কুমারজীবের প্রাচীন বৌদ্ধ সূত্র বাংলায়
প্রাচীন চিনা ভাষায় লিখিত বৌদ্ধ ধর্মের অন্যতম আদি গ্রন্থ এ বার বাংলায় পড়ার সুযোগ পাবেন উৎসাহীরা।
প্রাচীন কালে বৌদ্ধ ভিক্ষু কুমারজীব সংস্কৃত ভাষায় রচনা করেছিলেন ‘সদ্ধর্ম পুণ্ডরীক সূত্র’। সেই গ্রন্থ আর পাওয়া যায় না। কিন্তু সেই সময়েই চিনা-সহ মোট ছ’টি ভাষায় অনুবাদ হয়েছিল বইটি। তার মধ্যে তিনটি এখন লুপ্ত। তিনটি অনুবাদ রয়ে গিয়েছে ২৮৮ খ্রিস্টাব্দের ধর্মরক্ষার অনুবাদ, ৬০১ খ্রিস্টাব্দের জ্ঞানগুপ্ত ধর্মগুপ্তের অনুবাদ এবং ৪০৬ খ্রিস্টাব্দে কুমারজীবের নিজের অনুবাদ। কুমারজীব-কৃত ‘সদ্ধর্ম পুণ্ডরীক সূত্রে’র সেই চিনা অনুবাদ
সরোজকুমার চৌধুরী
‘মিয়াও-ফা-লিয়েন-হুয়া-চিং’-ই এ বার বাংলায় অনুবাদ করা হল।
জাপানের প্রধান বৌদ্ধ ধর্মসংস্থা ‘রিস্যো কোসেই কাই’-এর উদ্যোগে অনুবাদের কাজটি করেছেন জাপানি ভাষা বিশেষজ্ঞ সরোজকুমার চৌধুরী। জাপানের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় দু’দশক জাপানি ভাষা পড়ানোর পরে দেশে ফিরে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে জাপানি ভাষার শিক্ষকতা করছেন সরোজবাবু। তা হলে চিনা ভাষার বই অনুবাদ করলেন কী করে? সরোজবাবু বলছেন, “প্রাচীন চিনা ভাষা এবং জাপানির মধ্যে অনেকটাই মিল রয়েছে। তাই এটি বাংলায় অনুবাদ করার প্রস্তাব যখন পেলাম, তখন সেটা চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছি। ২০১১ সালে টোকিওতে বসে প্রায় এক বছর ধরে কাজটা করেছি।”
বাংলাদেশের চট্টগ্রামে একটা বড় সংখ্যক বাঙালি বৌদ্ধ রয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা উপজাতির মানুষেরাও বেশির ভাগই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। তাঁদের ভাষা চাকমা হলেও বাংলা পড়তে পারেন। তাঁদের কথা ভেবেই বাংলায় অনুবাদের কাজটি হয়। পাশাপাশি সরোজবাবুর মতে, চিনা বইটির অধ্যয়ন এবং অনুবাদ করতে গিয়ে এমন কিছু তথ্য উঠে এসেছে, যার যথেষ্ট গবেষণা মূল্য রয়েছে।
কী রকম? বুদ্ধের আবির্ভাব হয়েছিল খ্রিস্টের ছ’শো বছর আগে। সরোজবাবুর কথায়, “তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বাইবেলের কিছু গল্পের সঙ্গে সদ্ধর্ম পুণ্ডরীক সূত্রের মিল পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে ‘রিটার্ন অফ দ্য প্রডিগ্রাল সান’-এর অংশটির সঙ্গে তো হুবহু মিল রয়েছে!” বহু হিন্দু দেবদেবীর (ইন্দ্র, ব্রহ্মা, ধৃতরাষ্ট্র, বৈশ্বানর, অগ্নি) নামও পাওয়া যাচ্ছে এই সদ্ধর্ম পুণ্ডরীক সূত্রে। উল্লেখ রয়েছে স্বর্গ এবং নরকেরও। সরোজবাবু বলছেন, “তবে হিন্দু ধর্মের সঙ্গে এর প্রধান তফাৎ হল, এখানে বলা হচ্ছে, তপস্যার বলে একই সময়ে একাধিক ব্যক্তি বুদ্ধত্ব অর্জন করতে পারেন। অর্থাৎ বুদ্ধ এক নন, অনেক।”
জানা গিয়েছে, পাঁচশো চিনা ভিক্ষু মূল সংস্কৃত থেকে এই সূত্র অনুবাদ করার সময় সাহায্য করেছিলেন কুমারজীবকে। ড্রাগন চিনের সভ্যতার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। চিনের প্রচলিত বিশ্বাস, বৃষ্টি ড্রাগনের দান। এই বিশ্বাসের উৎস লুকিয়ে রয়েছে এই বইটিতে। অনুমান করা হচ্ছে, মূল সংস্কৃতে স্বাভাবিক ভাবেই ড্রাগনের কোনও উল্লেখ ছিল না। যেটা ছিল, তা হল নাগের কথা। চিনা ভাষান্তরে সেটাই হয়েছে ড্রাগন। বলা হয়েছে, ড্রাগন শিশু জন্মের এক সপ্তাহ পরেই বৃষ্টি হয়। সাধারণ ভাবে ভিক্ষু জীবনের বিধান হল, নারীরা কখনও বুদ্ধ হতে পারবেন না। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই সূত্রে এক নারীর বুদ্ধত্ব প্রাপ্তির ঘটনা বর্ণিত রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে যে, সূত্রটি কি স্বয়ং বুদ্ধদেব প্রকাশ করেছিলেন? কেউ বলছেন, বুদ্ধ নিজে সূত্রটি এবং বাণীগুলি প্রকাশ করে সমাধিস্থ হন। আবার কোথাও দেখা যাচ্ছে, বুদ্ধ নিজে নন, তাঁর শিষ্যরাই এর ব্যাখ্যা করছেন। সরোজবাবু সব রকম মত ও ব্যাখ্যাই তাঁর অনুবাদে সামিল করেছেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.