রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায় ও প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত • কলকাতা |
মহাকলঙ্কের ছায়া এতই দীর্ঘ যে দুই মহাতারকার মুখোমুখি সাক্ষাতেও ‘ওয়াল’ তুলে দিচ্ছে।
বৃহস্পতি থেকে রবিবার শহরে যেন চার দিনের অন্য পুজো। যেখানে মাটির বিগ্রহ নেই। কিন্তু যাঁরা আছেন, তাঁরা ক্রিকেটবিশ্বের জলজ্যান্ত বিগ্রহ বিশেষ। সচিন আছেন। দ্রাবিড় আছেন। ধোনিও আসবেন। আইপিএল সিক্সের বোধন-লগ্নে যেমন ছিল, বিসর্জনের আবহেও তাই। সেই ক্রিকেট-কলকাতার মোহনায় মিশছে ক্রিকেট-ভারত। স্বাভাবিক ধারণা বলে, মঞ্চটা হওয়া উচিত উৎসবের। কিন্তু আতঙ্কের কাঁটাকে যে শত চেষ্টাতেও উপড়ে ফেলা যাচ্ছে না!
নইলে আর রাহুল দ্রাবিড়কে রাত পৌনে ন’টায় ইডেনে ঢুকতে হয়? সারা দিন হোটেলে ঘরবন্দি থেকে অপেক্ষা করতে হয়, কখন মিডিয়ার ‘কৃপাদৃষ্টি’ সরবে তাঁর প্রিয় ইডেন থেকে?
সাদা একটা টি-শার্ট, সঙ্গী প্যাডি আপটন। ধ্রুপদী কর্নাটকীর যখন ইডেনে আত্মপ্রকাশ ঘটল, সচিন তখন ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে টিম বাসে। মুখোমুখি দেখা-সাক্ষাতের কোনও সম্ভাবনা ছিল না। অথচ দ্রাবিড় এ দিন শহরে এসেছেন দুপুর-দুপুর। রাজস্থান টিমটা এল ভাগে-ভাগে। ধরেই নেওয়া হচ্ছিল, প্র্যাক্টিস সেশনের রাস্তায় না গেলেও দ্রাবিড় অন্তত সন্ধের দিকে এক বার আসবেন ইডেনে। বাইশ গজ দেখার রুটিন ব্যাপারটা সেরে ফেলতে।
কোথায় কী? আর একটু দেরি করলে বোধহয় ইডেন কিউরেটর প্রবীর মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখাও হত না। মিনিট পাঁচেক কথা হল দু’পক্ষে। ‘গুড উইকেট দাদা’ বলেও গেলেন দ্রাবিড়। কিন্তু সবই মোটামুটি লোকচক্ষুর অন্তরালে। সাকুল্যে দেড়খানা মিডিয়া ক্লাবহাউস লোয়ার টিয়ারে তখন। |
ইডেনে সচিন-রাইটের ছবি তুলেছেন শঙ্কর নাগ দাস। |
কী করা যাবে, রাহুল দ্রাবিড়ের তো উপায় নেই!
গোটা ইডেনে আজ থেকে দুশোটা সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে। যার পঞ্চাশটা ক্লাবহাউসের জন্য বরাদ্দ। প্লে-অফের দুটো টিমের সঙ্গে ইতিমধ্যেই জুড়ে দেওয়া হয়েছে এক জন করে অ্যান্টি-করাপশন অফিসার। বাকি দুই অফিসার শুক্রবার ম্যাচের দিন এসে পৌঁছচ্ছেন। টিম হোটেলে আবার মিডিয়া, ফ্যানেদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। যদি বা গলতে পারেন, হাউস ফোন পর্যন্ত এগিয়েই থেমে যেতে হবে। স্পট-ফিক্সিং কেলেঙ্কারির পর দ্রাবিড়-বাহিনী একটা নতুন নিয়ম চালু করেছে। অ্যাওয়ে ম্যাচে কোথাও প্র্যাক্টিস নয়। সম্ভব হলে ম্যাচের দিন ছাড়া মাঠকেও এড়িয়ে যাও। কোটলায় প্র্যাক্টিস হয়নি। কলকাতাতেও হল না। টিম ম্যানেজমেন্টের উচ্চপদস্থ কর্তা থেকে জুনিয়র ক্রিকেটার মোবাইল হয় বন্ধ, নইলে বেজে যাচ্ছে।
জানা গেল কেলেঙ্কারির পর টিমে যে পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়েছে, তার মধ্যে এটাও পড়ছে। মিডিয়া কেন, যোগাযোগের যে কোনও মাধ্যম থেকে নিজেদের দূরে রাখা। এ-ও শোনা গেল, পুনর্গঠনের কাজে যতটা অগ্রণীর ভূমিকা দ্রাবিড় নিয়েছেন, ঠিক ততটাই নিয়েছেন হেড কোচ প্যাডি আপটন। শ্রীসন্ত-কেলেঙ্কারির পর গোটা টিমকে নাকি মিটিং রুমে ডেকে বলে দেওয়া হয়, তোমাদের মধ্যেও যদি কেউ এ রকম কিছু করে থাকো, তা হলে সেটা বলে দাও। আর যদি না করে থাকো, তা হলে চলো সবাই মিলে চেষ্টা করি হারানো সম্মান ফিরে পাওয়ার।
অর্থাৎ, অভিশাপ কাটিয়ে রূপকথার খোঁজ।
আর তিনি, চলমান রূপকথা?
গুনে গুনে ঠিক আট পা দৌড়ে এসে একের পর এক ডেলিভারি করে যাচ্ছেন। স্পিন নয়, মিডিয়াম পেস। কিন্তু তাঁর মিডিয়াম পেস কে দেখতে চেয়েছে? সচিন তেন্ডুলকর ব্যাটটা হাতে তুলবেন কখন?
নাহ, ব্যাট হাতে উঠল না। ম্যাচের আগের দিন নেটে না ঢুকলেও তিনি নকিং করেন। এ দিন সেটাও নয়। বরং পোলার্ড-ডোয়েন স্মিথদের ক্লাস নিতে দেখা গেল সচিনকে। বিভিন্ন শটের ক্ষেত্রে ব্যাটের অ্যাঙ্গেল কী হওয়া উচিত, শ্যাডো করে দেখিয়ে দিলেন। ব্যাট নিয়ে নয়, খালি হাতে। তাই ডোয়েন স্মিথ যতই বলে যান, “আশা করছি সচিনকে কাল পাব,” নিঃসন্দেহ হওয়া যাচ্ছে না। এ দিনও তো মাঝে মাঝে ফিজিওকে ডেকে বাঁ কব্জির শুশ্রূষা চলল।
তবে সচিন খেলুন না খেলুন, শহরের যুক্তি বলছে আজ এগিয়ে মুম্বই। টিমটার কাঠিন্য আলাদা। কিন্তু শহরের মন? সেখানে যুক্তির পাল্টা তর্ক উঠছে। বলা হচ্ছে, পোলার্ডের ওষুধ হিসেবে ওয়াটসন রইল। ওদের রোহিত শর্মা থাকলে এদের ব্র্যাড হজ আছে। ওদের মহানায়কের নাম সচিন রমেশ তেন্ডুলকর হলে এদেরও তো একটা রাহুল শরদ দ্রাবিড় আছে।
যুক্তি না মন কে এগিয়ে, কে পিছিয়ে, উত্তর দেবে শুক্রবারের ছেষট্টি হাজারের ইডেন। কিন্তু এই প্রথম বোধহয় শহরে দ্রাবিড়ের মর্যাদা আর পার্শ্বনায়কের নয়। সচিনের সঙ্গে সমানে-সমানে।
‘পোয়েটিক জাস্টিস’ কথাটা যে বাঙালির বড্ড প্রিয়!
|
শুক্রবারের আবহাওয়ার পূর্বাভাস, শহরে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে ইডেনের প্লে-অফ যদি ভেস্তে যায়, তা হলে সেটা পিছিয়ে হবে ২৫ মে, শনিবার। যদি ২৪ মে একটাও বল না হয়, তা হলে সে দিনের টিকিট দিয়েই পরের দিন মাঠে ঢোকা যাবে। শনিবারও বৃষ্টিতে ম্যাচ ভেস্তে গেলে ফাইনালিস্ট ঠিক হবে বোল-আউটে। মাঠে বোল-আউট না করা গেলে তা হবে সিএবি ইন্ডোরে। |