ভাল ভাবে কাজ করার জন্য কিছু সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে গত বছর পুরস্কৃত করেছিল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। এ বার ঠিক হয়েছে, পুরস্কার দেওয়া হবে বাছাই করা চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের। পুরস্কারের পোশাকি নাম ‘বঙ্গ চিকিৎসা সম্মান’। আগামী ১ জুলাই বিধানচন্দ্র রায়ের জন্মদিনে অন্তত ৩০ জনের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেবেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এর আগে বেশ কয়েক দফায় শিল্পী, সাহিত্যিক-সহ সংস্কৃতিজগতের নানা দিকের গুণী মানুষদের সম্মান, মহাসম্মান ইত্যাদিতে ভূষিত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনকী, প্রশাসক হিসাবে দক্ষতার জন্য বিডিও-দের মধ্যেও চালু করেছেন ‘বিডিও রত্ন’ পুরস্কার। কিন্তু বঙ্গ চিকিৎসা সম্মান সরকারি ভাবে ঘোষিত হওয়ার আগেই তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে।
কেন এই বিতর্ক? স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, চিকিৎসা সম্মানের পুরস্কার-স্বরূপ বাছাই করা ৩০ জনের প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা, একটি উত্তরীয়, একটি মানপত্র ও অন্যান্য উপহার দেওয়া হবে। স্বাস্থ্যসচিব সতীশ তিওয়ারির কথায়, “এই টাকা খরচ হবে গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের (এনআরএইচএম) ইনস্টিটিউশনাল ইনসেনটিভ স্কিম থেকে।” আর বিতর্ক এখানেই।
কেন্দ্রীয় সরকারের ওই প্রকল্প চালু করা হয়েছে বিশেষ একটি উদ্দেশ্য নিয়ে। এর মূল লক্ষ্য হল সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শিশু জন্মের হার বাড়ানো। যে সব সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতাল এই ক্ষেত্রে লক্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছে, প্রকল্পের অর্থে তাদের পুরস্কৃত করার কথা। পুরস্কার বাবদ পাওয়া টাকা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান নিজেদের পরিকাঠানোর উন্নতিতে খরচ করতে পারবে।
প্রশ্ন উঠেছে, ওই প্রকল্পের থেকে টাকা নিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে কী ভাবে পুরস্কৃত করবে রাজ্য সরকার? তা ছাড়া, প্রতিষ্ঠান পুরস্কৃত হলে পুরস্কার-অর্থ প্রতিষ্ঠানের উন্নতিতেই খরচ হয়। কিন্তু ব্যক্তি পুরস্কৃত হলে, তার সুযোগ থাকে না। তাই ভাল কাজের স্বীকৃতিকে স্বাগত জানালেও, প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করার প্রকল্পের টাকায় কোনও ব্যাক্তিবিশেষকে পুরস্কার দেওয়াতে সায় নেই স্বাস্থ্যকর্তাদের অনেকেরই।
রাজ্য এনআরএইচএমের একাধিক কর্মী-অফিসার বিষয়টিকে আর এক ভাবেও দেখছেন। তাঁদের মতে, স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালগুলিতে কিছু চিকিৎসক অন্যদের থেকে ভাল কাজ করতেই পারেন। তবে সব বিভাগের সামগ্রিক প্রচেষ্টা না থাকলে একটি কেন্দ্র সার্বিক ভাবে ভাল ফল করতে পারে না। তাই পুরস্কার দিতে হলে প্রতিষ্ঠানকেই দেওয়াই শ্রেয়। এক জন-দু’জনকে আলাদা ভাবে পুরস্কৃত করা হলে বাকিদের মনোবল কমতে পারে। তাতে পরবর্তী কালে সামগ্রিক ভাবে ওই প্রতিষ্ঠানের কাজে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
এ ব্যাপারে দিল্লিতে এনআরএইচএমের পশ্চিমবঙ্গ বিষয়ক উপদেষ্টা অনুভব শ্রীবাস্তবের বক্তব্য, “পুরস্কারের ব্যাপারটা আমাদের তেমন ভাবে জানানো হয়নি। এনআরএইচএমের কোনও খাত থেকে ওই টাকা নিলে, আমরা পরে তার কারণ জানতে চাইব।” এনআরএইচএমের দিল্লির আর এক কর্তা রাজ্যের এই উদ্যোগের কথা শুনে কিছুটা বিস্মিত। তিনি বলেন, “বছর দু’য়ের আগে আমরা পশ্চিমবঙ্গকে বলেছিলাম প্রতিষ্ঠানের বদলে ব্যক্তিকে পুরস্কৃত করার ব্যবস্থা চালু করলে কেমন হয়! কিন্তু ওরা রাজি হয়নি। তা হলে এখন আবার উল্টো গাইছে কেন?” ওই কর্তাই জানান, এখন রাজ্য টাকা পাচ্ছে প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করার জন্য। সেই টাকা অন্য ভাবে খরচ হলে তার উপযুক্ত ব্যাখ্যা রাজ্যকে দিতে হবে। |