করে নিয়েছেন ওই অভিযুক্ত। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর আধিকারিকদেরও ডাকা হবে বলে জানায় পুলিশ। পুরসভার সংশ্লিষ্ট দফতরের কয়েকজন কর্মীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আধিকারিকের গ্রেফতারের এই ঘটনায় রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে আসানসোল পুরসভার শাসক ও বিরোধীদের মধ্যে।
প্রশ্ন উঠেছে, দিনের পর দিন কীভাবে ওই আধিকারিক এই দুর্নীতি করতে পারলেন?
দুর্নীতিতে মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরোক্ষে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগ দাবি করেছেন অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান তন্ময় গঙ্গোপাধ্যায়। অন্য দিকে, এই ঘটনায় তন্ময়বাবুর বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন পুর চেয়ারম্যান জিতেন্দ্র তেওয়ারি। মেয়র জিতেন্দ্রবাবুর বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন।
পুরসভার চেয়ারম্যান জিতেন্দ্র তিওয়ারি অভিযোগ করেন, “অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান নিষ্ক্রিয় ছিলেন বলেই ওই কর্মী বছরের পর বছর দুর্নীতি করতে পেরেছেন। বুঝতে পারছি না, অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান তাঁর এই কাজে পরোক্ষ মদত দিয়েছিলেন কি না।” জিতেন্দ্রবাবু জানান, নিয়ম অনুযায়ী, পুরসভার বিরোধীদের মধ্যে থেকে অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়। এক্ষেত্রেও তন্ময়বাবুকে চেয়ারম্যান করে ওই কমিটি বানানো হয়েছে। জিতেন্দ্রবাবুর অভিযোগ, গত এক বছরে অ্যাকাউন্টস কমিটির কোনও সভা হয়নি। তাঁর কথায়, “পুরসভার আয় ব্যয় সংক্রান্ত কোনও নথি নজরদারি করেননি অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান। তার ফলেই নিশ্চিন্তে দুর্নীতি চালিয়ে গিয়েছেন ওই কর্মী।”
যদিও এই কথা মানতে নারাজ তন্ময়বাবু ও বিরোধী সিপিএম নেতা তাপস রায়। তন্ময়বাবুর যুক্তি, অ্যাকাউন্টস কমিটি এক বছর আগে গঠিত হয়েছে। অথচ অভিযুক্ত পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে, ২০০৮ সাল থেকে সে এই কাজ করছে। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, পুরসভার মেয়র থেকে হিসাবরক্ষক, হিসাব দফতর ও আভ্যন্তরীন অডিট দফতর এত দিন এই দুর্নীতি ধরতে পারেননি। তাহলে শুধু মাত্র অ্যাকাউন্টস কমিটিকে দায়ী করা হচ্ছে কীভাবে? তাঁর আরও দাবি, গত এক বছরে তন্ময়বাবু মেয়রের কাছে তিন বার চিঠি দিয়ে অ্যাকাউন্টস কমিটির বাকি সদস্যদের নাম জানাতে ও অনুরোধ করেছেন। হিসাব দফতরকেও অ্যাকাউন্টস কমিটির সভা ডাকতে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু মেয়র কথা দিয়েও সেই অনুরোধ রাখেননি বলে অভিযোগ তন্ময়বাবুর। মেয়রের বক্তব্য, “অ্যাকাউন্টস কমিটি একটি বিধিসম্মত ব্যবস্থা। ওই কমিটির সভা ডাকার নিজস্ব অধিকার আছে। তন্ময়বাবু নিজের অজ্ঞতার কারণেই নিজে সভা ডাকতে পারেননি। তাই এই দায়িত্ব তাঁকেই নিতে হবে।”
উল্টো দিকে তন্ময়বাবুর আরও অভিযোগ, “মেয়রের পাশের চেম্বারেই চার বছর ধরে ওই অভিযুক্ত কর্মীর দফতর। সেখান থেকেই তিনি এই অপকর্ম চালিয়ে গিয়েছেন। কার্যত মেয়রের ছায়াসঙ্গী হয়ে থেকেছেন তিনি। অথচ এই জালিয়াতির কথা মেয়র ঘুণাক্ষরেও টের পাননি, তা মেনে নেওয়া যায় না। আসলে মেয়র ঘাড় থেকে দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন বলে দাবি তাঁর।’’ তাঁর আরও দাবি, “মেয়র পরোক্ষে এই ঘটনায় জড়িত। তাঁর পদত্যাগ করা উচিত।”
পুরসভার বিরোধী নেতা তথা প্রাক্তন মেয়র সিপিএমের তাপস রায় সিআইডিকে দিয়ে এই দুর্নীতির তদন্তের দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “সঠিক তদন্ত হলে অনেক রাঘববোয়াল ধরা পড়বে।” পদত্যাগ প্রসঙ্গে মেয়রের বক্তব্য, “আমি কি ওদের দয়ায় মেয়র হয়েছি, যে ওরা চাইলেই পদত্যাগ করতে হবে?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.