ছ’সাত বছর আগের একটা ঘটনার কথা মনে পড়ছে। করাচিতে প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলানোর সময় হঠাৎ মাটিয়ে লুটিয়ে পড়লেন এক আম্পায়ার। অচৈতন্য অবস্থায় তাঁকে ভর্তি করা হল হাসপাতালে। সেখানকার ডাক্তাররা তো সেই আম্পায়ারকে পরীক্ষা করে অবাক। বুঝেই উঠতে পারছেন না, হৃদযন্ত্রের এমন অবস্থা নিয়ে কী করে সারা দিন মাঠে দাঁড়িয়ে আম্পায়ারিং করতেন ভদ্রলোক! চিকিৎসকেরা সে দিনই জানিয়ে দিয়েছিলেন, বাইপাস সার্জারি ছাড়া তাঁকে বাঁচানোর কোনও উপায় নেই। বাইপাস সার্জারিতে শেষ পর্যন্ত ওই আম্পায়ার বাঁচলেন।
আম্পায়ারের নামটা জানেন?
আসাদ রউফ!
যাঁকে আজ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে সরিয়ে দেওয়া হল।
জানি না, যে লোক হার্টের সমস্যাকে পাত্তা না দিয়ে আম্পায়ারিং করে যেতে পারেন, সেই একই লোক আবার কী ভাবে স্পট ফিক্সিং কাণ্ডে সন্দেহের আওতায় চলে আসতে পারেন। হাসপাতালে সে দিন লাইফলাইন পেয়েছিলেন রউফ। জানি না, এ বার আর পাবেন কি না।
কলকাতায় আপনাদের কাগজের জন্য যখন লেখাটা লিখছি, ততক্ষণে পাকিস্তান বোর্ডের চেয়ারম্যান জাকা আশরাফের সাংবাদিক সম্মেলন শেষ। রউফকে নিয়ে প্রশ্ন উঠল এবং আশরফ সেটা প্রায় এড়িয়ে গেলেন। বলে দিলেন, আইসিসি-র প্যানেলের আম্পায়ার কোথায় যাচ্ছে, কী করছে, পাক বোর্ড কী ভাবে জানবে? উত্তরটা অপ্রত্যাশিত নয়। এক দিক থেকে ঠিকও। আর পাক ক্রিকেটমহলের বক্তব্য হচ্ছে রউফকে নিয়ে যখন এত বিতর্ক আগে থেকেই ছিল, তা হলে আইপিএলে ওেঁক কোন যুক্তিতে দায়িত্ব দেওয়া হল? আইসিসি-ই বা কেন প্যানেলে রেখেছে রউফকে?
দেখলাম আইসিসি বলেছে, মুম্বই পুলিশ রউফকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলেই চ্যাম্পিয়ন ট্রফি থেকে ওঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঘটনাটা কী, কোথাও স্পষ্ট করে বলছে না। মাস কয়েক আগে এক ভারতীয় মডেল রউফের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ তুলেছিলেন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে বাদ কি সেই জন্য? নাকি স্পট-ফিক্সিং কাণ্ডের জন্য?
ভারতীয় মিডিয়া দ্বিতীয় কারণটাকেই ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে আমার মনে হয়, অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত রউফকে দোষী সাব্যস্ত করে ফেলা ঠিক হবে না। মনে রাখা ভাল, ভদ্রলোকের কিন্তু প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে রেকর্ড বেশ ভাল। একাত্তরটা ম্যাচ খেলে সাড়ে তিন হাজার রান আছে। আম্পায়ার হিসেবে যথেষ্ট সুনাম। পাকিস্তানে ওর ভাবমূর্তিও পরিচ্ছন্ন। একেবারে নিশ্চিত না হয়ে ওঁর সম্পর্কে এ সব বলা ঠিক নয়। তবে রউফ যদি দোষী প্রমাণিত হন, তা হলে ওঁর শাস্তি আমরাও চাই। পাক বোর্ডও চায়।
আসলে আমাদের দেশটারই বদনাম হয়ে গিয়েছে ক্রিকেটবিশ্বে। কিছু ঘটলেই এখন লোকে আগে পাকিস্তান-লিঙ্ক খুঁজে বের করতে চায়। মনে রাখবেন, গত বছরই এক ভারতীয় চ্যানেলের স্টিং অপারেশনে ধরা পড়া দুই আম্পায়ার নাদিম ঘাউরি এবং আনিসকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিল পাক বোর্ড। অন্যায় কিছু ঘটলে কিন্তু আমরাও মুখ বুজে বসে থাকি না। |