আত্মীয়ার চিকিৎসা না-পেয়ে চিঠি
স্বাস্থ্যের ব্যাধি বেআব্রু করে সরব সুপার
রকারি হাসপাতালে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগের একটি চিঠি নিয়ে তোলপাড় চলছে স্বাস্থ্য ভবনে।
কিন্তু সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তো আকছারই ওঠে। তা হলে এই চিঠি নিয়ে এত তোলপাড় কেন?
তোলপাড়ের কারণ অভিযোগটা এ বার কোনও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আসেনি। সরকারি চিকিৎসা পরিষেবা কতটা বেহাল, তা নিয়ে এ বার লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন একটি সরকারি হাসপাতালের সুপার। যিনি নিজেও সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় যুক্ত। তাঁর অভিযোগ, নিজের যাবতীয় চেনাশোনা, পরিচিতি ব্যবহার করেও কলকাতার এক সরকারি মেডিক্যাল কলেজে এক নিকটাত্মীয়ার যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করে উঠতে পারেননি তিনি। তার জেরে মুমূর্ষু অবস্থা হয়েছিল ওই রোগিণীর।
ওই সুপারের প্রশ্ন, একটি হাসপাতালের সর্বোচ্চ পদে থেকেও তাঁর যদি এই অবস্থা হয়, তা হলে সাধারণ রোগীরা এই স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় কী পরিষেবা আশা করতে পারেন?
প্রশ্ন তুলেই থামেননি উত্তর ২৪ পরগনার হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালের কার্যনির্বাহী সুপার সাত্যকি হালদার। অভিযোগ জানিয়ে সরাসরি রাজ্যের চিঠি লিখেছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তাকে। তাঁর অভিযোগের চিঠি পৌঁছেছে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও। সরকারি পদে থেকে সরকারি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সরব হওয়ার এমন নজির যে বিরল, মেনে নিচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্তারাও।
সাত্যকিবাবুর বক্তব্য, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার আশায় যান সাধারণ মানুষ। তাঁর এক আত্মীয়ার জরুরি অস্ত্রোপচারের জন্য তিনিও হাবরা হাসপাতাল থেকে রোগিণীকে ‘রেফার’ করেছিলেন স্ত্রীরোগ চিকিৎসায় রাজ্যের তথাকথিত সেরা হাসপাতাল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। এক জন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে সাত্যকিবাবুর দাবি, ওই আত্মীয়ার ডিম্বাশয়ে সিস্টের জরুরি অস্ত্রোপচার প্রয়োজন ছিল। এমনকী ওই অস্ত্রোপচার না-হলে তাঁর জীবন বিপন্ন হতে পারত। কিন্তু সব জানার পরেও দ্রুত অস্ত্রোপচার তো দূরের কথা, মেডিক্যাল কলেজে পরীক্ষানিরীক্ষার নাম করে তাঁকে দিনের পর দিন ফেলে রাখা হয়। সাত্যকিবাবু চিঠিতে লিখেছেন, “ওই পরীক্ষাগুলি করতে এবং জরুরি অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করতে কত সময় লাগতে পারে, চিকিৎসক হিসেবে আমিও তা জানি। কিন্তু ওই রোগিণী যন্ত্রণায় কাতরানো সত্ত্বেও কেউ সেই ব্যাপারে উদ্যোগী হননি। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের।” শেষ পর্যন্ত এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি এবং অস্ত্রোপচার করিয়ে আত্মীয়ার জীবন বাঁচান তিনি। এই ঘটনায় রাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার আসল চিত্রটা ফুটে উঠছে বলে মন্তব্য করেছেন সাত্যকিবাবু।
সরকারি চিকিৎসক হয়েও তিনি সরকারি পরিষেবার বিরুদ্ধে সরব হওয়ার সাহস পেলেন কী ভাবে?
সাত্যকিবাবুর জবাব, “এর মধ্যে সাহসের কোনও প্রশ্ন নেই। দফতরের কোনও ত্রুটি দেখলে একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে তা ধরিয়ে দেওয়া আমার কর্তব্য। তা ছাড়া আমি মেডিক্যাল কলেজের ওই বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র। বিভাগের কর্তাদের কাছে চিঠি লিখে পরিষেবার গাফিলতির দিকটা ধরিয়ে দিতে চেয়েছি। এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলব না।”
এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি মেডিক্যাল কলেজ-কর্তৃপক্ষ। তাঁদের বক্তব্য, এই নিয়ে যা বলার স্বাস্থ্য ভবন থেকেই বলা হবে। আর স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি বিষয়টা ঠিক মনে করতে পারছি না। খোঁজখবর করব।”
তবে স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে হাজারো অভিযোগে এমনিতেই বিব্রত দফতরের কর্তারা। তার উপরে খোদ এক সুপার এমন অভিযোগ করায় স্বাস্থ্যের বেহাল দশাটা আরও বেআব্রু হয়েছে।” সাত্যকিবাবুর চিঠির প্রতিলিপি খাস মহাকরণেও পৌঁছে গিয়েছে বলে জানান ওই শীর্ষ স্বাস্থ্যকর্তা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.