প্রযোজক অজিতের গ্রেফতারে অস্বস্তিতে স্টুডিওপাড়া
কা সারদায় রক্ষা নেই, সঙ্গে দোসর ক্রিকেট জুয়া। বলিউডের পরে এ বার টলিউডের নামও জুড়ে গেল ক্রিকেট বেটিং চক্রের সঙ্গে।
সারদা-কেলেঙ্কারির ধাক্কাই এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি টলিউড। কারণ, টলিউডের বেশ কিছু সিনেমার প্রযোজনা করেছেন বিভিন্ন অর্থ লগ্নি সংস্থার মালিকেরা। এ বার দেখা গেল ক্রিকেট বেটিং চক্রের অভিযুক্তদের টাকাও খাটছে টলিউডে। ক্রিকেট-জুয়ায় জড়িত থাকার অভিযোগে বুধবার রাতে মানিকতলার গৌরীবাড়ি এলাকার একটি বাড়ি থেকে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, এঁদের মধ্যে অজিত সুরেখা নামে এক ব্যক্তি ছিলেন চক্রের পাণ্ডা। তিনি টলিউডের এক উঠতি প্রযোজক।
টলিউড সূত্রের খবর, ধৃত অজিত সুরেখা একেবারেই উঠতি প্রযোজক। এ যাবৎ দু’টি ছবি প্রযোজনা করেছেন। প্রথম ছবির নাম ‘ফিরে এসো তুমি।’ কলকাতার বার ডান্সারদের জীবনের উপর তৈরি এই ছবি মুক্তি পায় গত বছর জুন মাসে। এতে অভিনয় করেছিলেন মেঘনা হালদার আর বিবেক ত্রিবেদী। ছবিটি বাজারই পায়নি। তাঁর প্রযোজিত দ্বিতীয় ছবির শ্যুটিং এখন চলছে। ছবির নাম ‘সাড়ে চুয়াত্তর ঘোষপাড়া।’ তাতে বাদশা মৈত্র, বিবেক ত্রিবেদী, পামেলা মণ্ডল, অর্ণব বন্দ্যোপাধ্যায়রা রয়েছেন।
অজিত সুরেখা। —নিজস্ব চিত্র
পরিচালক, অভিনেতা, প্রযোজকদের অনেকেই মনে করছেন, সারদার ঘটনায় টলিউডের ছবিতে অর্থলগ্নির উপর বড় ধাক্কা এসেছিল। এ বার বেটিংয়ের ঘটনা সামনে আসায় সেই সমস্যা আরও জটিল হবে। পাশাপাশি কোনও ছবিতে হাত দেওয়ার আগেই তার পিছনে লগ্নি করা টাকা সম্পর্কে সব সময় উদ্বেগে থাকতে হবে কলাকুশলীদের। এর নেতিবাচক প্রভাব ইন্ডাস্ট্রির উপর পড়তে বাধ্য।
তবে প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের দাবি, ছবি প্রযোজনার থেকেও কলকাতায় অজিত সুরেখার বেশি পরিচিতি রয়েল ক্যালকাটা টার্ফ ক্লাবের রেজিস্টার্ড বুকি হিসেবে। রেসকোর্সে তাঁর আলাদা কাউন্টার ছিল। ট্র্যাভেল এজেন্সি এবং হোটেলের ব্যবসাও রয়েছে অজিতের। ‘ইস্টার্ন ইন্ডিয়া মোশন পিকচার্স অ্যাসোসিয়েশন’ বা ইম্পা-তেও তাঁর নাম প্রযোজক হিসাবে নথিভুক্ত ছিল। বুধবার রাতে অজিতের সঙ্গে ধরা পড়া বাকি ৯ জনকে জেরার ভিত্তিতে তদন্তকারীদের দাবি, নিষিদ্ধ ছবি তৈরির ব্যবসাতেও টাকা খাটিয়েছিলেন অজিত। লেকটাউন এলাকায় তাঁর আস্তানার উপরে নজর রাখছে পুলিশ। সেখান থেকেই বেটিং চক্র নিয়ন্ত্রিত হত বলে মনে করা হচ্ছে। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, অজিতের ব্যক্তিগত জীবনও ছিল যথেষ্ট রঙিন। নানা কায়দায় জামাকাপড় ও সোনার গয়না পরে ফেসবুকে নিজের ছবি আপলোড করা ছিল তাঁর অন্যতম শখ।
বুধবার রাতে অজিত সুরেখার বাড়ি থেকে এই সব জিনিসপত্রই পেয়েছে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র
বেটিং চক্রের সঙ্গে অজিত সুরেখার নাম জড়িয়ে যাওয়ায় টলিউড যে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন, তা স্বীকার করেছেন হিমাংশু ধানুকার মতো নামী প্রযোজকেরাও। হিমাংশুর কথায়, “আমাদের ব্যবসায় এখন এমন অনেক প্রযোজক এসে গিয়েছেন যাঁদের একটা ছবির পর আর খুঁজে পাওয়া যায় না। ইন্ডাস্ট্রির ৬০ শতাংশ প্রযোজকই এখন নতুন। তাঁরা মূলত লগ্নিকারী। অর্থাৎ অন্য কোনও ব্যবসা রয়েছে তাঁদের, শুধুমাত্র গ্ল্যামারের টানে চলে আসেন এই পেশায়। নিজেদের কালো টাকা সাদা করেন। এটা আমাদের ব্যবসার পক্ষে মোটেই ভালো লক্ষণ নয়।”
ইম্পা অবশ্য অজিত সুরেখার গ্রেফতারের প্রসঙ্গটিকে একেবারেই গুরুত্ব দিতে রাজি নয়। ইম্পা-র ভাইস প্রেসিডেন্ট কৃষ্ণা দাগা বলেছেন, “যাঁদের আমরা রেজিস্ট্রেশন দিই তাঁদের টাকা কোথা থেকে আসছে, সেটা খতিয়ে দেখার কাজ আমাদের নয়। সেটা পুলিশ করবে। আর ইম্পা এটাও মনে করে না যে, এক জন অজিত সুরেখার জন্য গোটা ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতি হতে পারে।” ইম্পা যতই বিষয়টিকে হালকা করে দেখানোর চেষ্টা করুক না কেন, টলিউডের কলাকুশলীদের অনেকেই এই ঘটনায় স্তম্ভিত। অজিতের একটি ছবিতে অভিনয় করছিলেন বাদশা মৈত্র। তিনি বলছেন, “অনেক প্রযোজকের সঙ্গেই আমাদের তৃতীয় কোনও ব্যক্তি মারফৎ আলাপ হয়। যেমন এক পরিচালকের মাধ্যমে অজিতের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়েছিল। আমি সত্যিই বিভ্রান্ত। বুঝতে পারছি না, ভবিষ্যতে কী ভাবে প্রযোজক বাছব।”
অজিতের সঙ্গে পরিচিত টলিউডের কলাকুশলীরা প্রায় প্রত্যেকেই বলেছেন, কখনও ক্রিকেট সম্পর্কে তাঁকে বেশি উৎসাহ দেখাতে বা কারও সঙ্গে বেশি আলোচনা করতে দেখা যায়নি। বরং তাঁর বেশি উৎসাহ ছিল অভিনয়ে।
তাঁর প্রথম ছবির পরিচালক আশিস মিত্র জানাচ্ছেন, অজিত প্রথম ছবির গল্প নিজেই লিখেছিলেন। পরিচালনার কাজে ভয়ঙ্কর নাক গলাতেন। দুর্ব্যবহার করতেন। ইউনিটের সদস্যদের সঙ্গে বারে-বারে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছেন, আবার নিজেই নিজের জন্য ছোট একটা চরিত্র চেয়ে অভিনয় করেছেন। টাকাপয়সা কাউকে দিয়েছেন চেকে আবার কাউকে নগদে। একাধিক চেক বাউন্স করেছিল। তাঁদের আবার সঙ্গে-সঙ্গেই টাকা দিয়ে দিয়েছিলেন।
বুধবার সন্ধ্যায় এসটিএফ এবং কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা মানিকতলা থানা এলাকার ৩/৫ নম্বর গৌরীবাড়ি লেনের একটি বাড়িতে হানা দেয়। সেখানে ৪০ বছরের অজিত ছাড়াও গ্রেফতার করা হয় মহম্মদ তসলিম (৩৯), মহম্মদ ইমরান (৩৫), সুধীর সিংহ (৩২), তারক সোনকার (৩৮), রাজু ওরফে রাসবিহারী পাল (৪৩), বাবর আলি (৫২), মহম্মদ ফাকরুদ্দীন (৫৭), অশোক রায়চৌধুরী (৪৮) এবং বাড়িওয়ালা দেবাশিস রায় (৪৯)।-কে। তাঁদের কাছ থেকে ৩ লক্ষ ১০ হাজার টাকা, ২০টি মোবাইল ফোন, ২টি ল্যাপটপ, ১টা ভিসিডি প্লেয়ার, ১টি হ্যান্ডিক্যাম ও ১টি ডেটা কার্ড মিলেছে বলে পুলিশের দাবি। ধৃতদের ২৭ মে পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয় কোর্ট।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, ল্যাপটপে ভি-বেট নামে একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছে যা প্রধানত বেটিং-এর কাজেই লাগে। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ বলেছেন, “মনে হচ্ছে এঁরা দল বেধে স্থানীয় ভাবে বেটিং চক্র চালাতেন। কিন্তু এঁদের মধ্যে কেউ সে ভাবে পরিচিত বুকি নন।” তবে অজিত সুরেখাকে নিয়ে তদন্ত এগোলে আরও অনেকের যোগাযোগ পরিষ্কার হবে বলে তদন্তকারীদের দাবি।
একনজরে অজিত
• রেসকোর্সে নথিভুক্ত বুকি
• পর্যটন ও হোটেল ব্যবসা
• ইম্পা-র নথিভুক্ত প্রযোজক
দু’টি ছবি
ফিরে এসো তুমি
সাড়ে চুয়াত্তর ঘোষপাড়া (শ্যুটিং চলছে)
(সহ প্রতিবেদন: চিরন্তন রায়চৌধুরী ও সায়নী ভট্টাচার্য)

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.