একাশি বছরের এক বৃদ্ধার হাত ধরে কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখছে বাগদা।
প্রাক্তন প্রধান শিক্ষিকা মৃণালিনীদেবীর দান করা জমিতে শিলান্যাস হল বাগদার আইটিআই কলেজের। বৃহস্পতিবার মোবাইলের মাধ্যমে কলেজটির শিলান্যাস করেন রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ মন্ত্রী উপেন বিশ্বাস। উপস্থিত ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল।
অসুস্থ থাকার কারণে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি বলে জানান উপেনবাবু। মোবাইলের মাধ্যমে তিনি বলেন, “মৃণালিনীদেবীর এই কাজ মানুষ সারা জীবন মনে রাখবে। এই আইটিআই কলেজটি এলাকার মানুষের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এলাকার অনেক যুবকের কর্মসংস্থান তৈরি হবে।”
বাগদার হেলেঞ্চা গালর্স হাইস্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষিকা মৃণালিনীদেবী ২০০৪ সালে হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ কলেজ তৈরির জন্য ১ একর ৯৬ শতকের ওই ব্যক্তিগত জমি স্থানীয় একটি ট্রাস্টি বোর্ডকে দান করেছিলেন। বারাসতের তৎকালীন সাংসদ রঞ্জিত পাঁজা কলেজটির শিলান্যাসও করেছিলেন। কিন্তু নানা জটিলতায় সেই প্রকল্প সফল হয়নি। কিছুটা হতাশ হয়েই জমি ফিরিয়ে নিয়ে সেই জমি দান করেছিলেন আইটিআই কলেজ তৈরির জন্য। ২০১২ সালের ৩১ অগস্ট বাগদার সাব রেজেস্ট্রি দফতরে মৃণালিনীদেবী জমির দানপত্র হস্তান্তর করেন। এ দিন হল তারই শিলান্যাস। |
মৃণালিনীদেবীর স্বামী প্রয়াত মনীন্দ্রভূষণ বিশ্বাস এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক ও বনগাঁর দীনবন্ধু মহাবিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক। বনগাঁ ও সংলগ্ন এলাকায় তিনি নিজের উদ্যোগে কয়েকটি স্কুল তৈরি করেছিলেন। মৃণালিনীদেবী বলেন, “উপেনবাবুকে জমিটিতে কলেজ তৈরির ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেছিলাম। বাগদার বেকার ছাত্রছাত্রীদের কারিগরী শিক্ষার জন্য জমিটি দান করেছি। তবে এর জন্য অনেক লড়াই করতে হয়েছে।” তবে তাঁর খেদ, “আমি চাই কলেজটির নামকরণ হোক আমার প্রয়াত স্বামীর নামে। কিন্তু সেটা এখনও করা হয়নি।”
বাগদার বিডিও খোকনচন্দ্র বালা বলেন, “আইটিআই কলেজ তৈরির জন্য কারিগরী শিক্ষা দফতর ইতিমধ্যেই ৫ কোটি ৪৫ লক্ষ ৫৮ হাজার টাকা অনুমোদন করেছে। টেন্ডারও হয়ে গিয়েছে। দু’এক দিনের মধ্যেই কাজ শুরু হবে।” নামকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কলেজের নাম পরে ঠিক করা হবে। মৃণালিনীদেবী যদি এ বিষয়ে আমাদের কাছে লিখিত আবেদন করেন, তা হলে নিশ্চয়ই বিবেচনা করা হবে।” ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কলেজে ৫টি বিভাগে (ট্রেডে) মোট ১০টি ইউনিট থাকছে। প্রতিটি ইউনিটে ২০ জন ছাত্রছাত্রী পড়ার সুযোগ পাবে। দু’বছরের মধ্যেই পঠনপাঠন শুরু হবে।
রাজ্যের শিক্ষা মানচিত্রে বাগদা পিছিয়ে পড়া এলাকা হিসেবেই পরিচিত। এলাকার লোকসংখ্যা ২ লক্ষ ৪২ হাজার ৬৭৫ জন। বেশিরভাগ মানুষই দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাস করেন। এলাকায় কলেজ বলতে বি আর অম্বেডকর শতবার্ষিকী কলেজ। কিন্তু সেই কলেজের কোনও নিজস্ব ভবন নেই। ক্লাস হয় স্থানীয় হেলেঞ্চা হাইস্কুলে। এলাকায় কাজ না থাকায় অনেকেই বাইরে চলে চান কাজের খোঁজে। কারিগরী শিক্ষার এই কলেজ কবে তৈরি হবে, এখন তারই অপেক্ষায় গ্রামবাসীরা। |