পুলিশি নজর আম্পায়ার রউফের দিকে
কাঠগড়ায় এ বার আম্পায়ারও।
আইপিএল জুয়ার জল শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, মনে হচ্ছে সেটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন। ক্রিকেটার, বুকি, হাওয়ালা ব্যবসায়ী, বলিউডের খুচরো অভিনেতা, টালিগঞ্জের উঠতি প্রযোজকের পর্যন্ত হাতে হাতকড়া পড়েছে। খোদ বোর্ড প্রেসিডেন্টের জামাইকে সমন ধরিয়েছে পুলিশ, ধৃত ক্রিকেটারের বান্ধবীকে নিয়ে নতুন বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়কের স্ত্রী। একই দিনে তল্লাশি হয়েছে কলকাতা, মুম্বই, জয়পুর, অজমেরে। এবং এত নাটকের পরেও সর্বশেষ চমক হল তদন্তে নাম উঠে আসায় আইপিএলের এক আম্পায়ারের আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে বাদ পড়া!
পাক আম্পায়ার আসাদ রউফ এর আগেও এক মডেলের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বিতর্কে ফেঁসেছেন। আইপিএলে তাঁকে প্যাঁচে ফেললেন কুস্তিগির-পুত্র বিন্দু দারা সিংহ। বিন্দুর মোবাইল থেকেই রউফের নম্বর পেয়েছে মুম্বই পুলিশ। দু’জনের মধ্যে ফোনালাপ ছিল। খবর ছড়িয়ে পড়তেই বিবৃতি পাঠিয়ে আইসিসি-র চিফ এগ্জিকিউটিভ ডেভিড রিচার্ডসন বলেন, “আসাদ রউফের কাজকর্ম নিয়ে মুম্বই পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছে। এই খবর উঠে আসার পর সকলের ভালর কথা ভেবেই আসাদকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে রাখা হচ্ছে না।”

আসাদ রউফ
আসাদের সঙ্গে বিন্দুর কত বার বা কত ঘনঘন ফোনে কথা হয়েছে, তা অবশ্য ভেঙে বলেনি পুলিশ। তবে এটুকু জানা গিয়েছে, বোর্ড প্রেসিডেন্ট শ্রীনিবাসনের জামাই তথা সিএসকে কর্তা গুরুনাথ মায়াপ্পনের সঙ্গে এক দিনে ৩৫ বার পর্যন্ত কথা বলেছেন বিন্দু। এবং সেটা নাকি ছিল কোনও এক ম্যাচের দিন। আজ চেন্নাইয়ে গুরুনাথের বাড়ি যায় মুম্বই পুলিশের একটি দল। বাইরে ভিড় করা সাংবাদিকদের কোনও প্রশ্নেরই উত্তর দেননি তাঁরা। পরে জানা যায়, গুরুনাথ বাড়ি না থাকলেও তাঁর এক ঘনিষ্ঠের হাতে সমন দিয়ে এসেছে ক্রাইম ব্রাঞ্চ। তাতে বলা হয়েছে, আগামিকাল বেলা ১১টা থেকে ৫টার মধ্যে গুরুনাথকে মুম্বই পুলিশের সামনে হাজির থাকতে হবে। দিনভর গা ঢাকা দেওয়া গুরুনাথ নাকি পরে আইনজীবী মারফত জানিয়েছেন, সোমবার পুলিশের কাছে হাজিরা দেবেন তিনি।
স্পষ্টতই চাপে শ্রীনিবাসন। গুরুনাথ নিয়ে হাজারো প্রশ্নের মুখে চেন্নাইয়ের সাংবাদিকদের সামনে আজ চেঁচিয়েই উঠলেন তিনি। বললেন, “বিন্দুর বন্ধু মানে কি আমার জামাইও ফিক্সার? বিন্দুর সঙ্গে অনেকের ছবিই তো মুম্বই পুলিশ পেয়েছে, তা সে প্রীতি জিন্টাই হোন বা সাক্ষী ধোনি। তার মানে কি ওঁরাও বেটিং করেন? আপনারা যা ইচ্ছে লিখতে পারেন। আমি মোটেও সিএসকে-র মালিক নই। যে কোম্পানিটা টিমের মালিক, আমি তার অংশীদার।”
বিন্দুর সঙ্গে সাক্ষীর এক ফ্রেমে ছবিটাই যদিও সিএসকে তথা শ্রীনিবাসনের অস্বস্তির একমাত্র কারণ নয়। আজ সকাল থেকেই তাঁকে ঘিরে নতুন গল্প। যে গল্প বলছে, শান্তাকুমারন শ্রীসন্তের সঙ্গে তাঁর বান্ধবীর প্রথম আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন এমএসডি-র স্ত্রী। শ্রীসন্তের এই বান্ধবীর নামও সাক্ষী সাক্ষী ঝালা। তিনি ধোনির স্ত্রীর প্রাক্তন সহপাঠিনী।
দুই সাক্ষী ঔরঙ্গাবাদে একই প্রতিষ্ঠানে হোটেল ম্যানেজমেন্ট পড়েছিলেন। কোর্স শেষ করে জয়পুরের রামবাগ হোটেলে কিছুদিন শিক্ষানবিশির পর কিংফিশারে বিমানসেবিকার চাকরিও করেছিলেন সাক্ষী ঝালা।
মনে করিয়ে দেওয়া যাক, বুকিদের কাছ থেকে পাওয়া টাকায় সর্বাধুনিক মডেলের একটি ব্ল্যাকবেরি কিনেছিলেন শ্রীসন্ত। সেটি ছিল সাক্ষীকে তাঁর উপহার। পুলিশ বলছে, শ্রীসন্তের সঙ্গে বেশ কিছু ম্যাচ-পরবর্তী পার্টিতে গিয়েছিলেন সাক্ষী। জয়পুরের সোঁয়াই মান সিংহ স্টেডিয়ামে ধোনি-পত্নীর পাশে বসে বেশ কিছু ম্যাচও দেখেছিলেন। ক্যামেরার যাবতীয় নজর যেহেতু ছিল তাঁর বিখ্যাত বান্ধবীর দিকে, ফলে সাক্ষী ঝালাকে কেউ খুব একটা লক্ষ্য করেনি। এখন কিন্তু সব ক্যামেরা তাঁকেই খুঁজছে।
মজার কথা, গত ৬ মে জয়পুরের ম্যাচের পর ‘ধোনির স্ত্রীর পাশে বসা এক মহিলাকে’ নিয়ে শ্রীসন্ত তড়িঘড়ি স্টেডিয়াম থেকে বেরিয়ে যান বলে একটা কানাঘুষো উঠেছিল। সাক্ষীর বাবা অতুল ঝালার বিবৃতির পর সে দিনের ঘটনাক্রম মিলিয়ে দুয়ে দুয়ে চার করছে সংবাদমাধ্যম। বিলাসবহুল ট্রেন প্যালেস অন হুইলসের ট্যুরিস্ট এসকর্ট অতুল দিল্লি পুলিশকে জানিয়েছেন, ওই রাতেই তাঁর বাড়িতে নৈশভোজে এসেছিলেন শ্রীসন্ত। ব্ল্যাকবেরি উপহার দেন সে দিনই। সাক্ষী তাঁকে দেন বাঘের পোস্টার। পুলিশ অবশ্য এখনও স্পট ফিক্সিংয়ের সঙ্গে ঝালা পরিবারের কোনও যোগ দেখছে না। তবে সাক্ষীর মায়ের পেয়িং গেস্ট রাখার ব্যবসার দিকে নজর রয়েছে পুলিশের। স্বভাবতই যথেষ্ট বিব্রত ঝালা পরিবার।
তবে তাঁদের চেয়েও কয়েক গুণ বেশি অস্বস্তিতে শ্রীনিবাসনের পরিবার। দিল্লির পুলিশ কমিশনার নীরজ কুমার আজ জানিয়েছেন, আরও একটি আইপিএল টিম এবং তিন জন ক্রিকেটার তাঁদের সন্দেহ তালিকায় রয়েছেন। তদন্তের স্বার্থে নাম বলা যাবে না। সানরাইজার্স ও কেকেআরের দু’টি ম্যাচ নিয়েও সন্দিহান পুলিশ। ইতিমধ্যে ছোটা শাকিল একটি চ্যানেলে ফোন করে বলেছে, “আইপিএলের ফিক্সিংয়ে দাউদ কোনও ভাবেই জড়িত নয়। এতে জড়িত রাজন গ্রুপ।” আজই আবার আইপিএল সিইও সুন্দর রমন এবং বোর্ডের মুখ্য প্রশাসনিক অফিসার রত্নাকর শেট্টি মুম্বই ক্রাইম ব্রাঞ্চে গিয়ে একটি চিঠি জমা দিয়ে আসেন। কিন্তু সে ব্যাপারে সব প্রশ্নই এড়িয়ে যান তাঁরা।
বোর্ডের অস্বস্তি আরও বাড়িয়েছে দিল্লির নেতাদের সমালোচনা। কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী জিতিন প্রসাদ বলেছেন, “এই সব ঘটনা দেখে আমার মাথা নিচু হয়ে যাচ্ছে। একটা আইন আমাদের করতেই হবে। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কপিল সিব্বলের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করছি কিছু একটা হবে।” এক ধাপ এগিয়ে বিজেপি নেতা যশবন্ত সিন্হা আইপিএলকে ‘ইন্ডিয়ান পাপী লিগ’ বলে কটাক্ষ করেছেন। অর্থ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান যশবন্ত বলেন, “বিসিসিআইয়ের বিরুদ্ধে ফেমা লঙ্ঘন, কোটি কোটি টাকার আয়কর ও সার্ভিস ট্যাক্স ফাঁকির মতো অভিযোগ উঠেছে। তবু অর্থ মন্ত্রক তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয় না। তার মানে কি বিসিসিআই আইনের ঊর্দ্ধে?” প্রাক্তন ক্রিকেটার ও সাংসদ কীর্তি আজাদ আবার তোপ দেগেছেন নিজের দলেরই সাংসদ (যিনি ক্রিকেট প্রশাসকও) অরুণ জেটলির দিকে। তাঁর নাম না করে বলেছেন, “ওই ব্যাক্তিও কি নিজের দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতে পারেন? তিনিই তো বোর্ডের ডিসিপ্লিনারি কমিটির চেয়ারম্যান। এই সব দুর্নীতি দেখা কি তাঁর কাজের মধ্যে পড়ে না?”




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.