আইপিএল-কে আবার কলকাতায় ফিরে আসতে দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে! কলকাতা আমার টিমের হোম। অথচ কেকেআর প্লেয়ারদের ছবি দেওয়া গোটা কয়েক বিজ্ঞাপনী হোডির্ং বাদে আমি বা আমার টিম নিজের শহরেই নেই। ওই বিলবোর্ডগুলোও কলকাতার ইদানীং ঝড়-বাদলে শেষমেশ টিকে থাকবে কি না তা নিয়েও আমার সন্দেহ আছে। এ বার কেকেআরের একটা প্রচারমূলক অনুষ্ঠানে এক দিন শাহরুখ ভাই বলেছিল, “আইপিএল ফাইনাল এ বার কলকাতায় হবে। এবং শুধু এটাই বলতে চাই, আগর হাম নে ইডেন মে ফাইনাল নেহি খেলা তো কেয়া খেলা!” শাহরুখ ভাই, আমরা দুঃখিত। আমরা এ বার ফাইনাল খেলছি না। নিজের সমস্ত স্পোর্টসম্যান স্পিরিট অটুট রেখেও এই চিন্তাটা প্রায় মৃত্যুর মতো যে, ইডেন গার্ডেন্সে আইপিএল ম্যাচ হচ্ছে অথচ কেকেআর-ই নেই!
একই সঙ্গে আমি ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্যও দুঃখবোধ করছি। যে ভাবে সাম্প্রতিক সব ক্রিকেট-দুর্নীতির খবরের ধাক্কায় আদত ক্রিকেট খেলাটাই অনেক পিছনে পড়ে গিয়েছে সেই কারণে। এক জন পারফর্মারের কাছে জঘন্যতম অনুভূতি এটাই যে, যখন দর্শকেরা তার আসল পারফরম্যান্সের চেয়েও বেশি আলোচনা করে মঞ্চটারই সততা নিয়ে। কামনা করি, আলোচনাটা যেন খুব তাড়াতাড়ি দুর্নীতি থেকে আবার ক্রিকেটে ফিরে আসে।
ইডেনে আসা তিনটে টিমকেই আমার শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আশা করব, সবচেয়ে ভাল দলটাই চ্যাম্পিয়ন হবে। কেকেআরও পরের বছর যে চেহারাতেই ফিরুক, ইডেন-জনতার আবার হৃদয় জয় করবে বলেও আশা রাখি।
খুব কম লোকেরই হয়তো মনে থাকবে যে, আমি লেগ স্পিন বোলিংটাও করে-টরে থাকি। এও জানি যে, আমার সবচেয়ে ‘অন্ধ ভক্ত’ শেন ওয়ার্নের হয়তো ব্যাপারটা পছন্দের নয়। কিন্তু আমার লেংথ-লাইন ঠিক থাকে। এমনকী নিজের দিনে আমার ডেলিভারিতে ড্রিফ্ট, ডিপ, স্পিন এবং বোনাস হিসেবে বাউন্সও থাকে। লেগ স্পিনের প্রতি আমার প্রেমের কারণ শুধু এর শিল্প, বিজ্ঞান কিংবা রোম্যান্সটাই নয়। খুব ছোটবেলা থেকে ক্রিকেট খেলাটার সঙ্গে আমার গভীর ভাবে জড়িয়ে থাকতে চাওয়াটাও লেগ স্পিনের প্রতি ভালবাসার একটা কারণ। আমি সব সময় মাঠের অ্যাকশনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকতে চাই। হয়তো সে জন্য আমি ওপেনিং ব্যাটসম্যানও হয়েছি। ড্রেসিংরুমে বসে অন্যদের ব্যাটিং দেখার ধৈর্য আমার কোনও কালেই ছিল না।
দুর্ভাগ্যবশত, ঠিক সেটাই গত ১৯ মে কেকেআরের অভিযান ফুরোতেই আমি করে চলেছি। আমার নিজের শহর দিল্লিতে প্লে অফের দু’টো ম্যাচ টিভিতে দেখলাম। কোটলা থেকে আমার বাড়ি ১০-১২ কিলোমিটার দূরে। দিল্লির আন্দাজে যেটা তেমন বেশি কোনও দূরত্ব নয়। কিন্তু আমার এক বন্ধু যখন আমাকে মাঠে বসে খেলা দেখার প্রস্তাব দিল, আমি ঘৃণা ভরে প্রত্যাখান করেছি। টিভিতে যে খেলা দেখলাম, সেটাও আমি সচরাচর যে পরিমাণ পপকর্ন আর লেমোনেড-সহ দেখে থাকি, সে সব ছাড়াই। কী ভাবেই না আমার পৃথিবীটা পালটে গিয়েছে! প্ল্যাটফর্মগুলো চোখের পলকে উধাও হয়ে যায় এ রকম একটা দ্রুত গতির এক্সপ্রেস ট্রেনে জার্নির বদলে আমি যেন পুরনো দিল্লির অলিগলিতে গাড়ি ড্রাইভ করছি! যেখানে ট্রাফিক নড়েই না। আইপিএলের অর্থই যেখানে ট্র্যাভেল-প্র্যাক্টিস-ম্যাচ, তার পর আবার ট্র্যাভেল, সেখানে কিনা আমার কাছে ব্যাপারটা দাঁড়িয়েছে জিম-প্র্যাক্টিস-বাড়ি, তার পর টিভি দেখতে বসে যাওয়া।
কাজ না করে বসে থাকতে আমি ঘৃণা করি। |